তাহিরপুর সোনালী ব্যাংকে ভাতা তুলতে গিয়ে হয়রানির শিকার সুবিধাভোগীরা

69

বাবরুল হাসান বাবলু, তাহিরপুর থেকে

সেবার মান বাড়েনি তাহিরপুর সোনালী ব্যাংকে, উল্টো বেড়েছে গ্রাহক ভোগান্তি। সরকারী বিল বাউচার ব্যাতীত গ্রাহক পর্যায়ে ব্যবাসায়ীদের লেনদেন কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। দুস্থ কিংবা হতদরিদ্র পর্যায়ে সরকারের বিভন্ন ভাতা সুবিধাভোগীদের ভাতার টাকা উত্তোলনে করেতে গিয়ে পড়তে হচ্ছে নানা বিড়ম্বনায়। সরকারী বিভিন্ন দপ্তরের ঋণ, ব্যাংক ঋন, ব্যাবসায়ী ঋন, মটগেজ ঋণ, শিক্ষক কর্মচারীদের কনজ্যুমার ঋন সহ নানা ঋণ নিতে গেয়ে দিতে হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। সরকারের ভাতা সুবিধা ভোগী, সেই সাথে গ্রাহক পর্যায়ে অভিযোগ উঠেছে শাখা ব্যবাস্থাপক নিকিলেশ তালুকদার ইচ্ছে করেই কিছুটা সুবিধা নেওয়ার জন্য গ্রাহকদে হয়রানি করছেন। গ্রাহকরাও অনেক ক্ষেত্রে অনোন্যপায় হয়ে কিছুটা অনৈতিক সুবিধা দিচ্ছেন শাখা ব্যবাবস্থাপককে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলা পরিষদের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, ভাতা সুবিধাভোগীরা উপজেলার দুর দুরান্ত এমনকি প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসেন ভাতার টাকা উত্তোলন করার জন্য। কিন্তু ব্যাংক কর্মকর্তা ভাতার সম্পূর্ন টাকা (৪ থেকে ৫ হাজার)এক দিনে দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন, বলেন দুই দিনে নিতে। সে ক্ষেত্রে ব্যাংক কর্মকর্তাকে ৫ শ টাকা দিয়ে দিলে সম্পূর্ন টাকা উত্তোলন করতে সমস্যা থাকে না। এমনটাই তাকে মৌখিক ভাবে জানিয়েছেন একাধিক ভাতা সুবিধাভোগী।
জানা যায়, উপজেলায় দুটি রাস্ট্রয়াত্ত ব্যাংক রয়েছে। এর মধ্যে একটি সোনলী ব্যাংক এবং অন্যটি কৃষি ব্যাংক। দুটিরই শাখা তাহিরপুর সদর পশ্চিম বাজারে। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংকে সরকারী কর্মচারীদের বেতন বোনাস, টিকাদারদের বিল ভাউচার, সরকারের বিভন্ন দপ্তরের হত দরিদদের সুবিধার টাকা টাকা লেনদেন বা প্রদান করা হয়। সে ক্ষেত্রে অনেকটা অনোন্যপায় হয়ে গ্রাহক বা সুবিধাভোগীরা সোনালী ব্যাংকের দারস্থ হন। আর এ সুযোগে কাজে লাগিয়ে সোনালী ব্যাংক শাখা ব্যবাস্থাপক হাতিয়ে নেন ব্যাক্তিগতভাবে কিছু সুবিধা।
এ থেকে বাদ পরেনি, বয়স্ক ভাতা, মুক্তিযুদ্ধ ভাতা, বিধবা ভাতা, পঙ্গু ভাতা, গর্ভবতী ভাতা, এমনকি ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া লোকজন। তাদের মধ্যে অনেকেরই কোন না কোন কারেন ব্যাংকে এসে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে বার বার। অভিযোগ উঠেছে শাখা ব্যাবস্থাপক নিকিলেশ তালুকদার দায়িত্ব গ্রহনের পর থেকে নানা অপকর্মে জড়িয়ে গেছেন। উনি আসার আগে একটি আলাদা ডেক্স করে ব্যাংকের কোন একজন কর্মকর্তা মাসের নিদৃষ্ট একটি দিনে ভাতা প্রদান করতেন। তখন এ নিয়ে তেমন অভিযোগ ছিলোনা সুবিধাভোগীদের।
