বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে পাঁচ হাজার অভিযোগ

65

কাজির বাজার ডেস্ক
চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি ঢাকার গুলশানের ডিএনসিসি মার্কেটে বিকাশে টাকা পাঠানোকে কেন্দ্র করে মোবাইল এজেন্ট দোকানি হাবিবুর রহমানকে বেধড়ক মারধর করেন মিন্টু নামে এক ব্যক্তি। এ ঘটনায় ব্যবসায়ীরা ক্ষিপ্ত হয়ে মিন্টুর ওপর চড়াও হন। এ সময় তিনি কোমর থেকে পিস্তল বের করে এলোপাতাড়ি গুলি চালান। গুলিতে একজন ভ্যানচালক ও একজন গাড়িচালক আহত হন। ওই ঘটনায় মামলা হয় এবং গুলশান থানার পুলিশ মিন্টুসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। এরপর পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ব্যবহৃত পিস্তলটি লাইসেন্স করা। ২০১৬ সালে পিস্তলটির লাইসেন্স নেওয়া হয়। এটির অবৈধ ব্যবহার করা হয়েছিল ওই ঘটনায়। চলতি বছরের মে মাসে এমন আরেকটি ঘটনা ঘটে। মিছিলে নেতৃত্ব দেবার সময় চট্টগ্রাম- ১৬ (বাঁশখালী) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীকে অস্ত্র হাতে দেখা যায়। যার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়।
বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র হলেও পুলিশের উপস্থিতিতে প্রকাশ্যে তা প্রদর্শন ভীতির সঞ্চার করে। ওই ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। যদিও বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার রোধে নীতিমালা জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইন বা নীতিমালা থাকলেই শুধু হবে না, সঠিক জায়গায় সঠিকভাবে তা প্রয়োগ হচ্ছে কি না, সেটি নিশ্চিত করা জরুরি। কারণ, অস্ত্রের লাইসেন্স দেবার মতো যদি এর অপব্যবহার রোধেও রাজনৈতিক পরিচয় বিবেচনায় নেওয়া হয় তাহলে বৈধ অস্ত্রে অপরাধ শুধু বাড়বে না, তৈরি হবে ভীতিকর পরিবেশ। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে যা মোটেও কাম্য নয়। আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন ও ব্যবহার নীতিমালা, ২০১৬ এর ৩২ (ঞ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অনুমোদিত কোনো বিশিষ্ট ব্যক্তির লাইসেন্সপ্রাপ্তির জন্য বিশেষ প্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। তাদের লাইসেন্সপ্রাপ্তির জন্য নির্ধারিত আয়কর পরিশোধে বাধ্যবাধকতাও রাখা হয়নি। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, এ সুযোগে রাজনৈতিক বিবেচনায় গত ১৫ বছরে সরকারি দল-সমর্থিত বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীদের হাতে উঠেছে বেশির ভাগ অস্ত্রের লাইসেন্স।
বৈধ অস্ত্রের হালনাগাদ তথ্য নেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে : স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেও বাংলাদেশে ঠিক কি পরিমাণ বৈধ অস্ত্র রয়েছে, তা জানা যায়নি। তবে, আগ্নেয়াস্ত্রের সঠিক হিসাব সংরক্ষণে ডাটা এন্ট্রি সিস্টেম চালু করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেটি নিয়ে কাজ চলছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। তারা জানান, আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্সধারীদের ডাটা অনলাইনে এন্ট্রি করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এটি নিয়ে কাজ চলছে। ডাটা এন্ট্রি সম্পন্ন হলে প্রকৃত সংখ্যা জানা যাবে।
দেশে বৈধ অস্ত্রের সংখ্যা ৫০ হাজার : স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক হালনাগাদ না মিললেও বৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের হিসাব রাখছে পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) ছাত্র-শ্রম বিভাগ। ফায়ার আর্মস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের (এফএএমএস) মাধ্যমে এসব অস্ত্রের হিসাব সংগ্রহ করছে এসবি। বিষয়টি চলমান।
পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) সূত্রে জানা গেছে, ফায়ার আর্মস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের গত ২০ আগস্ট পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী, সারাদেশে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স ও আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে ৫০ হাজার ৩১০টি। এর মধ্যে ব্যক্তিপর্যায়ে লাইসেন্সই বেশি। ব্যক্তিগত বৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের সংখ্যা ৪৫ হাজার ২২৬টি। এর মধ্যে শুধু রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের হাতেই রয়েছে ১০ হাজারের বেশি অস্ত্র। বাকি অস্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে ব্যবহৃত হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ‘বিশেষ পুলিশ সুপার’ পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা বলেন, ফায়ার আর্মস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের তথ্যানুযায়ী, ৫০ হাজারের বেশি বৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের তথ্য পাওয়া গেছে। তবে, এর থেকেও বেশি বৈধ অস্ত্র আছে দেশে। কারণ, জেলা প্রশাসন থেকেও অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়। সেটির সব তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। পাশাপাশি অনেক থানা থেকে সব তথ্য ইনপুট করা হয়নি। এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া।
ডিএমপি ও ঢাকা জেলা প্রশাসন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিভাগভিত্তিক সবচেয়ে বেশি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স রয়েছে ঢাকায়। এ সংখ্যা ১৪ হাজার ৬৮৩টি। কম ময়মনসিংহে, দুই হাজার ১১৮টি।
বৈধ অস্ত্র ব্যবহারের নীতিমালায় যা আছে : বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার বন্ধে ‘আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন ও ব্যবহার নীতিমালা, ২০১৬ জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর ৩২ (ঞ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অনুমোদিত কোনো বিশিষ্ট ব্যক্তির লাইসেন্সপ্রাপ্তির জন্য বিশেষ প্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। তাদের লাইসেন্সপ্রাপ্তির জন্য নির্ধারিত আয়কর পরিশোধে বাধ্যবাধকতা থাকবে না।
অস্ত্রের লাইসেন্স পেতে হলে কিছু শর্ত আছে। সেই শর্তগুলো পূরণ হলেই একজন নাগরিক অস্ত্রের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারেন। যিনি আবেদন করবেন, তার জীবনের বাস্তব ঝুঁকি থাকতে হবে। আবেদনকারীকে অবশ্যই আয়করদাতা হতে হবে; বছরে তিন লাখ টাকা আয়কর দিতে হবে। অস্ত্রের ক্ষেত্রে আবেদনকারীর বয়স ন্যূনতম ৩০ থেকে ৭০ বছরের নিচে হতে হবে। ১৮৭৮ সালের আর্মস অ্যাক্ট এবং ১৯২৪ সালের আর্মস রুলসের আওতায় যেকোনো সামরিক বা বেসামরিক নাগরিক বৈধ অস্ত্রের আবেদন করতে পারেন। ‘আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন ও ব্যবহার নীতিমালা, ২০১৬’ অনুযায়ী, কেবল আত্মরক্ষার জন্য ব্যক্তিগত অস্ত্র ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। এমনকি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া ‘টেস্ট ফায়ার’ও করা যাবে না। ব্যক্তিগত অস্ত্র লাইসেন্সধারী ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারও ব্যবহারের অনুমতি নেই। এমনকি কোনো ব্যক্তি দেহরক্ষীকে ব্যবহারের জন্যও দিতে পারবেন না; বিশেষ কোনো প্রয়োজনে দেহরক্ষীকে ব্যবহার করতে হলে তার নামে লাইসেন্স থাকতে হবে। ২০১৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক শাখা- ৪ থেকে ব্যক্তিগত অস্ত্র ব্যবহার সংক্রান্ত এক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। তাতে আরও বিস্তারিত ব্যবহারবিধি উল্লেখ করা হয়েছে।
তাতে বলা হয়েছে, আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন ও ব্যবহার নীতিমালা, ২০১৬-এর অনুচ্ছেদ ২৫ (গ) অনুযায়ী, আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্সধারী কোনো ব্যক্তি নিজ ব্যতীত অন্য কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বা সম্পত্তি রক্ষার জন্য অস্ত্রধারী প্রহরী হিসেবে নিয়োজিত হতে পারবে না।
একই ধারার অনুচ্ছেদ ২৫ (ক) অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি স্বীয় লাইসেন্স এন্ট্রি করা অস্ত্র আত্মরক্ষার নিমিত্ত নিজে বহন/ব্যবহার করতে পারবেন। তবে, অন্যের ভীতি/বিরক্তির উদ্রেক করতে পারে, এরূপভাবে অস্ত্র প্রদর্শন করা যাবে না।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, এ আইন অনুসরণপূর্বক প্রকাশ্যে অস্ত্র প্রদর্শন না করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো। অন্যথায় আদেশ লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট বিধান মোতাবেক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
