সিলেট বোর্ডে পাসের হার সর্বনিম্ন

23

বেড়েছে জিপিএ-৫ : মেয়েরা এগিয়ে : ৩১টি প্রতিষ্ঠানে শতভাগ পাস

স্টাফ রিপোর্টার

এবার মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষায় সিলেট শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৭৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ। যা সারা দেশ থেকে সর্বনিম্ন। তবে জিপিএ-৫ বেড়েছে। গত বছর সিলেটে পাসের হার ছিল ৭৬ দশমিক ০৬ শতাংশ। গত বছর ২৩টি প্রতিষ্ঠানে শতভাগ পাস করলেও এবার ৩১টি প্রতিষ্ঠান শতভাগ পাসের তালিকায় রয়েছে।
গত বছরের তুলনায় এবার সিলেটে পাসের হার কমেছে। তবে ফল ভালো করেছে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা। বিজ্ঞান বিভাগে পাসের হার ৮৮ দশমিক ১৪ শতাংশ। অন্যদিকে ফলে পিছিয়ে আছে মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীরা। মানবিকে পাসের হার ৬৮ দশমিক ৫০ শতাংশ।
রবিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় সংবাদ সম্মেলন করে এ ফলাফল ঘোষণা করেন সিলেট শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর অরুণ চন্দ্র পাল। তিনি বলেন, এ বছর ১ লাখ ৯ হাজার ৭৩ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে ৮০ হাজার ৬ জন পরীক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে। পরীক্ষার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো করেছে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা। গেল বছরের তুলনায় এবার পাসের হার কমেছে ২ দশমিক ৭১ শতাংশ। সিলেটে এবার পাসের হারে মেয়েরা এগিয়ে আছে।
সিলেট শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অরুণ চন্দ্র পাল আরো বলেন, এ বছর জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫ হাজার ৪৭১ জন। গত বছর জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৫ হাজার ৪৫২ জন। সে হিসেবে এবার জিপিএ-৫ বেড়েছে মাত্র ১৯টি। এ বছর বিজ্ঞানে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫ হাজার ১৩৫ জন। এরমধ্যে ছাত্র ২ হাজার ৫২৮ জন এবং ছাত্রী ২ হাজার ৬০৬ জন। মানবিকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৪৪ জন। এ মধ্যে ছাত্র ৫৪ ও ছাত্রী ১৯০ জন। ব্যবসা শিক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯৩ জন। এর মধ্যে ৩৪ জন ছাত্র ও ৫৯ ছাত্রী রয়েছে।
বিজ্ঞান বিভাগে ২৪ হাজার ২২৬ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ২৪ হাজার ১৫৩ জন অংশ নিয়ে পাস করেছে ২১ হাজার ২৮৯ জন। এর মধ্যে ১০ হাজার ৫১০ জন ছাত্রের মধ্যে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ১০ হাজার ৪৭৯ জন। এর মধ্যে পাস করে ৯ হাজার ৫৬৬ জন। আর ১৩ হাজার ৭১৬ জন ছাত্রীর মধ্যে পরীক্ষায় ১৩ হাজার ৬৭৪ জন অংশ নিয়ে পাস করেছেন ১১ হাজার ৭২৩ জন। বিজ্ঞান বিভাগে মোট পাসের হার ৮৮ দশমিক ১৪ শতাংশ। আর মানবিকে পাসের হার ৬৮ দশমিক ৫০ শতাংশ। সিলেট বোর্ডের অধীন ৭৭ হাজার ৯৫৪ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৭৭ হাজার ৫৪৭ জন অংশ নিয়ে পাস করে ৫৩ হাজার ১১৬ জন। এদের মধ্যে ছাত্র ৩০ হাজার ৮৭২ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৩০ হাজার ৭৩৪ জন অংশ নিয়ে পাস করে ২০ হাজার ৯৭৯ জন। আর ছাত্রী ৪৭ হাজার ৮২ জন পরীক্ষার্থী থাকলেও অংশ নিয়েছে ৪৬ হাজার ৮১৩ জন। এর মধ্যে পাস করেছে ৩২ হাজার ১৩৭ জন।
ব্যবসা শিক্ষায় মোট ৭ হাজার ৪০০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৭ হাজার ৩৭৩ জন অংশ নিয়ে পাস করেছে ৫ হাজার ৬০১ জন। পাসের হার ৭৫ দশমিক ৯৭ শতাংশ। এর মধ্যে ছাত্র ৩ হাজার ৭২২ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৩ হাজার ৭১৩ জন পরীক্ষা দিয়ে পাস করে ২ হাজার ৮৬১ জন। ছাত্রীদের মধ্যে ৩ হাজার ৬৭৮ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৩ হাজার ৬৬০ জন অংশ নিয়ে পাস করে ২ হাজার ৭৪০ জন।
সিলেট বোর্ডে মোট ফেল করেছে ২৯ হাজার ৬৭ জন শিক্ষার্থী। বিজ্ঞান বিভাগে পরীক্ষায় অংশ নেননি ৭৩ জন এবং ফেল করেছে ২ হাজার ৮৬৪ জন শিক্ষার্থী। মানবিকে বিভাগে পরীক্ষায় অংশ নেয়নি ৪০৭ জন। আর ফেল করেছে ২৪ হাজার ৪৩১ জন। ব্যবসা শিক্ষায় পরীক্ষায় অংশ নেয়নি ২৭ জন এবং ফেল করেছে ১ হাজার ৭৭২ জন।
প্রতি বছরের ন্যায় এবারো ফলাফল বিপর্যয়ের পেছনে বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক অরুণ চন্দ্র পাল হাওরাঞ্চল সুনামগঞ্জকে দায়ী করলেও পাসের হারের দিকে সুনামগঞ্জ জেলা বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে। ফলাফলে পাসের হারে সিলেট ৭২ দশমিক ৫৬ শতাংশ। সেখানে সুনামগঞ্জ ৭৪ দশমিক ৭২ শতাংশ। এছাড়া পাসের হারে মৌলভীবাজার ৭১ দশমিক ৭৭ শতাংশ এবং সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা হবিগঞ্জের পাসের হার ৭১ দশমিক ৫৪ শতাংশ। এ বছর শতভাগ পাসের হারের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেড়েছে। গত বছর ২৩টি প্রতিষ্ঠানে শতভাগ পাস করলেও এবার ৩১টি প্রতিষ্ঠান শতভাগ পাসের তালিকায় রয়েছে। এছাড়া ফলাফল বিপর্যয়ে করোনা পরিস্থিতিকে এখনো দায়ী করছেন বোর্ডের এ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, করোনাকালের ধাক্কা আমরা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারিনি। গত দুই বছর ধরে ফলাফল বিপর্যয় কাটিয়ে না উঠতে পারা এবং একই যুক্তি বার বার তুলে ধরার বিষয়ে তিনি যুক্তি পাল্টিয়ে দক্ষ শিক্ষকের অভাব ও মানবিকে বেশি শিক্ষার্থী ফেল করার বিষয়টি ফলাফল বিপর্যয়ের কারণ হিসেবে দাবি করেন। তবে তা কাটিয়ে উঠতে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের পরামর্শ দিয়ে আসছেন বলেও জানান তিনি।