কাজির বাজার ডেস্ক
একের পর এক নির্বাচন ও আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ায় বিএনপি নানামুখী সংকটের সম্মুখীন। সাংগঠনিকভাবে এই সংকট কাটাতে দলটিতে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের পথ অনুসরণ করার দাবি জোরালো হচ্ছে। ক্ষমতাসীনরা যেমন তরুণ ও সাবেক ছাত্রনেতাদের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের জন্য তৈরি করছে, তেমনি বিএনপিতেও সাবেক ছাত্রনেতা, তরুণ ও ত্যাগী নেতৃত্বকে সামনে আনার চাপ বাড়ছে। এক্ষেত্রে শুধু পদ দিয়েই নয় কার্যকরী ক্ষমতা দিয়েও দলে নেতৃত্ব ঠিক করার আলোচনা শুরু হয়েছে।
জানা যায়, কর্মসূচিগুলোতে জন স্রোতের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সমর্থন গত বছরের ২৮ অক্টোবরের আগে বিএনপি নেতাকর্মীদের ব্যাপক চাঙ্গা করেছিল। কিন্তু দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে আন্দোলন সংশ্লিষ্ট কার্যকরী নেতারা আটক হওয়ায় তারা ঝিমিয়ে পড়ে। বাইরে থাকা নেতারা কর্মীদের সঙ্গে সমন্বয় করে আন্দোলন নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে উদাসীন ছিল। অভিযোগ আছে, যোগ্যতা নয় লবিং করে পদ পাওয়া নেতারাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেনি। অনেক নেতা আত্মগোপনের নামে একেবারেই নিরাপদ স্থানে ছিলেন। সঙ্গত কারণে নির্বাচন ঠেকানোর কোনো আন্দোলনই হয়নি। নিজেরা আন্দোলনের মাঠে না থাকলে পালিয়ে থাকা নেতারা ভার্চুয়ালি বৈঠকগুলোতে নিজেদের দায় এড়াতে অসহযোগ আন্দোলনের মতো একটি হাস্যকর কর্মসূচিতে যেতে হাইকমান্ডকে পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি বাস্তবায়ন করে। নির্বাচনের এক মাসেরও বেশি সময় পার হওয়ার পর আন্দোলনের লড়াকু নেতারা একে একে কারাগার থেকে বের হতে শুরু করেছে। বের হয়েই এসব নেতারা পদসর্বস্ব নেতাদের বিষয়ে কার্যকর কিছু করার জন্য চাপ দিতে শুরু করেছে। সংকট কাটাতে দাবি উঠেছে, সাবেক ছাত্রনেতা, তরুণ ও ত্যাগী নেতৃত্বকে সামনে আনার।
সূত্রমতে, বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতা এবং দল সমর্থক বুদ্ধিজীবী মহলে এখনো আন্দোলন নিয়ে নানা ধরনের বিচার-বিশ্লেষণ হচ্ছে। তাদের অনেকেই মনে করেন, হাইকমান্ডের বলয়ে থাকা নেতাদের উদাসীনতাই সর্বশেষ আন্দোলন ব্যর্থতার অন্যতম প্রধান কারণ। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ঢাকার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য বাইরের নেতাদের কেন্দ্রের শীর্ষ পদে বসানো হয়েছিল। ক‚টনৈতিক অঙ্গনে পরিচিত ও কার্যকর নেতাদের কাজে না লাগিয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। বছরের পর বছর বিদেশে অবস্থান করা নেতাকে আন্দোলনের সমন্বয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, যার সঙ্গে মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের কোনো যোগাযোগ ছিল না। ১/১১ সময় থেকে ব্যর্থ হিসেবে প্রমাণিত নেতাকে ঢাকা মহানগরের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটে দায়িত্ব দেওয়া হলেও কোনো কর্মী আন্দোলনের সময় তাকে পায়নি। এছাড়া হাওয়া ভবনের কর্মকর্তা সাবেক ছাত্রনেতা মাঠ পর্যায়ের আন্দোলন সমন্বয় করায় সিনিয়র ত্যাগী নেতারা নিষ্ক্রিয় হতে বাধ্য হয়েছিল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আন্দোলনের দায়িত্বে থাকা নেতারা এখনো ব্যর্থতার দায় অন্যের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করছে। সম্প্রতি এভারকেয়ার হাসপাতালে উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের মধ্যকার এক আলোচনায় উঠে আসে আন্দোলনে ঢাকা মহানগর বিএনপির আহবায়ক আব্দুস সালামের ভ‚মিকা নিয়ে। সেখানে নীতি নির্ধারণী ফোরামের এক সদস্য বলেন, সালামের নিষ্ক্রিয়তায় আন্দোলনের বারোটা বেজেছে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার সালাম অনুসারীরা প্রচার করছে আহবায়ক আব্দুস সালাম শুধু কাগজে আহবায়ক। ইচ্ছা করলেই কোনো কমিটি দিতে পারছেন না। একটি বলয়ের কাছে জিম্মি পুরো মহানগর। যে কারণে ঢাকা মহানগরকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করা অনেক কঠিন হচ্ছে। ব্যর্থতা ঢাকতে অনেক বিতর্কিত নেতা ও তাদের অনুসারীরা নানা রকম কৌশল নিচ্ছে।
সূত্রমতে, এখন থেকে সুবিধাবাদী নেতাদের ক‚টকৌশলে সঙ্গে শীর্ষ নেতৃত্ব আপস করবে না। সর্বশেষ আন্দোলনে মামলা-হামলা ও নির্যাতনে শিকার হয়েও যেসব নেতা আন্দোলন প্রশ্নে আপসহীন ছিল তাদের সামনে রাখা হবে। আপাতত কাউন্সিল না হলেও সুবিধাবাদী নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থেকে সরানোর আলোচনাও আছে উচ্চ পর্যায়ে। পাশাপাশি সাবেক ছাত্রনেতা, তরুণ ও ত্যাগী নেতৃত্বকে সামনে আনা হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পরবর্তী আন্দোলনে যোগ্যদের সামনে আনতে এরই মধ্যে দলের একাধিক ফোরামে আলোচনা হয়েছে। আন্দোলনে অনন্য ভ‚মিকার কারণে হাবিবুন নবী খান সোহেল, ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীম, আব্দুল কাদির ভ‚ইয়া জুয়েল, বজলুল কমির চৌধুরী আবেদ, আব্দুল মোনায়েম মুন্না, রুমিন ফারহানা, নিপুণ রায়, তানভীর আহমেদ রবিন, এসএম জাহাঙ্গীরের নাম সর্বত্র আলোচিত হচ্ছে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মুক্ত হওয়ায় এনিয়ে পরবর্তী স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও আলোচনা হতে পারে। কারণ পবিত্র রমজানের পরে আবারো আন্দোলন শুরু করতে চায় বিএনপি। আন্দোলন সফল করার উপযোগী নেতৃত্ব ঠিক করার বিষয়ে ভাবা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার কারামুক্ত হয়েই মহাসচিব আন্দোলনের বিষয়ে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেন, গণতন্ত্র ফেরানো চলমান আন্দোলন বিজয় না হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।