স্মার্টফোন আসক্তি রোধে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিন

2

 

স্মার্টফোনের কারণে অনেক কিছু যেমন সহজ হয়েছে, তেমনি নানা ধরনের সংকটও সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা এতে আসক্ত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, এমনকি একটি প্রজন্ম ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে- এমন আলোচনাও বিভিন্ন সময়ে সামনে এসেছে। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি ‘সব পরিবর্তন অগ্রগতি নাও আনতে পারে’- এমন শঙ্কার কথা জানিয়ে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা ইউনেস্কো বলেছে, ‘ক্লাসরুমে মনোযোগে ব্যাঘাত মোকাবিলা, শেখার উন্নতি ও সাইবার বুলিং থেকে শিশুদের রক্ষা করতে স্কুলে স্মার্টফোন নিষিদ্ধ করা উচিত। একই সঙ্গে সংস্থাটি বিশ্বব্যাপী স্কুলে স্মার্টফোন নিষিদ্ধ করার আহŸান জানিয়েছে।
আমরা বলতে চাই, পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ হলে এমন আহŸান জানিয়েছে সংস্থাটি তা সংশ্লিষ্টদের আমলে নেওয়ার বিকল্প নেই। এমন আলোচনাও উঠে এসেছে যে, গত দুই দশকে ইন্টারনেটের ব্যবহার বেড়েছে। বিশ্ব এখন মানুষের হাতের মুঠোয়। ল্যান্ডফোনের সংযোগ নির্ভরের দিন এখন আর নেই। আর দিনে দিনে তারহীন ওয়াই-ফাই, থ্রি-জি থেকে ফাইভ-জি নেটওয়ার্কে বিবর্তন- সবকিছুই ইন্টারনেট ব্যবহারকে সহজ করেছে। বর্তমানে বিশেষ করে স্মার্টফোনের বিস্তার বড় একটা বিপস্নব। এছাড়া ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছিল, ২০২৩ সালের হিসাব অনুযায়ী- বিশ্বের ৬৮০ কোটি মানুষের একটি করে স্মার্টফোন আছে। এর মধ্যে একটা অংশ শিশুরা রয়েছে। কিন্তু আমলে নেওয়া দরকার, বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কম বয়সে কারও হাতে স্মার্টফোন না দেওয়াই ভালো। এ ছাড়া সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের বিদ্যালয়গুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা অফস্টেডের প্রধান পরিদর্শক আমান্ডা স্পিলম্যান পরামর্শ দিয়েছেন যে, ‘অল্প বয়সি বাচ্চাদের অবাধে ইন্টারনেট-সুবিধা ও স্মার্টফোন দেওয়া উচিত নয়।’
আমরা মনে করি, জাতিসংঘের আহŸান আমলে নিয়ে বিশ্ব নেতৃত্ব ও সংশ্লিষ্টদের করণীয় নির্ধারণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি। এ ছাড়া শুধু শিশু শিক্ষার্থী নয়, বরং সব বয়সি শিক্ষার্থীদের ভেতর অনেকেই স্মার্টফোনে আসক্ত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যা এড়ানোর সুযোগ নেই।
লক্ষ্যনীয়, আজ পরিস্থিতি এমন- প্রযুক্তির এই যুগে স্মার্টফোনবিহীন জীবন যেন কেউ কল্পনাই করতে পারে না। শিশু, কিশোর, যুবা, বৃদ্ধ সবারই চাই স্মার্টফোন। এক ঘরে বাবা-মা সস্তানসহ পরিবারের সব সদস্যের একযোগে স্মার্টফোনের দিকে গভীর মনোযোগের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হচ্ছে। তবুও সচেতন হচ্ছে না কেউ। ফলে এই আসক্তি কোন দিকে নিয়ে যাচ্ছে তা ভাবনার অবকাশ রাখে। সচেতন হওয়া দূরের কথা কার ফোনে কতটা উন্নত প্রযুক্তি সংযুক্ত করা যায়, এ নিয়েই আলোচনা হয় পরিবারের সদস্যদের মধ্যে। আমরা মনে করি, সামগ্রিকভাবে শিক্ষার্থীদের যে ক্ষতি হচ্ছে তা ভাবতে হবে এবং সংশ্লিষ্টদের এ থেকে উত্তরণের উপায় খুঁজতে হবে।
আমলে নেওয়া দরকার, বিভিন্ন গবেষণা বলছে, স্মার্টফোনের পর্দায় বেশি সময় কাটানোয় শিশুরা বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা- যেমন চোখ, মানসিক চাপ, নিদ্রাহীনতা ও মেধা বিকাশের সমস্যায় পড়ে। ফোন নিয়ে বসে থাকলে শারীরিক কার্যক্রম কমে যায়। এতে স্থূলতা, আত্মসম্মান বোধ কমে যাওয়া ও মানুষের সঙ্গে মিশতে অসুবিধা হয় শিশুদের। স্মার্টফোনে সময় কাটানোর ফলে বন্ধুত্ব বজায় রাখতে ও সামাজিক ভাব বিনিময়ে তারা সময় পায় না। সান ডিয়েগো স্টেট ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় দেখা গেছে, স্মার্টফোনে সময় কাটানো মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। শুধু তা-ই নয়, দিনে মাত্র এক ঘণ্টা পর্দায় কাটানোই দুই বছরের কম বয়সি শিশুকে উদ্বিগ্ন বা বিষণœ করে তোলায় যথেষ্ট হতে পারে। ফলে এই বিষয়গুলো আমলে নিয়ে যেমন শিশু শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে, তেমনি সামগ্রিকভাবে শিক্ষার্থীদের ক্ষতির বিষয়টি আমলে নেওয়ার বিকল্প নেই।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, যেসব শিশু স্মার্টফোনে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করে, তাদের মস্তিষ্কের গঠনও আলাদা হয়- এমন আলোচনাও আছে। এ ছাড়া অনেকেই গেমসে আসক্ত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ফলে জাতিসংঘের আহŸান আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি, সামগ্রিকভাবে শিক্ষার্থীদের স্মার্টফোনকেন্দ্রিক ক্ষতির বিষয়টি এড়ানো যাবে না। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে বিশ্ব নেতৃত্ব ও সংশ্লিষ্টরা কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এমনটি কাম্য।