জগন্নাথপুরে নদীতে বিলিন হওয়া রাস্তা পুনঃনির্মাণে চলছে গভীর ভাঙন ভরাট

40

মো. শাহজাহান মিয়া, জগন্নাথপুর থেকে
জগন্নাথপুর উপজেলার রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের কুশিয়ারা নদীর তীরে বোরো ফসল রক্ষায় সুরাইয়া বিবিয়ানা পোল্ডার অংশে রাণীগঞ্জ থেকে টেংরাখালি পর্যন্ত বেড়িবাঁধ ছিল। এ বাঁধটি এক সময় পাকা রাস্তায় উন্নীত হয়। এতে অবহেলিত স্থানীয় গ্রামীণ জনপদের চিত্র বদলে যায়। যুগযুগ ধরে চলে আসা জনভোগান্তির অবসান হয়। রাস্তায় চলাচল করে যানবাহন। গাড়িযোগে যাতায়াত করেন স্থানীয় প্রায় ১০টি গ্রামের ২০ হাজার মানুষ। সেই সাথে রক্ষা হয় হাওরের বোরো ফসল।
তবে গত ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যায় এ রাস্তার বালিশ্রী নামক স্থানে প্রায় ৩০০ মিটার অংশ ভেঙে কুশিয়ারা নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যায়। এরপর থেকে রাণীগঞ্জ-টেংরাখালি রাস্তায় সরাসরি যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। ফলে মানুষের দুর্ভোগ বেড়ে যায়। ভাঙনের দুই পারে গাড়ি ষ্ট্যান্ড গড়ে উঠে। রাণীগঞ্জ অংশের মানুষ এপারে গিয়ে ভাঙনের অংশের পাশে থাকা অন্যের বাড়ির উপর দিয়ে হেঁটে ওপারের গাড়িতে উঠেন। আবার ওপারের যাত্রীরাও একইভাবে এপারে আসেন। এখনো এভাবেই গাড়ি ও মানুষ চলাচল করছেন।
যদিও ভোগান্তি থেকে মুক্তি পেতে স্থানীয় ভ‚ক্তভোগী জনতা পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। মাত্র ৩০০ মিটার রাস্তা না থাকায় মানুষের ভোগান্তি চরমে পৌঁছে যায়। অবশেষে জনভোগান্তি লাঘবে প্রায় ৭০ ফুট গভীর ভাঙন ভরাট করে পুনরায় রাস্তা নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এতে স্থানীয় জনমনে স্বস্তি ফিরে এসেছে। গত দুই সপ্তাহ ধরে ৫২ লাখ টাকা ব্যয়ে পরিকল্পনামন্ত্রীর বিশেষ বরাদ্দে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ১৮০ মিটার প্রতিরক্ষা কাজ করছে। জিওটিউ ব্যাগে বালিমাটি ভর্তি করে ভাঙনে ফেলা হচ্ছে। প্রতিটি ব্যাগের ওজন কমপক্ষে ৫ টন। এ পর্যন্ত ১২০০ ব্যাগ ফেলা হলেও ভাঙন অংশ ভরাট হয়নি। ভাঙনে ব্যাগ ফেলা মাত্র নদীর গভীরে কোথাও যেন চলে যাচ্ছে। এখনো দৃশ্যমান হচ্ছে না কাজ। এতে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন প্রকল্প বাস্তবায়ন সংশ্লিষ্টরা।
২ অক্টোবর সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, নদীর ভাঙন অংশে কাজ করছেন শ্রমিকরা। কাজ দেখতে স্থানীয়রা ভিড় করছেন। ভাঙন অংশের পাশে থাকা বাড়ির উপর দিয়ে মানুষ হেঁটে চলাচল করছেন। ভাঙন অংশের দুইপারে গাড়ির ষ্ট্যান্ড রয়েছে। হেঁটে গিয়ে মানুষ গাড়িতে উঠে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাচ্ছেন।
এ সময় পথচারী বিধু বিশ্বাস সহ অনেকে বলেন, পুরো রাস্তা গাড়িতে চলাচল করলেও এখানে এসে বিপদে পড়ে যাই। রাস্তা না থাকায় অন্যের বাড়ির উপর দিয়ে কাঁদায় হেঁটে যেতে হচ্ছে। এতে আমাদের খুব কষ্ট হয়। তাই যতো দ্রæত সম্ভব নদী ভাঙন ভরাট করে রাস্তা নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি। ইজিবাইক চালক আবদুর রব সহ অনেকে বলেন, এখানে রাস্তা ভেঙে যাওয়ার কারণে গত বন্যার পর থেকে রাণীগঞ্জ-রৌয়াইল রাস্তায় সরাসরি গাড়ি চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে মানুষের অনেক কষ্ট হচ্ছে। অবশেষে আবারো ভাঙন ভরাট করে রাস্তা নির্মাণের উদ্যোগ নেয়ায় পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান ও বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড এর জগন্নাথপুর উপজেলা উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ হাসান গাজী জানান, পরিকল্পনামন্ত্রী মহোদয়ের ডিও লেটারে এখানে জরুরী ভিত্তিতে প্রতিরক্ষা কাজ চলছে। নদীর পানির প্রবল ¯্রােত ও পানির ঘুর্ণিতে নদীর গভীরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে কাজ এখনো দৃশ্যমান হচ্ছে না। তবে আগামী সপ্তাহের মধ্যে কাজ শেষ হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।