শর্ত ভঙ্গেও বাতিল হয় না লাইসেন্স : লাইসেন্সপ্রাপ্তির শর্ত ও নীতিমালায় বাধ্যবাধকতা সত্তে¡ও চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি কিংবা দলীয় কোন্দলে লাইসেন্সধারী অস্ত্রও ব্যবহার হয়েছে অনেক ক্ষেত্রে। প্রশ্ন উঠছে, কাউকে অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়ার আগে তার যোগ্যতা ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করা হয়েছে কি না। কিংবা লাইসেন্স পাওয়ার পর ছয় মাস অন্তর পরিদর্শন করার কথা থাকলেও তা আদৌ হচ্ছে কি না। অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়ার পর অস্ত্র রাখার যোগ্যতা তার আছে কি না, সেটিও দেখা হয় না।
যোগাযোগ করা হলে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা।
তবে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের উপ-সচিব (রাজনৈতিক- ৪ শাখা) ইসরাত জাহান বলেন, ‘এ মুহ‚র্তে দেশে ঠিক কী পরিমাণ বৈধ অস্ত্রের লাইসেন্স আছে, এর সঠিক তথ্য নেই। আমি না জেনে বলতে পারব না। এটা তো চলমান প্রক্রিয়া। কারও বাতিল হয়, নতুন করে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কাউকে লাইসেন্স দেওয়া হয়।’ শর্ত ভঙ্গের কারণে অস্ত্র জব্দ, জমা নেওয়া কিংবা লাইসেন্স বাতিলের সঠিক তথ্যও জানাতে পারেননি তিনি।
১০ বছরে অভিযোগ ৫ হাজার, শাস্তি ২৭ লাইসেন্স বাতিল
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ বছরে (চলতি বছরের ৩০ মার্চ পর্যন্ত) সারাদেশ থেকে বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে প্রায় পাঁচ হাজার অভিযোগ জমা পড়েছে। অভিযোগ অনুযায়ী, ভীতির সঞ্চার, প্রভাব বিস্তারে প্রদর্শনী, ছিনতাই, টেন্ডারবাজি ও হত্যাকাÐসহ আধিপত্য বিস্তারে লাইসেন্স করা আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে।
এসব ঘটনায় বৈধ আগ্নেয়াস্ত্রধারীর বিরুদ্ধে হয়েছে ফৌজদারি মামলা। তবে, এসব মামলা বা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে যৎসামান্য।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্রে জানা গেছে, বৈধ অস্ত্রের ব্যবহার ও নীতিমালা ভঙ্গ করায় সারা দেশে ২৭টি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স স্থায়ীভাবে বাতিল হয়েছে।
বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহারে এগিয়ে সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা : ফায়ার আর্মস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের তথ্য অনুযায়ী, ১০ হাজার ২১৫টি অস্ত্রের লাইসেন্স রয়েছে রাজনীতিকদের। শুধু আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের হাতে রয়েছে সাত হাজার ২১৫টি আগ্নেয়াস্ত্র। বিএনপির নেতাকর্মীদের হাতে আছে দুই হাজার ৫৮৭টি এবং অন্যান্য দলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের নামে মাত্র ৭৯টি বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে। তবে, বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার বেশি করছে সরকার দলীয় সংগঠন এবং এর অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আমৃত্যু কারাদÐ পাওয়া জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাজা ঘিরে গত ১৫ আগস্ট কক্সবাজারের চকরিয়ায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে অস্ত্র হাতে যুবলীগের এক নেতার ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। চকরিয়ায় সংঘর্ষে ফোরকানুর রহমান (৫০) নামের জামায়াতের এক কর্মী নিহত হন।
ওই সময় জামায়াতের নেতারা গুলিতে নিহতের অভিযোগ করলেও চকরিয়া থানার ওসি জাবেদ মাহমুদ সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছিলেন, তারা কোনো গুলিবর্ষণ করেননি। তবে, সংঘর্ষের ঘটনার ছবি ও ৩৬ সেকেন্ডের ভিডিও ও ছবি বিশ্লেষণে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা হাতে দৌড়াচ্ছেন। প্রথম সারিতে অস্ত্র হাতে চকরিয়া পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি বেলাল উদ্দিন, পাশে তার ভাই প্রবাসী মিরাজ উদ্দিন রয়েছেন। তাদের পেছনে আরও ১০-১২ জন ছিলেন।
গত সেপ্টেম্বরে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আতাহার আলী দিনদুপুরে অস্ত্র নিয়ে হুমকি, প্রতিপক্ষকে ধাওয়া এবং রাস্তায় অস্ত্র প্রদর্শন করেন। তার অস্ত্র প্রদর্শনের একাধিক ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। ভুক্তভোগীরা পুলিশের কাছে অভিযোগও করেন।
