জুড়ী প্রতিনিধি
বর্ষায় মাছ আর শুষ্ক মৌসুমে জমিতে বাদাম, ভুট্টা আর বোরো ফসল থাকায় খাদ্যের মজুত থাকে বেশ। সেজন্য বছরজুড়ে হাকালুকি হাওরে থাকে দেশি ও অতিথি পাখির আনাগোনা। তবে শীতের তীব্রতা বাড়ায় প্রায় এক সপ্তাহ ধরে নতুন পাখির আগমন নজরে পড়েনি মৌলভীবাজারের হাকালুকি হাওরে। এমনটাই জানিয়েছেন মৌলভীবাজারের পাখি পর্যবেক্ষক, প্রকৃতিবাদী ও স্থানীয়রা।
শীতের সময়ে গতা হাওরে পানি না থাকলেও বিলগুলোতে পানি থাকে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা অতিথি পাখি ভিড় জমায় এই বিলের পানিতে। শীতের শুরু থেকেই অতিথি পাখির আসা শুরু হয় হাকালুকিতে। তবে এক সপ্তাহ ধরে শীতের তীব্রতা বাড়ায় পাখি আসতে দেখা যাচ্ছে না। তবে ধারণা করা হচ্ছে এরা এ অঞ্চলের কাছাকাছি কোথাও অবস্থান নিয়েছে।
জানা যায়, সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলার পাঁচটি উপজেলা নিয়ে হাকালুকি হাওরের অবস্থান। ছোট, বড়, মাঝারি মিলিয়ে সেখানে ২৩৮টি বিল রয়েছে। এর মধ্যে হাওর খাল, বাইয়া, গজুয়া, নাগুয়া, রঞ্চি, চাতলায় পাখির বসবাস বেশি। শীতকালে আর্মেনিয়া, কিরগিজস্তান, মঙ্গোলিয়া, সাইবেরিয়া, সাইপ্রাসসহ ইউরোপের বিভিন্ন শীতপ্রধান দেশ থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি আসে এখানকার হাওরে। সেপ্টেম্বর থেকে ফেব্রæয়ারি মাস পর্যন্ত সেখানে থেকে ফিরে যায় নিজের ঘরে।
হাকালুকি হাওরে গিয়ে দেখা যায়, নানা রঙের পাখির কলকাকলিতে মুখরিত বিলগুলো। কিছু পাখি মাছ শিকার করছে। অনেক পাখি কুয়াশায় হাওরের বিভিন্ন জলাশয়ের পানিতে নানা কায়দায় কসরত করছে। হাওরের বিলগুলোতে এ সময় নিয়মিতভাবে পাখির ঝাঁক নামতে দেখা গেলেও গত কয়েকদিন এমন দৃশ্য চোখে পড়েনি।
স্থানীয় বাসিন্দা ও পাখি পর্যবেক্ষকরা জানান, হাওরে বালিহাঁস, গিরিয়া হাঁস, ল্যাঞ্জা হাঁস, কুড়া ঈগল, সরালি, ভুতিহাঁস, পানভুলানি, টিটি, গুটি ঈগলসহ ২০ প্রজাতির পরিযায়ী পাখি এসেছে।
হাকালুকি হাওরের তীরবর্তী উপজেলার জুড়ীর বেলাগাঁও গ্রামের হাবিব মিয়া জানান, হাওরে সকাল ও বিকালে পাখি বেশি দেখা যায়। পাখিরা এক জায়গায় দল বেঁধে না থেকে বিচ্ছিন্নভাবে পুরো হাওরে ঘুরে বেড়ায়। তবে পাখির ঝাঁক নামার দৃশ্য দেখে বোঝা যায় সেখানে আরও পাখি আসছে কিনা, যা গত কয়েক দিনে নজরে পড়েনি।
ন্যাচারাল রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট স্টাডির কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন জানান, হাওর এলাকায় অতিথি পাখির নিরাপদ আবাস ও খাদ্যের জোগান নিশ্চিত করতে কাজ করা হয়েছে। পাখি শিকার বন্ধে নেওয়া হয়েছে পদক্ষেপ। পাখিরা ভীত হতে পারে- এমন পরিস্থিতি নেই। এরপরও গত কয়েক দিনে পাখির আগমন চোখে না পড়ায় ধারণা করা হচ্ছে শীতের তীব্রতা বাড়ার কারণেই পাখি আসছে না।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ, সিলেটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, পাখির নিরাপদ আবাস নিশ্চিতে কাজের পাশাপাশি শুমারি ও গতিপথ পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।