খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা কতটা উদ্বেগের বলার অপেক্ষা রাখে না। ফলে এমন শঙ্কা উঠে এলে তা আমলে নেওয়া অপরিহার্য। উলেস্নখ্য, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে চলতি বছর দেশে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় অনেকটাই কম হয়েছে। এছাড়াও বেড়েছে তাপপ্রবাহের মাত্রা- যা আগামী বছর আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। আর এতে জলাশয়ে পানির পরিমাণ হ্রাসসহ খরার মৌসুম আরও দীর্ঘ হওয়ার আশঙ্কা করছেন আবহাওয়াবিদরা। এর ফলে মাছসহ সব ধরনের খাদ্য উৎপাদন প্রক্রিয়া প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রভাবিত হবে বলেও মনে করছেন তারা।
আমরা বলতে চাই, মাছসহ সব ধরনের খাদ্য উৎপাদন প্রক্রিয়া প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রভাবিত হলে বিষয়টি এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। লক্ষণীয়, আবহাওয়াবিদরা বলছেন, গত বছরের তুলনায় এবার বর্ষা মৌসুমের বৃষ্টিপাত অর্ধেক হয়েছে। যা আগামী বছরেও অব্যাহত থাকতে পারে। আর একইভাবে বাড়তে পারে তাপপ্রবাহের তীব্রতা। বিগত বছরের সঙ্গে চলতি বছরের আবহাওয়ার তথ্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, আগের মাসে ৫ থেকে ৭ দিন কয়েকটি জেলার উপর তাপপ্রবাহ থাকলেও এবার তা বিস্তৃত হয়েছে দেশের প্রায় ৭০ শতাংশ জায়গাজুড়ে। অর্থাৎ একই সঙ্গে তাপপ্রবাহ দেশের প্রায় সব বিভাগেই বিরাজ করেছে। এছাড়াও বেড়েছে এর সময়কালও, দু’-এক দিনের পরিবর্তে গত মে, জুন ও জুলাই মাসে গড়ে প্রায় ২০ দিনের বেশি তাপপ্রবাহ হয়েছে।
এছাড়া এটাও লক্ষণীয়, খরার মাত্রা আরও বেড়েছে। ফলে কমেছে জলাশয়ে পানির পরিমাণ। অন্যদিকে, বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় দেশের কোনো কোনো অঞ্চলের জলাশয় পানিশূন্য হয়ে পড়েছে। আবহাওয়া ডেটা পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে- আগামী বছরও এ প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে। ফলে দেশের বিভিন্ন জেলার ভ‚মির শুষ্কতা আরও বাড়বে। এর প্রভাবে স্বাভাবিকভাবেই ব্যাহত হবে খাদ্য উৎপাদন প্রক্রিয়া। আমরা বলতে চাই, সামগ্রিকভাবে খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার যে শঙ্কা উঠে আসছে তা আমলে নিতে হবে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে করণীয় নির্ধারণ সাপেক্ষে তার যথাযথ বাস্তবায়নও জরুরি। বলা দরকার, এর আগে বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকটের বিষয়টিও সামনে এসেছিল। জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানবিক সংস্থাগুলোর অন্যান্য জোটের মধ্যে একটি ‘দ্য গেস্নাবাল রিপোর্ট অন ফুড ক্রাইসিস’র ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ২০২২ সালে খাদ্য সংকটের মুখোমুখি হওয়া মানুষ ২০২১ সালের চেয়ে ৬৫ মিলিয়ন বেশি। জনসংখ্যার হিসাবে ২০২১ সালে এই সংখ্যা ছিল ১৯৩ মিলিয়ন। এছাড়া ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের জেরে বেড়ে চলা খাদ্য সংকট বিশ্বকে একটি ‘মানবিক বিপর্যয়ে’র মুখে ফেলে দিয়েছে- এমন মতও সামনে এসেছিল। যে যুদ্ধের প্রভাবে খাদ্য পণ্যর দাম বৃদ্ধির বিষয়টিও বারবার আলোচনায় এসেছে। ফলে এখন দেশে খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা উঠে আসছে তখন তা আমলে নেওয়ার বিকল্প নেই।
আবহাওয়া অফিসের তথ্যানুযায়ী দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সবচেয়ে কম বৃষ্টিপাত ও তাপপ্রবাহের তীব্রতা বেশি ছিল। ফলে এসব অঞ্চলে মাছ ও ফসলের উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হয়েছে। একইভাবে যথাসময়ে ধান রোপণ করতে পারছেন না কৃষকরা। ফলে গত বছরের তুলনায় এ বছর আমন ধানের উৎপাদন কমার শঙ্কা রয়েছে। যদিও ভিন্ন ঘটনা ঘটেছে হাওড় অঞ্চলে। প্রতি বছর বৃষ্টির কারণে এসব অঞ্চল পানিতে ডুবে থাকে। কিন্তু কম বৃষ্টিপাতের ফলে এবার তা হয়নি। এতে এ অঞ্চলে চাষযোগ্য জমির পরিমাণ বেড়েছে। আবহাওয়া অফিস বলছে, শুধু বাংলাদেশ নয়, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর ফসল উৎপাদনও হ্রাস পেতে পারে। অন্যদিকে, সম্প্রতি ভারত চালসহ প্রধান বেশ কয়েকটি কৃষিপণ্য রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করেছে। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি এড়ানোর সুযোগ নেই।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার যে শঙ্কা উঠে আসছে তা আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতি অনুযায়ী এখনই ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। তা না হলে আগামী মৌসুমে সংকট আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। এছাড়াও বিভিন্ন দেশের খাদ্য রপ্তানিতে বিধিনিষেধ আরোপে আমদানি ব্যয় আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে বিকল্প চিন্তা করতে হবে- এমন আলোচনাও উঠে এসেছে। সঙ্গত কারণেই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে এমনটি কাম্য।