নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই নির্বাচনী সহিংসতা বাড়ছে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রচারকে কেন্দ্র করে বুধবারও দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ মনোনীত ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এসব সংঘর্ষে ময়মনসিংহে এক ব্যক্তি নিহতসহ অন্যান্য জেলায় আটজন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া প্রতিপক্ষের গাড়ি ও নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর, পোস্টার ছিঁড়ে ফেলারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। ময়মনসিংহে পূর্বশত্রæতার জেরে সদর উপজেলার চরাঞ্চলে স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্পে প্রতিপক্ষের মারধরে রফিকুল ইসলাম (৫২) নামে একজন নিহত হয়েছেন। গত মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) রাত ৯টার দিকে সদর উপজেলার চরভবানীপুর কোনাপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ঝিনাইদহ-১ (শৈলকুপা) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী নজরুল ইসলাম দুলালের সমর্থকের ওপর হামলা চালিয়েছে নৌকার প্রার্থীর সমর্থক ও ক্যাডাররা। এ ছাড়া দুধসর ইউনিয়নের ভাটইবাজারে ও মির্জাপুর ইউনিয়নের আলমডাঙ্গা বাজারে নৌকা প্রার্থীর সমর্থকরা স্বতন্ত্র প্রার্থী দুলালের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলেন এবং হাত-পা ভেঙে দেওয়ার হুমকি দেন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে। গত মঙ্গলবার দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্বাচনী সংঘর্ষে ১২ জন আহত হন। এ ধরনের পরিস্থিতি কোনোভাবেই কাম্য নয়।
নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হবে এবং যথাযথ নিয়মনীতি মেনে প্রচার-প্রচারণা চালানো হবে, এমনটি প্রত্যাশিত হলেও, নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতার ঘটনা ঘটছে দেশের বিভিন্ন জায়গায়- যা অত্যন্ত উৎকণ্ঠার। যদি একের পর এক নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতার ঘটনা ঘটে, তবে তা কতটা আশঙ্কাজনক পরিস্থিতিকে স্পষ্ট করে, সেটি আমলে নেওয়া জরুরি।
প্রসঙ্গত বলা দরকার, মারামারি, সংঘাত-সহিংসতার মধ্য দিয়েই যদি নির্বাচন হয় তবে সেটা শুভ ফল বয়ে আনবে না। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হোক- এটাই সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা। আর এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের আমলে নেওয়া দরকার, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট প্রদান করতে পারলে তাতে গণতন্ত্রের সৌন্দর্য প্রকাশ পায়। আর তা নিশ্চিত করাও অপরিহার্য। দুঃখজনক বাস্ততা হলো, আমাদের দেশের নির্বাচনগুলো শতভাগ সহিংসতামুক্ত হতে পারছে না। ফলে নির্বাচনী সহিংসতা রোধে করণীয় নির্ধারণ সাপেক্ষে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে, রাজনৈতিক সংস্কৃতি উন্নত করতে হবে। প্রয়োজনে নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংস পরিস্থিতি আমলে নিয়ে কঠোর হতে হবে। আমরা বলতে চাই, নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে নির্বাচনী উৎসবে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। যা কাম্য হতে পারে না। নির্বাচনকেন্দ্রিক সংঘাত-সহিংসতা অব্যাহত থাকলে ভোটারদের উপস্থিতি উদ্বেগজনক হারে কমে যেতে পারে এবং ভোটারদের উপস্থিতি কম হলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। সঙ্গত কারণেই, সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সহিংসতা-সংঘাতের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে যেমন উদ্যোগী হতে হবে, তেমনি নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কঠোর হতে হবে। নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টরা তৎপর থাকবে এমনটি প্রত্যাশিত।