বাংলাদেশ জনসংখ্যাবহুল দেশ। আর এই জনশক্তিকে জনসম্পদে রূপান্তর করা দেশের সার্বিক অগ্রগতির প্রশ্নে জরুরি। এ প্রসঙ্গে বলা দরকার, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের মানুষ সুনামের সঙ্গে কাজ করছে। এর ফলে দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক ভ‚মিকা রাখছে প্রবাসী আয়। ফলে যদি প্রবাসী আয় কমে যায় তবে সেটি যেমন উদ্বেগের, তেমনি সৃষ্ট পরিস্থিতি আমলে নিয়ে করণীয় নির্ধারণ সাপেক্ষে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করাও জরুরি।
সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে, নানা সুবিধা ও বিভিন্ন পদক্ষেপের পরও আশানুরূপ বাড়ছে না প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স প্রবাহ। এক্ষেত্রে উল্লেœখ্য, আগস্টের প্রথম ১৮ দিনে প্রবাসী বাংলাদেশিরা বৈধ বা ব্যাংকিং চ্যানেলে ১০৪ কোটি ৫ লাখ মার্কিন ডলার পাঠিয়েছেন। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ দাঁড়ায় (প্রতি ডলার ১০৯ টাকা ধরে) ১১ হাজার ৩৯৪ কোটি টাকা। আমলে নেওয়া দরকার, চলমান ধারা অব্যাহত থাকলে আগস্ট মাস শেষে (৩১ দিন) প্রবাসী আয়ের পরিমাণ দাঁড়াবে ১৭৯ কোটি ডলার বা সাড়ে ১৯ হাজার কোটি টাকা। ফলে দেখা যাচ্ছে, এই অঙ্ক আগের মাস ও আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে কম হবে। কেননা, চলতি বছরের জুলাইয়ে রেমিট্যান্স এসেছে ১৯৭ কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার। আর আগের বছরের আগস্টে প্রবাসী আয় এসেছিল ২০৩ কোটি ডলার। এসব তথ্য উঠে এসেছে, রোববার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে।
আমরা বলতে চাই, নানা সুবিধা ও বিভিন্ন পদক্ষেপের পরও যদি আশানুরূপ প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স প্রবাহ না বাড়ে, তবে এটা এড়ানোর সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার- পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ, করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করা। স্মর্তব্য যে, রেমিট্যান্স বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। বিশেষ করে বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠাতে বিভিন্নভাবে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া সেবার বিনিময়ে দেশে রেমিট্যান্স আয় আনতে ফরম সি পূরণ করার শর্ত শিথিল করেছে। পাশাপাশি সেবা খাতের উদ্যোক্তা ও রপ্তানিকারকদের ঘোষণা ছাড়াই ২০ হাজার মার্কিন ডলার বা সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আনার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, রেমিট্যান্স বাড়াতে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে সেগুলোর মধ্যে বৈধ উপায়ে ওয়েজ আর্নার্স রেমিট্যান্সের বিপরীতে আড়াই শতাংশ নগদ প্রণোদনা, রেমিট্যান্স প্রেরণকারীদের সিআইপি সম্মাননা দেওয়া, রেমিট্যান্স বিতরণ প্রক্রিয়া সম্প্রসারণ ও সহজ করার পাশাপাশি অনাবাসী বাংলাদেশিদের জন্য বিনিয়োগ ও গৃহায়ন অর্থায়ন সুবিধা দেওয়াসহ আরও বেশি কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। যা ইতিবাচক বলেই প্রতীয়মান হয়। কিন্তু তারপরও যদি রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে, তবে এর কারণ অনুসন্ধান করতে হবে এবং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে।
আমরা বলতে চাই, যখন প্রবাসী আয় প্রবাহ কমে আসার বিষয়টি সামনে আসছে, তখন এটি যেমন আমলে নিতে হবে- তেমনি প্রবাসী আয় বৃদ্ধিতে উদ্যোগ গ্রহণের বিকল্প নেই। এ প্রসঙ্গে মনে রাখা দরকার, প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে অগ্রগতির অর্থই হলো তা দেশের অথর্নীতির জন্য আশাব্যঞ্জক। একইসঙ্গে এটাও বলা দরকার, বাংলাদেশের অথর্নীতি যে কয়টি ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে আছে তার মধ্য রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় উলেস্নখযোগ্য। করোনা মহামারিকালে প্রবাসী আয়ে ধস নামার আশঙ্কা ছিল অনেকেরই। কিন্তু সব জল্পনা-কল্পনা উড়িয়ে দিয়ে তখনো প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে অগ্রগতির বিষয়টি সামনে এসেছিল। এখন যখন প্রবাসী আয় কমে যাওয়ার বিষয়টি জানা যাচ্ছে, তখন তা কোনোভাবেই এড়ানো যাবে না।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স শুধু প্রবাসীদের জন্যই নয়, দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্যও ইতিবাচক। যা আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ জারি রাখতে হবে। প্রবাসী আয় বাড়াতে উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি নতুন নতুন শ্রমবাজার খুঁজে বের করা এবং দক্ষ জনশক্তি নিশ্চিত করাও জরুরি। আর সেই লক্ষ্যে বাড়াতে হবে প্রশিক্ষণের পরিধিও। আমরা চাই, প্রবাসী আয়ের অগ্রগতি নিশ্চিত করতে সব ধরনের পদক্ষেপ অব্যাহত থাকুক। যেসব দেশে বাংলাদেশি শ্রমিক প্রবাসে কর্মরত, তাদের দেখভালের ওপরও গুরুত্ব দিতে হবে। সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে প্রবাসী আয় বৃদ্ধিতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক এমনটি কাম্য।