কাজিরবাজার ডেস্ক :
আর দুদিন পরই সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপনের অপেক্ষায় পুরো দেশ। আর এই মাহেন্দ্রক্ষণকে অবিস্মরণীয় করে রাখতে সারাদেশের মানুষ একযোগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘সোনার বাংলা’ গড়ার শপথ নেবে পুরো দেশ। ‘মহাবিজয়ের মহানায়ক’ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৬ কোটি বাঙালী একযোগে দেশ গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে এ শপথ পাঠ করবেন। দেশের বিভাগীয় জেলা, জেলা ও উপজেলা স্টেডিয়াম ও বিজয় দিবসের নির্ধারিত ভেন্যু থেকে কোটি কোটি সাধারণ মানুষ জাতীয় পতাকা হাতে শপথ বাক্য পাঠ করবেন।
সোমবার এ সব তথ্য জানিয়েছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আয়োজিত এ সংক্রান্ত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজয়ের ৫০ বছর পূর্তিতে সারাদেশের মানুষকে শপথ পাঠ করাবেন। আগামী ১৬ ডিসেম্বর বিকেলে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজা থেকে প্রধানমন্ত্রী দেশব্যাপী ওই শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করবেন।
ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষ উপলক্ষে শপথ অনুষ্ঠান মহান বিজয় দিবসে বিকেল সাড়ে ৪টায় সারাদেশে একযোগে অনুষ্ঠিত হবে। দেশব্যাপী সব শ্রেণী-পেশার মানুষ এই শপথে অংশ নেবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি সারাদেশের সঙ্গে যুক্ত থেকে শপথ বাক্য পাঠ করাবেন। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ‘মহাবিজয়ের মহানায়ক’ প্রতিপাদ্যে আগামী ১৬-১৭ ডিসেম্বর ২০২১ পর্যন্ত দুদিনব্যাপী বিশেষ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হচ্ছে। মুজিববর্ষ উদ্যাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি এ আয়োজন করছে। বিদ্যমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে আয়োজিত এসব অনুষ্ঠানে ১০টি পয়েন্টে করোনা টেস্ট করে সার্টিফিকেটসহ দেশী-বিদেশী অতিথিরা অনুষ্ঠানে অংশ নেবে।
ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, আগামী ১৬-১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত দুদিনব্যাপী বিশেষ অনুষ্ঠানমালার আয়োজনের সকল প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। দুদিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার ১ম দিন অনুষ্ঠান শুরু হবে বিকেল সাড়ে ৪টায় এবং অনুষ্ঠানের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার পরিচালনায় থাকবে সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষের শপথ। সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে জাতীয় পতাকা হাতে দেশের সর্বস্তরের মানুষ এ শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন। শপথগ্রহণ শেষে আলোচনা পর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। সম্মানীয় অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন ভারতের রাষ্ট্রপতি শ্রী রাম নাথ কোবিন্দ।
এছাড়া অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখবেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং স্বাগত বক্তব্য রাখবেন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। এ অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানা সম্মানীয় অতিথিকে ‘মুজিব চিরন্তন’ শ্রদ্ধাস্মারক প্রদান করবেন তিনি উল্লেখ করেন।
ড. কামাল নাসের চৌধুরী জানান, প্রত্যেক দিনের অনুষ্ঠান বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং বেতারের মাধ্যমে বিভিন্ন বেসরকারী চ্যানেল ও মিডিয়ায় সরাসরি সম্প্রচারের মাধ্যমে দেশে এবং বিদেশে প্রচার করা হবে। এ সময় কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, ১৬ ডিসেম্বরে সব সময় প্যারেড গ্রাউন্ডে কুচকাওয়াজ হয়। এবারের কুচকাওয়াজ অন্যবারের চেয়ে বড় আকারে হবে। সেখানে ৬টি দেশের প্রতিনিধি আসবেন। সেখানে অনেক দেশের অংশগ্রহণ থাকবে। তাই আমাদের অনুষ্ঠান প্যারেড গ্রাউন্ডের পরিবর্তে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
আমন্ত্রিত অতিথিদের ব্যাপারে তিনি বলেন, যাদের আমন্ত্রণ জানানো হবে সময়মতো তাদের অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছানো, সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে যেন অনুষ্ঠানগুলো হয় সেটার নিরাপত্তা, শৃঙ্খলা ও অন্যান্য বিষয়ের ওপর জোর দেয়া হবে। করোনা পরীক্ষা রিপোর্ট ছাড়া কেউ সেখানে যেতে পারবেন না উল্লেখ করে কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী আরও বলেন, আমন্ত্রণপত্রে জানিয়ে দেয়া হবে কোথায় কোথায় করোনা পরীক্ষা করতে হবে। যেহেতু স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন করতে হবে তাই করোনা পরীক্ষাটা বাধ্যতামূলক। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব কিছু আমরা ফলো করব। সব মিলিয়ে প্রতিদিন তিন হাজার মানুষ অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। অনুষ্ঠানটি সারাদেশের পাশাপাশি সারা বিশ্বে সম্প্রচার হবে বলেও জানান তিনি।
অনুষ্ঠানের সময়সূচী সম্পর্কে ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, ১৬ ডিসেম্বরে অনুষ্ঠান বিকেল সাড়ে ৪টায় শুরু হবে এবং রাত ৮টায় শেষ হবে। অনুষ্ঠানে সন্ধ্যা ৫টা থেকে ৫:২৫টা পর্যন্ত ২৫ মিনিটের বিরতি থাকবে। পরদিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটায় শুরু হয়ে চলবে ৭টা পর্যন্ত।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সাংস্কৃতিক উপকমিটির আহ্বায়ক, সাবেক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপপ্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, এডিটরস গিল্ডের সভাপতি মোজাম্মেল হক বাবু, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু, জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির কার্যালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তারা।