স্টাফ রিপোর্টার
সিলেটে বন্যাকবলিত উপজেলাগুলোর পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হলেও সুরমার পানি না কমায় নগরীর বেশ কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। শনিবার বেলা ৩টা পর্যন্ত জেলার সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর চারটি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ভারতে বৃষ্টিপাত কমে গেলে এবং নতুন করে বৃষ্টি না হলে বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।
শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় সিলেট জেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে, সিলেট সিটি করপোরেশনের ৯টি ওয়ার্ডসহ সদর, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ উপজেলার ৫৯টি ইউনিয়নের ছয় লাখ ৯ হাজার ৭৩৩ জন মানুষ বন্যাকবলিত হয়েছেন। জেলায় ৫৫০টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। বর্তমানে আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন ৩ হাজার ৩৪২ জন। জেলার ৮টি উপজেলার মোট ৭৮১টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
সুরমার পানি সিলেট সিটি করপোরেশনের নিচু এলাকায় ঢুকে পড়ায় মহানগরীর বেশ কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। পানি বাসা ও রাস্তায় চলে আসায় মহানগরীর উপশহর, সোবহানীঘাট, যতরপুর, মেন্দিবাগ, কাজিরবাজার, মাছিমপুর, তালতলাসহ বেশ কিছু এলাকার মানুষ চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন।
অপরদিকে ভারত থেকে আসা পানির ঢল কমায় সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলোতে গত ২৪ ঘন্টায় পানি কমতে শুরু করেছে। ফলে ভেসে উঠছে বন্যার ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন। বিশেষ করে বন্যার পানিতে উপজেলাগুলোর বেশিরভাগ সড়ক ক্ষতি হয়েছে। বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলাগুলোর একটি গোয়াইনঘাট। ভারতের মেঘালয় রাজ্য লাগোয় এ উপজেলার প্রায় ৭০ শতাংশ তলিয়ে গেছে। তবে গোয়াইনঘাটে তিনটি নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে নেমে এসেছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়া গোয়াইনঘাট-জাফলং ও সারি-গোয়াইনঘাট সড়ক ভয়াবহ ভাবে ভেঙে গেছে। অনেক সড়কে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। বন্যাকবলিত উপজেলাগুলোর গ্রামীণ সব সড়কই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।
গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। পানি পুরো নামলে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে ধারণা পাওয়া যাবে। তবে যেসব সড়ক ও সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা দ্রæত সংস্কারের ব্যবস্থা নিতে এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, ভারতের চেরাপুঞ্জিতে গত ২৪ ঘণ্টায় মাত্র ৫৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। ফলে সিলেটে বন্যা কমতে শুরু করেছে। সিলেটের গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর উপজেলায় পানি অনেকটা কমেছে। অন্য উপজেলার পানিও কমছে ধীরে ধীরে। যেহেতু ভারতে বৃষ্টি ও ঢলের পানির উপরই আমাদের এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি ও উন্নতি-অবনতি হয় তাই এই প্রাক-বর্ষা ও বর্ষাকালে আমাদের সচেতন থাকতে হবে এবং পূর্বপ্রস্তুতি নিতে হবে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, উজান থেকে ভাটির দিকে পানি নামতে শুরু করায় সিলেট নগরী, বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ উপজেলার নিম্নাঞ্চল নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। তবে বৃষ্টি না হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। পাশাপাশি সরকারি ও বেসরকারিভাবে শুকনো খাবার, রান্না করা খাবার ও বিশুদ্ধ পানি বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত আছে।
ভারতের উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিতে সিলেটের ৮টি উপজেলায় আকস্মিক বন্যা দেখা দেয়। বুধবার ২৯ মে বিকেল থেকে উপজেলাগুলোতে বন্যার পানি প্রবেশ করতে শুরু করে। বৃহস্পতিবার ৩০ মে সকালে পাঁচটি উপজেলা ঢলের পানিতে প্লাবিত হয়। বৃহস্পতিবার রাতে নতুন করে প্লাবিত হয়েছে আরও দুটি উপজেলা।
বৃহস্পতিবার রাত ১০টার পর থেকে সিলেট নগরীর ভেতরেও পানি ঢুকতে শুরু করে। শুক্রবার সিলেট সদর উপজেলা ও নগরীর ভেতরের বেশ কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়। বন্যাকবলিত এলাকাগুলো হলো- সিলেট সদর ও নগরী, জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, জকিগঞ্জ ও গোলাপগঞ্জ।