স্টাফ রিপোর্টার
নগরীর মেজরটিলার চামেলীবাগ আবাসিক এলাকায় টিলা ধসে ঘুমন্ত অবস্থায় একই পরিবারের তিন জন নিহত হয়েছেন। সোমবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে বৃষ্টিতে মাটি গলে মর্মান্তিকভাবে এ টিলা ধসের ঘটনাটি ঘটে। দুপুর ১টার দিকে যৌথভাবে তৎপরতা চালিয়ে ৩ জনকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ। উদ্ধারকাজে স্থানীয় লোকজন ও সিটি করপোরেশনের কর্মীরা সহযোগিতা করেন। এর মধ্যে ৮ জনকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয় এবং মাটি চাপায় ৪টি পরিবারের ঘরগুলো সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে গেছে।
নিহতরা হলেন- সিসিকের ৩৫নং ওয়ার্ডের চামেলীবাগ আবাসিক এলাকার ২নং রোডের ৮৯নং বাসার মৃত রফিক উদ্দিনের ছেলে আগা করিম উদ্দিন (৩১), করিমের স্ত্রী শাম্মী আক্তার রুজি (২৫) ও তাদের ছেলে নাফিজ তানিম (২)। করিম একটি ইন্টারনেট কোম্পানির ক্যাবল অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন।
ঘটনার পর সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, বিভাগীয় কমিশনার আবু আহমদ সিদ্দিকী (এনডিসি) ও জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান স্থানটি পরিদর্শন করেন। এসময় সিটি করপোরেশন থেকে হতাহতদের পরিবারকে সহায়তা প্রদান করা হবে বলে জানান মেয়র আনোয়ারুজ্জামান।
স্থানীয় ও সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, চামেলীবাগ আবাসিক এলাকার ৮৯ নং বাড়িটি করিম উদ্দিনদের পৈত্রিক। তারা ২ ভাই ও ৪ চাচা একই বাড়িতে থাকেন। তাদের ঘরটি টিনের চালার আধাপাকা। ঘরের প্রায় ৫শ ফুট পেছনে একটি বড় টিলা। টিলা ও ঘরের মাঝখানে কয়েক শতক খালি জায়গাও রয়েছে। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ- খালি জায়গায়ও টিলা ছিলো। কাটা হয়েছে সে টিলার মাটি। রবিবার দিবাগত রাতে ভারী বৃষ্টির কারণে মাটি গলে সোমবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে বিকট শব্দে টিলাটি ধসে সবাই ঘুমন্ত থাকা অবস্থায় করিম উদ্দিনদের ঘরের উপর এসে পড়লে ঘরসহ মাটির নিচে চাপা পড়েন মোট ১১ জন। এর মধ্যে করিম ও তার বড় ভাই আগা রহিম উদ্দিন, তাদের মা, রহিমের স্ত্রী ও সন্তান, করিমের স্ত্রী-সন্তান এবং তার ৪ চাচা মৃত আলাউদ্দিনের ছেলে আগা মাহমুদ উদ্দিন, আগা বাবুল উদ্দিন, আগা বাচ্চু উদ্দিন ও আগা শফিক উদ্দিন। এদের মধ্যে করিম ও তার স্ত্রী-সন্তান ছাড়া বাকি ৬ জনকে ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও স্থানীয় জনতা ঘটনার দুই ঘণ্টার মধ্যে উদ্ধার করেন। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে এসে শাহপরাণ থানা পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সিলেটের দুটি স্টেশনের ৩টি টিম, সিটি করপোরেশনের কয়েকজন কর্মী ও স্থানীয় জনতা উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেন। ঘণ্টাখানেকের প্রচেষ্টায় করিম ও তার স্ত্রী-সন্তান ছাড়া ৮ জনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে কয়েকজন আহত ছিলেন। তাদের পরে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে, সরু গলির কারনে দুর্ঘটনা কবলিত ঘরের কাছে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ও সিসিকের মাটি কাটার যন্ত্র (এক্সভেটর) যেতে না পারায় এবং বৃষ্টির কারণে উদ্ধারকাজে দেরি হতে থাকে। একপর্যায়ে বেলা পৌনে ১২টার দিকে সেনাবাহিনীর ৩টি টিম উদ্ধারকাজে অংশগ্রহণ করে এবং ঘরের পেছন দিকের একটি দেওয়াল ভেঙে একটি এক্সভেটর চাপা পড়া ঘরের কাছাকাছি নিয়ে মাটি সরানো হয়। দুপুর ১টার দিকে উদ্ধার করা হয় করিম, শাম্মী ও তানিমের নিথর দেহ। এসময় সেনাবাহিনীর টিমের চিকিৎসক প্রাথমিক পরীক্ষা শেষে তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
লাশ উদ্ধারে পর বেলা আড়াইটার দিকে প্রেস ব্রিফিং করেন সেনাবাহিনীর সিলেট ক্যান্টনমেন্টের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফারুক আহমেদ। তিনি সাংবাদিকদের বলেন- মাননীয় সেনাপ্রধানের নির্দেশে সাড়ে ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে আমাদের ৩টি টিম উদ্ধার কাজ শুরু করে এবং একপর্যায়ে ৩ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে আমাদের মেডিকেল টিমের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পরীক্ষা করে তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন। এর আগে বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা ও স্থানীয় জনতা ৮ জনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করেন। এ দুর্ঘটনায় ৪টি পরিবারের ঘরগুলো সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে।
শাহপরাণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হারুনূর রশীদ চৌধুরী বলেন, লাশগুলো ময়না তদন্ত ছাড়া দাফনের আবেদন করেছেন স্বজনরা। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
সিলেট সিটি করপোরেশনের ৩৫ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, এই বাসায় দুই ভাই তাদের স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে থাকতেন। ভ‚মি ধসে ঘরের নিচে ১১ জন আটকা পড়েছিলেন। পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও আমরা এসে এক ভাই, তার স্ত্রী ও তাদের সন্তানকে সুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করতে পেরেছি। তবে আরেক ভাই, তার স্ত্রী ও ২ বছরের সন্তান এর লাশ উদ্ধার করা হয়। কাউন্সিলর জানান, বৃষ্টির কারণে উদ্ধার আভিযান কিছুটা ব্যাহত হয়। এছাড়া রাস্তা ছোট হওয়ার কারণে ফায়ার সার্ভিস ও সিটি করপোরেশনের গাড়ি ঢুকতে পারেনি। তাই হাত দিয়েই উদ্ধার কার্যক্রম চালানো হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট কাজ করছে। সঙ্গে সেনাবাহিনী, পুলিশ, সিসিক কর্মী ও স্থানীয়রা সহযোগিতা করছেন।
সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, অপরিকল্পিত টিলাকাটার কারনে ধসের ঘটনা ঘটছে। তাই টিলা কাটা এবং টিলার আশেপাশে থাকা থেকে সবাইকে বিরত থাকার অনুরোধ জানাচ্ছি। আমি জেলা প্রশাসনের সাথে আলাপ করবো। বিষয়টি নিয়ে নগর ভবনে জরুরি একটি সভার আহŸান করেছি এবং জনসচেনতা বৃদ্ধি করতে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে মাইকিং করবে সিলেট সিটি কর্পোরেশন।