কাজির বাজার ডেস্ক
দেশের সব জায়গায় শীতের প্রবল দাপট। এর মধ্যে ৩৭ জেলার উপর দিয়ে বইছে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। এসব জেলায় তীব্র শীতে বিপাকে পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষ। এই ঠাÐায় সারাদশেই জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ১০ ডিগ্রির নিচে তাপমাত্রা নামায় একাধিক জেলায় বন্ধ রাখা হয়েছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়। তবে আবহাওয়া অফিস বলছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দিন ও রাতের তাপমাত্রা কিঞ্চিৎ বেড়ে আবার কমে যাবে। তখন আরো জাঁকিয়ে নামবে শীত।
এদিকে ঢাকায়ও জানুয়ারির শেষে শীতের জোরালো দাপট। গত কয়েকদিন থেকেই জাঁকিয়ে ঠাÐা পড়েছে ঢাকায়। উত্তরে হাওয়া রীতিমতো কাঁপুনি ধরাচ্ছে। তবে কি শীত এমন ভয়াল মেজাজ দেখিয়ে ধীরে ধীরে হাত গোটাচ্ছে- এমন প্রশ্নের তেমন স্পষ্ট উত্তর দিতে পারেনি আবহাওয়া অফিস। আগামী শুক্রবার পর্যন্ত ঠাÐার এই দাপট থাকবে বলে জানা গেছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, শুধু ঢাকা নয়, আগামী শুক্রবার পর্যন্ত আপাতত গোটা দেশেই শীতের এমন তীব্রতা দেখা যাবে।
আবহাওয়া সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, হিমেল বাতাসে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। এতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে উত্তরাঞ্চলের মানুষ। গতকাল বুধবার মৌসুমের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গা ও সিরাজগঞ্জে। জেলাজুড়ে বইছে শৈত্যপ্রবাহ। সন্ধ্যা নামলেই বাড়ে কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ার তীব্রতা। এদিন সকালে চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অন্যদিকে ৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা সিরাজগঞ্জে। রংপুরেও নেমেছে তাপমাত্রার পারদ। শীতে কাবু খেটে খাওয়া মানুষ। জীবিকার তাগিদে রাস্তায় নামলেও আয় হচ্ছে না তেমন একটা। কুড়িগ্রামের উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। গুঁড়ি গুঁড়ির বৃষ্টি মতো ঝরছে কুয়াশা। সপ্তাহজুড়ে পঞ্চগড়ের তাপমাত্রা ৭ থেকে ১০ ডিগ্রির মধ্যে ওঠানামা করছে। জনজীবন বিপর্যস্ত। দুদিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়। টানা কুয়াশা আর হিমেল বাতাসে গাইবান্ধায়ও বেড়েছে শীতের তীব্রতা। ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়। মেহেরপুরে আবারো তীব্র শীতে জনজীবন
বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। গত বুধবার তাপমাত্রা ৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। হাড় কাঁপানো শীতের সঙ্গে চলছে শৈত্যপ্রবাহ। শীতে শুধু জনজীবন নয়, জবুথবু হয়ে পড়েছে প্রাণিকুলও। টাঙ্গাইলে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নামায় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠদান। ঘন কুয়াশা আর হিমেল বাতাসে কাবু মৌলভীবাজার। বিপাকে পড়েছেন খেটেখাওয়া মানুষ। ঘন কুয়াশা আর হাড় কাঁপানো শীতে দুর্ভোগ বেড়েছে নেত্রকোনার জনজীবনেও। জয়পুরহাটেও কমেছে তাপমাত্রা, বেড়েছে শীতের মাত্রা। আরো দুদিন বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
এদিকে গত মঙ্গলবার ছিল এ মৌসুমে ঢাকায় সবচেয়ে শীতলতম দিন। এদিন সকালে ঢাকার আকাশ বেশ রৌদ্রোজ্জ্বল দেখা গেলেও তাপমাত্রার পারদ নেমেছিল ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে- যা এই মৌসুমের সর্বনি¤œ তাপমাত্রার রেকর্ড। ঢাকায় সূর্যের দেখা মিললেও দেশের বেশির ভাগ অঞ্চলই এখনো কুয়াশায় আচ্ছন্ন। তবে ঢাকাসহ সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা কিছুটা বাড়তে পারে বলে আশা প্রকাশ করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আবহাওয়াবিদ ড. মো. আবুল কালাম মল্লিক জানান, মঙ্গলবার