বাজারে চালের দাম বেড়েছে। এক্ষেত্রে সরবরাহ সংকটের কারণ দেখাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। মিল পর্যায়ে সিন্ডিকেশনেরও অভিযোগ উঠেছে। এদিকে স্বল্প আয়ের মানুষকে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে সরকার চাল সহায়তা দিচ্ছে। বাজার স্থিতিশীল রাখতে প্রথমবারের মতো ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) কার্যক্রমেও চাল যুক্ত হয়েছে। এর পরও চালের বাজার ফুঁসে উঠেছে। কারণ হিসেবে চালকল মালিকদের পক্ষ থেকে আমন মৌসুমের শেষ দিকে ধান সরবরাহ কম থাকার বিষয়টিও বলা হচ্ছে।
চলতি অর্থবছরে সরকারিভাবে অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি চাল বিতরণ হয়েছে। বোরো, আমন ও আউশÑতিন মৌসুমে দেশে চাল উৎপাদন হয়। এখন আমন মৌসুম চলছে। ডিসেম্বরের শুরুর দিকে কৃষকরা পুরোদমে ধান কাটতে শুরু করবেন। বাজারে আগামী মাসের শেষ নাগাদ নতুন চাল আসবে। বর্তমানে কম সরবরাহের অজুহাতে ব্যবসায়ীরা চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। খুচরা ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সরকারি বিতরণ বাড়ায় চাল বিক্রি কমে গেছে। পাশাপাশি ধান কম থাকার অজুহাত দিয়ে মিলাররা কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বস্তুত সরকারি চাল বিতরণ করলে বাজারে চালের দাম স্থিতিশীল থাকে। কিন্তু বোরো মৌসুমের শেষ সময়ে ধানের মজুদ কমে আসে। এ সময় অক্টোবরে ওপেন মার্কেট সেলসের (ওএমএস) চাল বিতরণ বন্ধ থাকাকে বাজারে মোটা চালের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ বলে অনেকেই মনে করছেন। অথচ বিগত কয়েক মাসের মূল্যস্ফীতির সময় চালের বাজার বেশ স্থিতিশীল ছিল।
দেশের চালের সবচেয়ে বড় মোকাম নওগাঁ জেলায় অস্থিরতা বাড়ছে। এ জেলায় সবচেয়ে বেশি চালকল রয়েছে। এক মাসের ব্যবধানে জেলার মোকামগুলোয় পাইকারি পর্যায়ে সব ধরনের চালের দাম প্রতি কেজিতে ২-৩ টাকা বেড়েছে। ধানের সরবরাহ সংকটের কারণে চালের দামে আকস্মিক এ পরিবর্তন বলে চালকল মালিক ও আড়তদাররা দাবি করেছেন। তবে পুরনো চালের পর্যাপ্ত মজুদ থাকার পরও রাতারাতি চালের বাজারে হেরফের করার বিষয়টিকে খুচরা ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট হিসেবেই দেখছেন। এজন্য বাজার স্থিতিশীল রাখতে প্রশাসনের কঠোর ভ‚মিকার বিকল্প নেই বলে তারা মত দিচ্ছেন।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দাবি, দেশে চালের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। তাই আগামী ফেব্রæয়ারি-মার্চ পর্যন্ত চাল আমদানির প্রয়োজন হবে না। কৃষি খাতসংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, আমন মৌসুমের চাল আসা পর্যন্ত মোটা ও মাঝারি চালের দাম কমার সম্ভাবনা নেই। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) তথ্য অনুযায়ী, চলতি আমন মৌসুমে ৫৮ লাখ ৫৪ হাজার হেক্টর জমিতে ধান আবাদ করা হয়েছে। এরই মধ্যে ৭ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে পুরোদমে ধান কাটা শুরু হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাজারে সরবরাহ সংকট ও সিন্ডিকেশনের কারণে চালের দাম বাড়ছে। সরবরাহ সংকট দেখা দিলে তখন সিন্ডিকেশনও কাজ করে। এছাড়া প্রায় প্রতি বছরই চাল আমদানি করে সরকার। গত অর্থবছরেও প্রায় ১০ লাখ ৫৬ হাজার টন চাল আমদানি হয়। তবে এ বছর চাল আমদানি না করার পরিকল্পনা নেয় সরকার। এটিও চালের অযৌক্তিক দাম বাড়ার কারণ কিনা তা যাচাই করে দেখতে হবে। এজন্য মিলগুলোয় চালের মজুদ সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা প্রয়োজন।
তবে আশাপ্রদ বিষয় হচ্ছে, অল্প দিনের মধ্যেই নতুন চাল বাজারে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই চালের দাম আর বাড়ার আশঙ্কা নেই এমনটিই ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে।
আমরা ব্যবসায়ীদের কথায় আশাবাদী হতে চাই। তবে চালের বাজারে এরই মধ্যে যতটুকু অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, তা যেন আর না বাড়ে এজন্য প্রশাসনের সজাগ দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন। পাশাপাশি নিম্নবিত্ত মানুষের জন্য টিসিবির পক্ষ থেকে যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, তা অব্যাহত রাখতে হবে। সব মিলিয়ে নতুন চাল চলে এলে চালের বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে, আমরা সে প্রত্যাশাই করি। প্রয়োজন হলে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে আমদানির ঘোষণা দেয়ার বিষয়টি সরকারের বিবেচনা করা উচিত। এতে অসাধু ব্যবসায়ীদের তৎপরতা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে বলে আশা করা যায়।