একের পর এক দেশে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটছেই। মার্কেট, বস্তি ও বিভিন্ন কারখানা থেকে শুরু করে উঁচু ভবনে নানাভাবেই হৃদয়বিদারক এবং ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। সঙ্গত কারণেই সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নেওয়ার বিকল্প নেই। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা গেল, দেশে অগ্নিকান্ডের মতো ভয়াবহ দুর্ঘটনা বাড়ছে। এতে জনমনে বাড়ছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি কতটা উদ্বেগের তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
প্রসঙ্গত, এটাও জানা যাচ্ছে- সরকারের নীতিনির্ধারক মহল, দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ও বিশ্লেষকরা অগ্নিকান্ড প্রতিরোধে সচেতনতার ওপর সবচেয়ে বেশি জোর দিচ্ছেন। বড় বড় অগ্নিকান্ডের তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তারা বলছেন, আমাদের অনেক ভবন ও অবকাঠামো আগুনের ঝুঁকিতে রয়েছে। গ্যাসচালিত যানবাহনের অধিকাংশ একেবারে ঝুঁকিমুক্ত, তাও বলা যাবে না। মূলত যত দুর্ঘটনা ঘটছে, এর জন্য মানুষের দায় ও দায়িত্বহীনতা বেশি। এছাড়া দুর্ঘটনাপরবর্তী দ্রম্নত উদ্ধারকাজে আমাদের দক্ষতা বাড়ানোর পাশাপাশি যেসব সীমাবদ্ধতা আছে, সেগুলো দ্রম্নত দূর করতে হবে- এ সংক্রান্ত আলোচনাও আসছে।
আমরা মনে করি, সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ ও তার বাস্তবায়নে অধিকতর মনোযোগী হওয়া। যখন যত দুর্ঘটনা ঘটছে, এর জন্য মানুষের দায় ও দায়িত্বহীনতা বেশি- তখন এটাকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নিয়েও উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। উলেস্নখ্য, গত মঙ্গলবার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, চলতি বছরের আগস্ট মাসে সারাদেশে ১ হাজার ৬৬৭টি অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে ২৮ জন আহত ও ৮ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকায় আগুনের ঘটনা ঘটে ১২৮টি। তবে এসব অগ্নিকান্ডে কেউ মারা যায়নি। আমরা বলতে চাই, বছরের আগস্ট মাস পর্যন্তই যদি অগ্নিকান্ডের এমন চিত্র পরিলক্ষিত হয়, তবে তা কতটা উৎকণ্ঠাজনক সেটা অনুধাবন করা এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ অপরিহার্য।
স্মর্তব্য যে, এর আগে রাজধানী ঢাকার বেশ কয়েকটি মার্কেটসহ সারাদেশের বিভিন্ন ভবন অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে বলে আলোচনা এসেছে। ফলে শুধু রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম নয়, সারাদেশে যেসব ভবন অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে তা চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এটা আমলে নেওয়া দরকার, অগ্নিদুর্ঘটনা থেকে রেহাই পায়নি বস্তি থেকে শুরু করে মার্কেট কেমিক্যাল গোডাউন কিংবা আধুনিক বহুতল ভবনও। বিশ্লেষকরা বলছেন, অতীতে ঘটে যাওয়া বড় বড় অগ্নিদুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা গ্রহণ ও সতর্ক না হওয়ায় অগ্নিদুর্ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। ফলে আমরা মনে করি, এই বিষয়গুলোকে সামনে রেখে সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি।
অগ্নিকান্ডের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এটা উল্লেখ করা প্রয়োজন, ২০১০ সালের ৩ জুন ঢাকার নিমতলীর অগ্নিকান্ডে ১২৪ জনের প্রাণহানি ঘটেছিল। ওই ঘটনা তদন্ত করে ১৭ দফা সুপারিশ পেশ করেছিল তদন্ত কমিটি। তা ছাড়া ভুলে যাওয়া যাবে না, যাত্রাবাড়ীর কেমিক্যাল কারখানা, মিরপুর বস্তি, আশুলিয়া তাজরীন ফ্যাশন, টঙ্গির ফয়েল কারখানাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। আমরা মনে করি, অগ্নিকান্ডের ঘটনাগুলো আমলে নিতে হবে। একই সঙ্গে এ ধরনের ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা একের পর এক কেন ঘটছে সেটাও এড়ানো যাবে না।
সর্বোপরি বলতে চাই, মার্কেট, প্লাস্টিক কারখানা, কেমিক্যাল গোডাউন থেকে শুরু করে আধুনিক বহুতল ভবন, কারখানা, বস্তিসহ বিভিন্নভাবে অগ্নিকান্ডের যে ঘটনা ঘটেছে- প্রত্যেকটি ঘটনা আমলে নিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। অগ্নিদুর্ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে- এর চেয়ে ভয়ানক আর কী হতে পারে! যখন গ্রাম থেকে শহর, বস্তি থেকে শুরু করে আবাসিক ও বাণিজ্যিক বহুতল ভবন, দোকানপাট, গুদাম, মার্কেট কোনো কিছুই আগুনের লেলিহান শিখা থেকে মুক্ত নয়- তখন এই প্রশ্নও অযৌক্তিক নয়, অগ্নিকান্ডের পুনরাবৃত্তি রোধ করা যাচ্ছে না কেন! ফলে সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে যে কোনো ধরনের অগ্নিদুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে দ্রæত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে এবং এর কোনো বিকল্প নেই।