ঢাকায় সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমেছে- যা গত সোমবার রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মৌসুমের সর্বনি¤œ রেকর্ড হলেও এটিই ঢাকার সর্বনি¤œ তাপমাত্রা নয়, এর আগে ১৯৯৫ সালের ৩ জানুয়ারি তাপমাত্রা নেমে গিয়েছিল ৬ দশমিক ৫ ডিগ্রিতে। এদিকে ২০২১ সালে ১ ফেব্রæয়ারি তাপমাত্রা ছিল ১০ ডিগ্রিতে। তিনি বলেন, রাতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের তাপমাত্রা বাড়তে পারে। এতে কিছু এলাকার শৈত্যপ্রবাহ কমে আসতে পারে। তবে ২৬ জানুয়ারি থেকে তাপমাত্রা আবারও কমে যেতে পারে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেন। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে- তা কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগে বিঘœ ঘটতে পারে। সারাদেশে রাত এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। এই শৈত্যপ্রবাহ কি এই মৌসুমের শেষ; নাকি আরো হতে পারে- জানতে চাইলে আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান বলেন, এটি একেবারে নিশ্চিত করে বলা যাবে না। তবে আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী ফেব্রæয়ারিতে আরো একটি শৈত্যপ্রবাহ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
জানা যায়, গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শীত পড়েছিল ২০১৮ সালে। সে বছরের ৮ জানুয়ারি পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা ছিল ২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে- যা ইতিহাসে রেকর্ড। সে সময় তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গিয়েছিল। সে হিসাবে এবার তীব্র শৈত্যপ্রবাহ না হলেও শীতের অনুভ‚তি অনেক বেশি। আব্দুল মান্নান বলেন, এর কারণ হচ্ছে সর্বোচ্চ ও সর্বনি¤œ তাপমাত্রার মধ্যে পার্থক্য কমে যাওয়া। এটি যত কমে আসবে তত শীতের অনুভ‚তি বাড়বে।
এদিকে শীতে স্থবির জনপদ। এর প্রভাব পড়েছে মানুষ, পশুপাখি আর ফসলের ওপর। প্রচÐ শীত স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে থমকে দিয়েছে। কর্মহীন হয়ে পড়েছে মানুষ। নেহাত প্রয়োজন ছাড়া সকাল ও সন্ধ্যার পর মানুষ ঘরের বাইরে আসছে না। এতে বিভিন্ন খাতে উৎপাদন কমে যাচ্ছে। ফলে অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। শীতের তীব্রতায় নানামুখী সমস্যায় পড়েছে পূর্ব-পশ্চিম-উত্তর ও দক্ষিণের মানুষ। হিমালয় থেকে আসা হিমেল হাওয়া আর ঘন কুয়াশার কারণে এসব অঞ্চলের শ্রমজীবী মানুষ চরম বিপাকে পড়েছেন। এই তীব্র শীতে শ্রমজীবীরা কাজে যেতে পারছেন না। যারা প্রচÐ শীত উপেক্ষা করে কাজের সন্ধানে যাচ্ছেন তারা অনেকে কাজ পাচ্ছেন না। হিমেল হাওয়া মিশ্রিত এই কনকনে শীতে শিশু ও বৃদ্ধরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। বাড়ছে শীতজনিত রোগবালাই। এই তীব্র শীতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষি খাত। শীতের কারণে আগাম জাতের ইরি-বোরো চাষ ব্যাহত হচ্ছে। গাঢ় কুয়াশায় ঢাকা হিমেল হাওয়ার কারণে মাঠে নামতে পারছে না কৃষকরা। কোল্ড ইনজুরির মুখে পড়েছে বোরোর বীজতলা, আলুর লেটব্রাইট রোগ। এসব সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে আবাদকারীরা। তীব্র শীতে মারা যাচ্ছে মুরগি। রাজশাহী পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের মতে, গত পনেরো দিনে বারো হাজারের বেশি মুরগি মারা গেছে। যদিও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বলছে শীতের কারণে মুরগি মারা যাওয়ার তথ্য তাদের কাছে নেই। তারা শীতের কারণে মৃত্যুরোধে বাল্ব জ্বালিয়ে রাখার এবং পলিথিন দিয়ে খামার ঢেকে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। কৃষিপ্রধান এ অঞ্চলের চাষাবাদ যেমন সংকটে পড়েছে; তেমনি কলকারখানা না থাকায় বেকার মানুষের দুর্ভোগ আরো বেড়েছে। কাজ নেই আয় নেই। অনটন বেড়েছে।