গত জুলাইয়ে ফরিদপুর জেলা কৃষক লীগের সহ-সভাপতি ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির সাবেক স্বাস্থ্যবিষয়ক সদস্য ডা. গোলাম কবিরের বিরুদ্ধে আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শন করে এক ভাড়াটিয়াকে ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ ওঠে। গত জুনে সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আফতাব হোসেন খানের বিরুদ্ধে প্রতিদ্ব›দ্বী কাউন্সিলর প্রার্থীর বাসার সামনে অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেওয়ার অভিযোগ ওঠে।
রাতে অস্ত্রসহ মহড়া দেওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। যদিও অভিযুক্ত আফতাব হোসেন খান ওই প্রার্থীর বাসার সামনে অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন। সায়ীদ মো. আবদুল্লাহ নামের ওই প্রতিদ্ব›দ্বী কাউন্সিলর প্রার্থী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেন।
গত ৩০ জুলাই রাজধানীর শাহবাগ থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি ইসমাইল হোসেন ওরফে বাচ্চুর ব্যক্তিগত সহকারী মানিক গুলিবিদ্ধ হন। ওই ঘটনায় তাদের দুজনকে গ্রেপ্তার করেন গোয়েন্দা পুলিশ। প্রথমে বিষয়টি ‘ছিনতাইকারীর হাতে গুলিবিদ্ধ’ বলে প্রচারণা চালানো হলেও পরে একটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, বাচ্চুর ব্যক্তিগত অস্ত্র থেকেই গুলিটি বের হয়।
তদন্তসংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানান, ইসমাইল হোসেন নিজেই তার অস্ত্র দিয়ে তার ব্যক্তিগত সহকারী মানিককে গুলি করতে পারেন। তারপর ছিনতাইয়ের ঘটনা বলে বিষয়টি চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতে পারেন।
নেই কার্যকর মনিটরিং : রাজনৈতিক বিবেচনা দেওয়া কম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স পেয়েছেন। রাজনৈতিক পরিচয় থাকায় আবেদন মঞ্জুরের আগে গোয়েন্দা তদন্তও হয় দায়সারা। এভাবে লাইসেন্সপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের কেউ কেউ যে বিপথগামী হন, এমন নজিরও আছে। মাঝে মাঝে শর্ত লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলেও অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিলের ঘটনা হাতে গোনা।
নির্বাচনের আগে বৈধ অস্ত্র জমা দেবার নির্দেশ আসছে
নির্বাচনের আগে বৈধ অস্ত্র জমা নেওয়া হয়ে কি নাÑ জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের উপ-সচিব (রাজনৈতিক- ৪ শাখা) ইসরাত জাহান বলেন, ‘আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল এখনও ঘোষণা করা হয়নি। নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশন থেকে বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার বন্ধে অস্ত্র জমা দেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে থাকে। নির্দেশনা পেলে আমরা তা কার্যকরের উদ্যোগ নেই।’
‘নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর বৈধ অস্ত্র জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হবে’ বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ। তিনি বলেন, ‘প্রতিবারই জাতীয় নির্বাচনের আগে বৈধ অস্ত্র জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এবারও এ নির্দেশনা দেওয়া হবে। তবে, নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর। সেখানে কেন, কারা, কোথায় ও কীভাবে এবং কত দিনের জন্য বৈধ অস্ত্র জমা দেবেন, আমরা পরিপত্র জারির মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে জানিয়ে দেব।’
অস্ত্র জমা না দিলে গ্রেপ্তার : ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মো. হারুন-অর রশীদ বলেন, যাদের বৈধ অস্ত্র রয়েছে তারা যেন সেগুলো থানায় জমা দেন, খুব শিগগিরই সেই নির্দেশনা দেওয়া হবে। জমা না দিলে অপরাধ হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের অবশ্যই গ্রেপ্তার করবে এবং তাদের অস্ত্রটা নিয়ে আসবে। তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা হবে। ‘নির্বাচনের আগে আমাদের বিশেষ অভিযান চলছে। আমাদের কাছে তথ্য আসছে যে, অনেকে এসব অস্ত্র নিয়ে ঘোরাফেরা করছে এবং হুমকি দিচ্ছে। এটা আইনের দৃষ্টিতে অপরাধ। আমরা তাদের গ্রেপ্তার করব।’