কাজির বাজার ডেস্ক
রওশন এরশাদের ডাকা সম্মেলন ঘিরে তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে বিভক্ত হচ্ছে জাতীয় পার্টি। এতদিন জি এম কাদেরের সঙ্গে থাকলেও বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও মহানগরের অনেক নেতাই এখন অন্য অংশের দিকে ঝুঁকছেন। এ অবস্থায় নেতাকর্মীদের নিজ বলয়ে ধরে রাখতে একরকম তড়িঘড়ি করে দলের প্রেসিডিয়াম ও সংসদ সদস্যদের যৌথসভা ডেকেছেন জি এম কাদের।
জাপা সূত্র বলছে, আগামী ৯ মার্চ রওশন এরশাদের সম্মেলনে জাতীয় পার্টির অন্তত ১০ জন প্রেসিডিয়াম সদস্য যোগ দিতে পারেন। জি এম কাদেরের সঙ্গে ছেড়ে আসা এই নেতাদের মধ্যে কয়েকজন সাবেক সংসদ সদস্যও থাকবেন। তাদের অনুসরণ করবেন কেন্দ্রীয় ও মহানগর কমিটির বেশ কয়েকজন নেতা। সম্মেলন কেন্দ্র করে এরই মধ্যে সারা দেশে জেলা, উপজেলা ও মহানগর পর্যায়ে বিভক্তি শুরু হয়েছে।
জানা গেছে, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় ও মাঠ পর্যায়ের নেতারা এরই মধ্যে বিষয়টি জি এম কাদেরের নজরে এনেছেন। জাপায় নতুন করে বড় রকম ভাঙনের আশঙ্কায় শীর্ষ নেতাদের কপালে এখন চিন্তার ভাঁজ। এ অবস্থায় তড়িঘড়ি করে পার্টির সর্বোচ্চ পর্যায়ের বৈঠক ডাকা হয়েছে। আগামী ২ মার্চ বনানীতে জাপা চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় দলের সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান, কো-চেয়ারম্যান, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ সদস্যদের যোগ দিতে বলা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, জি এম কাদেরের ডাকা বৈঠক থেকে দলের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নেতাদের বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হবে। পাশাপাশি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ভাঙন ঠেকাতে নেওয়া হবে বিশেষ উদ্যোগ। বিশেষ করে জাপার ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলের নেতাকর্মীদের ধরে রাখতে কয়েকজনকে দায়িত্ব দেবেন জি এম কাদের। একইভাবে বৃহত্তর ময়মনসিংহের একাধিক প্রেসিডিয়াম ও সংসদ সদস্যকে দায়িত্ব দেওয়া হবে। দল পরিচালনায় সবার মতামতকে গুরুত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রæতি ব্যক্ত করে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহŸান জানাবেন জি এম কাদের।
জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘আগামী ২ মার্চ যৌথ সভায় সাংগঠনিক পরিস্থিতি, জাপার কেন্দ্রীয় সম্মেলনসহ সার্বিক রাজনৈতিক বিষয়ে আলোচনা হবে।’
রওশন এরশাদের ডাকা সম্মেলন নিয়ে তারা চিন্তিত নন জানিয়ে চুন্নু বলেন, ‘যে কারও দল করার স্বাধীনতা আছে। এ নিয়ে আমরা কোনো চাপ অনুভব করছি না। কেউ দল থেকে চলে গেলে পদ শূন্য থাকে না। রাজনীতিও বন্ধ থাকে না। আমাদের বিশ্বাস, পরীক্ষিত কোনো নেতাকর্মী মূল ধারার জাতীয় পার্টি ছেড়ে যাবেন না।’ রওশনপন্থি একাধিক নেতা জানান, কিছুদিনের মধ্যেই জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমাম (ময়মনসিংহ), সাইদুর রহমান টেপা (ঢাকা), সোলায়মান আলম শেঠ ও মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী (চট্টগ্রাম), সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন (পোস্টার মিলন), আবুল কাশেম (টাঙ্গাইল), আব্দুর রশিদ সরকার (গাইবান্ধা), তাজ রহমান (সিলেট), লিয়াকত হোসেন খোকা (নারায়ণগঞ্জ), শামীম হায়দার পাটোয়ারী (গাইবান্ধা), ভাইস চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম ঝন্টু (সিরাজগঞ্জ), নুরুল ইসলাম ওমরসহ (বগুড়া) অনেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে রওশনের সঙ্গে যোগ দেবেন। তারা নিজ নিজ অনুসারীদেরও জি এম কাদেরের বলয় থেকে বের করার চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ কমিটি নিয়ে স্বস্তিতে নেই জি এম কাদের। দলীয় কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের জমায়েতের ক্ষেত্রে কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এবং মহানগর উত্তরের সভাপতি শফিকুল ইসলাম সেন্টু সবচেয়ে বেশি ভ‚মিকা রাখতেন। তারা দুজনেই এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়ে রওশনের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। নগরের আরও কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা তাদের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন বলেও শোনা যাচ্ছে। সব মিলিয়ে রাজধানী ঢাকা সাংগঠনিক পরিস্থিতি নিয়ে কাদেরপন্থিরা অনেকটা বেকায়দায় পড়তে যাচ্ছেন।
রওশন অংশের নেতাদের দাবি, এরই মধ্যে ৬৪ জেলায় গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ হয়েছে। সব জেলা থেকেই প্রতিনিধিরা সম্মেলনে যোগ দেবেন। ঢাকার নেতাকর্মীদের বড় অংশই কাদেরকে ছেড়ে রওশন অংশে যাবেন বলে অনেকটা নিশ্চিত। রওশনপন্থিদের অন্যতম নেতা জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান বলেন, ‘সারা দেশ থেকে নেতাকর্মীরা প্রতিদিনই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। কেন্দ্রীয় নেতারাও জি এম কাদেরের সঙ্গে আর থাকতে চান না। সবাই চলমান স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু করেছেন।’
আগামীতে বড় রকমের চমক আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আটজন সংসদ সদস্য আমাদের পরোক্ষ সমর্থন দিয়েছেন। সময়মতো তারাও দলে আসবেন।
রংপুর, লালমনিহাট, ময়মনসিংহ, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, গাইবান্ধা, বগুড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ ১৫ জেলার জাপা নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের একটি অংশ রওশনের সম্মেলনে যোগদানের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বিশেষ করে গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থীদের অনেকেই জিএম কাদেরকে ছেড়ে যাচ্ছেন। মূলত তারাই বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে সমর্থকদের রওশনের পক্ষে ভেড়াতে মুখ্য ভ‚মিকা পালন করছেন।
সব মিলিয়ে রওশনের সম্মেলন ঘিরে জাপার নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভক্তি স্পষ্ট হয়েছে। দলের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ কাদেরকে ছেড়ে যাচ্ছেন তাও অনেকটা নিশ্চিত। এসব বিবেচনায় জাতীয় পার্টির মূল অংশ আরেক দফা দুর্বল হচ্ছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।