তাহিরপুর সদর ইউনিয়নের গ্রাম জয়নগর, গ্রামের বিধাব দুই মহিলা এবলাশি বেগম ও শাপিয়া বেগম। তাদের অভিযোগ বর্তমান ম্যানেজার আসার আগে নিদৃষ্ট একটা দিনে তাদের টাকা দেয়া হত। তখন তাদের টাকা পেতে কোন অসুবিধা হত না। এখন ম্যানেজার আজকে একজনকে, কালকে দুজনকে টাকা দিচ্ছেন উনার রুমে নিয়ে। যারা টাকা দিচ্ছেন না তাদের রোজ রোজ ব্যাংকে ঘুরাচ্ছেন। আমাদেরও একদিন ঘুরিয়েছেন। পরে ব্যাংকে থাকা একজন লোক নাম জানিনা তিনি বলেছেন স্যারকে কিছু টাকা দিয়ে টাকা তুলে নিয়ে যান। পরে আমরা দু’জন মিলে ১ হাজার টাকা দিয়ে টাকা তুলেছি।
এ রকম অভিযোগ তাহিপুর সদর ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের উজান তাহিরপুর গ্রামের প্রবীন বয়স্ক ভাতা সুবিধাভোগী চান মিয়া ও সখিনা বেগম(সুফিয়ানের মা)। তারা বলেন তারা দু দিন সোনালী ব্যাংক থেকে ঘুরে এসছে টাকা তুলতে পারেন নি। পরবর্তীতে তারা ষিয়টি ওয়ার্ডের মেম্বার তুজাম্মিল হক নাসরুম ও পরিষদের চেয়ারম্যানকে জানিয়েছেন। পরে তাদের অনুরোধে আমারা টাকা পেয়েছি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জনৈক এক স্কুল শিক্ষক বলেন, কনজ্যুমার লোন নিতে চুক্তি নামার জন্য সর্বোচ্চ ৫শ টাকার স্টাম্প প্রয়োজন পরে। কিন্তু এর অজুহাতে ম্যানেজার ২ হাজার থেকে ২৫ শ টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকেন। পাশাপাশি লোন পাওয়ার আগে কিছু নগদ অর্থ দিতে হয়। যারা যত তাড়াতাড়ি উৎকোচ প্রদান কের তাদের তত তাড়াতাড়ি ঋন প্রদান হয়।
বালিজুরি ইউনিয়নের ফাজিলপুর মহালের পাথর ব্যবসায়ী, মাহমুদ আলী, জিল্লুর রহমান, তারা জানান, এক সময় তারা ব্যাবসায়িক লেনদেন বিশেষ করে টাকা টিটি বা ডিডি তাহিরপুর সোনলী ব্যাংক শাখা থেকেই করতেন। বর্তমানে তারা এ ব্যাংকে আর লেনদেন করেন না। জরুরী প্রয়োজন হলে, পাশ^বর্তী বিশ^¤ভরপুর কিংব সুনামগঞ্জ সদরে লেনদেন করেন। একই অবস্থা বড়ছড়া, ছাড়াগাও, বীরেন্দ্র নগর ও বাদাঘাট বাজারের ব্যাবসায়ীদের। তারা এখন আর এর তাহিরপুর সোনালী ব্যাংক শাখায় লেনদেন করেন না।
তাহিরপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জুনাব আলী বলেন, প্রায়ই আমার কাছে লোকজন আসেন ব্যাংক থেকে ভাতা তুলতে পারছেন না। আমি মাঝে মধ্যে একটু অনুরোধ করি। এর মধ্যে অনেকেই জানায়, তারা কিছু টাকা (৫শ)খরচ দিলে যে কোন দিন ব্যাংকে গিয়ে ভাতার টাকা উত্তোলন করতে কারো সুপারিশ লাগে না, এমনকি সমস্যাও হয় না। আর এ কাজে তিনি (ম্যানেজার) ব্যাংকের স্টাফ (পিয়ন)কাশেম মিয়া কে ব্যবহার করেন বলে একাধিক ভাতা সুবিধাভোগী আমাকে জানান।
তাহিরপুর উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা তৌফিক শরীফ বলেন, সোনালী ব্যাংক শাখা থেকে নিদৃষ্ট একটি দিনে ডেস্ক করে বিভিন্ন ভাতা সুবিধাভোগীদের ভাতার টাকা প্রদান করা হতো। শুনেছি এখন এ সিস্টেমটা নেই। আমার কাছে প্রায়ই এ বিষয়ে লোকজন আসে। তাদের ব্যাংকে গিয়ে টাকা পাইতে একটু বিড়ম্বনায় পরতে হয়।
তাহিরপুর সোনালী ব্যাংক শাখা ব্যবস্থাপক নিকিলেশ তালুকদার বলেন, যখন যে আসছে আমারা টাকা দিয়ে দিচ্ছি। সেই সাথে গ্রাহক ভোগান্তি সহ অন্যান্য বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যারা অভিযোগ করেছেন তাদের অভিযোগ গুলো সত্য নয়।