বিশ্বে ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। প্রাকৃতিক দুর্যোগকে রোধ করার কোনো উপায় নেই। তবে যথাযথ প্রস্তুতি ও পদক্ষেপ গ্রহণের মধ্য দিয়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব। ভ‚মিকম্প এমনই এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ- সুনির্দিষ্টভাবে দিনক্ষণ কেউ বলতে পারবে না। এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, ২০ বছরে সর্বোচ্চ মাত্রার ভ‚মিকম্প ঢাকায় সোমবার রাতে হয়েছে। রিখটার স্কেলে সেটির মাত্রা ছিল সাড়ে ৫। দেশের ভেতরে উৎপত্তি হওয়া ভূমিকম্পগুলোর মধ্যে এই মাত্রা ২০ বছরে সর্বোচ্চ। বাংলাদেশে গত এক বছরে তিনটি ৫ মাত্রার বেশি ক্ষমতার ভূমিকম্প হয়েছে। সোমবারেরটির বাইরে বাকি দুটি হলো ২০২২ সালের ১৫ আগস্ট ৫ দশমিক ১ মাত্রা এবং গত ২৩ জানুয়ারি ৫ দশমিক ২ মাত্রার ভ‚মিকম্প। সবমিলিয়ে গত এক বছরে বাংলাদেশে ১৭টি ভ‚মিকম্প হয়েছে। বেশির ভাগের মাত্রা ছিল ৪ থেকে ৫ এর মধ্যে। ১০টির উৎস ছিল চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এলাকায়। এ ছাড়া সিলেট ও ময়মনসিংহ অঞ্চল উচ্চমাত্রার ভ‚মিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে। এ ছাড়া রংপুর, ঢাকা, কুমিলস্না ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের কিছু অংশ এই জোনে পড়েছে। মাঝারি মাত্রার ভ‚মিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে- ঢাকা, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, কুমিলস্না, চাঁদপুর, ফেনী, নোয়াখালী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, নওগাঁ, রাজশাহী, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের অংশবিশেষসহ চট্টগ্রাম, বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলা। ভ‚মিকম্পের কম ঝুঁকিতে রয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের পুরো খুলনা ও বরিশাল বিভাগ। এর আগে, এ অঞ্চলের ভ‚তাত্তি¡ক অবস্থা বিচার-বিশ্লেষণ করে অনেক বিশেষজ্ঞই সামনে বড় ভ‚মিকম্পের আশঙ্কার কথা বলেছেন। ফলে আগাম সব ধরনের প্রস্তুতি থাকা দরকার বলেই প্রতীয়মান হয়।
তথ্য মতে, বাংলাদেশের মূল ভ‚-ভাগসহ সীমান্তবর্তী এলাকায় ৫টি চ্যুতি (ফল্ট) রয়েছে। ইন্ডিয়ান, ইউরেশিয়ান ও মিয়ানমার- এই তিনটি পেস্নটের সংযোগস্থলে বাংলাদেশের অবস্থান। এর মধ্যে ইন্ডিয়ান ও বার্মা পেস্নটের সংযোগস্থলে অবস্থিত সিলেট- যার উত্তরে ডাউকি ফল্ট। ওই পেস্নটগুলো সক্রিয় থাকায় এবং পরস্পর পরস্পরের দিকে ধাবমান হওয়ায় প্রচুর শক্তি জমা হচ্ছে। আর জমে থাকা ওসব শক্তি যে কোনো সময় ভ‚মিকম্পের মাধ্যমে বেরিয়ে আসতে পারে। এ কারণেই মূলত বাংলাদেশ অতিমাত্রায় ভ‚মিকম্প ঝুঁকিতে রয়েছে। রাজধানীর ৮০ শতাংশ ভবন রাজউকের অনুমোদন ছাড়া গড়ে উঠেছে। ৬০ শতাংশ ভবন নকশার বরখেলাপ ও নিয়ম লঙ্ঘন করে করা হয়েছে।
ভ‚-তত্ত¡বিদরা বলছেন, দেশে প্রায়ই ছোট ও মাঝারি মাত্রার ভ‚মিকম্প হয়ে থাকে। এ অবস্থাকে বিশেষজ্ঞরা বড় ধরনের ভ‚মিকম্পের পূর্বাভাস বলেও মনে করছেন। মূলত ডাউকি ফল্ট ও সিলেট থেকে চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে গত এক হাজার বছরের মধ্যে বড় ধরনের কোনো ভ‚মিকম্পের উৎপত্তি না হওয়ায় সিলেটের সাম্প্রতিক ভ‚মিকম্পগুলোকে বড় ধরনের ভ‚মিকম্পের পূর্বাভাস বিবেচনা করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশ ৮ মাত্রার ভ‚মিকম্প হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। আর ওই মাত্রার ভ‚মিকম্প হলে ঢাকা শহরে প্রায় দুই লাখ মানুষের প্রাণহানি হতে পারে। ধ্বংসস্ত‚পে পরিণত হবে রাজধানী। ভ‚মিকম্পের সময় গ্যাস আর বিদ্যুৎ লাইনের কারণে বেশি মানুষ হতাহত হবেন। এছাড়া রাজধানীতে সরু রাস্তার কারণে উদ্ধার অভিযানও চালানো সম্ভব হবে না। ফলে, ভ‚মিকম্প সম্পর্কিত সামগ্রিক বিষয়গুলোকে আমলে নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই।