এমন বর্বর নাশকতার শেষ কোথায়? বিএনপি-জামায়াত জোট আন্দোলনের নামে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করছে। এতে করে সাধারণ মানুষের দিন দিন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে। মঙ্গলবার ভোরে রাজধানীর তেজগাঁও স্টেশনে নেত্রকোনা থেকে ছেড়ে আসা ‘মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস’ ট্রেনের তিনটি বগিতে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এতে এক নারী ও তার শিশুসন্তানসহ ওই ট্রেনের চার যাত্রী নিহত হয়েছেন। এর আগে ১৩ ডিসেম্বর ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথের গাজীপুরের শ্রীপুরের বনখড়িয়া গ্রামের ভাওয়াল স্টেশনের কাছে লাইন কেটে ফেলার কারণে আরেকটি দুর্ঘটনা ঘটে। গ্যাসকাটার দিয়ে রেললাইনটি কেটে ফেলে দুর্বৃত্তরা। এতে ঢাকা-মোহনগঞ্জ রুটের চলাচলকারী আন্তঃনগর মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনটির ইঞ্জিনসহ সাতটি বগি লাইনচ্যুত হয়। দুর্ঘটনায় আসলাম হোসেন (৩৫) নামের একজন যাত্রী নিহত ও ট্রেনের চালকসহ ১৩ জন যাত্রী আহত হয়েছেন। এ ধরনের ঘটনা আমরা অতীতেও দেখেছি। রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতি, এতে অনেক মানুষ হতাহতের ঘটনা ঘটতে পারত। এই ধরনের ঘটনা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। অবরোধের নামে মানুষ হত্যা, অগ্নিসন্ত্রাস করে বিএনপি-জামায়াত হিংস্র মনোবৃত্তির পুনঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে। এভাবে অগ্নিসন্ত্রাস করে কি কোনো রাজনৈতিক আন্দোলনের কৌশল বা উপাদান হতে পারে? সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা বলে কিছু নেই। মানুষকে চলাফেরা করতে হচ্ছে প্রাণ হাতে নিয়ে। স্বাধীনতাবিরোধীদের মাঠে নিয়ে আবারো হত্যার খেলা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারা শুরু করেছে বিএনপি। সাধারণ জনগণ এমন কর্মকাÐ কখনো সমর্থন করে না। মানুষ এ শঙ্কা থেকে মুক্তি চায়। সন্ত্রাস দ্বারা মানুষের সমর্থন জয় করা যায় না। বরং মানুষকে দূরে ঠেলে দেয়া হয়। অতীতে বিএনপি তার সন্ত্রাসী কার্যকলাপের পরিণতি থেকে কোনো শিক্ষাই নেয়নি? ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করার জন্য বিএনপি-জামায়াত চক্র জ¦ালাও-পোড়াও রাজনীতি শুরু করে। মহান মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য যখন বিচার শুরু হয় তখনই এই ধ্বংসাত্মক রাজনীতি শুরু হয়। এক একটি যুদ্ধাপরাধীর বিচারের রায় ঘোষণা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয়ে যেত হত্যা, সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগের ঘটনা। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের বিরোধিতা করে বিএনপি জোটের ভয়াবহ সন্ত্রাসের রাজত্ব কেউ ভোলেনি। তখন শত শত যানবাহন পুড়িয়ে দেয়া হয়। পেট্রোল বোমার আঘাতে দগ্ধ মানুষের আহাজারিতে হাসপাতালগুলোর বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। পবিত্র উপাসনালয় মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা, গির্জায়ও আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। তাদের হাত থেকে রেহাই পায়নি লাখ লাখ গাছও। নির্বাচনের দিন প্রিসাইডিং অফিসারসহ হত্যা করা হয় ২৬ জন নিরীহ মানুষকে। সারাদেশে ৫৮২টি ভোটকেন্দ্রে আগুন জ¦ালিয়ে দেয়া হয়। আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি-জামায়াত জোট আগুনসন্ত্রাসের খেলায় মেতে উঠেছে। নাশকতা-নৃশংসতা কোনো রাজনৈতিক আচরণ নয়, নিজেদের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকার প্রয়োগ করতে হবে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ পন্থায়। ভুলে যাওয়া চলবে না- সভা-সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল সংবিধান প্রদত্ত অধিকার। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যে কোনো রাজনৈতিক দল নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচি ঘোষণা ও পালন করতে পারে। আওয়ামী লীগ সরকারকে লক্ষ রাখতে হবে মানুষের জানমাল যেন শঙ্কামুক্ত থাকে তার ব্যবস্থা নেয়া। পাশাপাশি জামায়াত-বিএনপির সন্ত্রাস কঠোর হাতে দমন করতে হবে।