নানা অপ্রতুলতার মধ্যেও সেবা দিয়ে যাচ্ছে শান্তিগঞ্জের কমিউনিটি ক্লিনিক

10

 

শান্তিগঞ্জ প্রতিনিধি

সুনামগঞ্জ জেলার ৮টি ইউনিয়নের ১৫৫টি গ্রামের প্রায় ২ লক্ষ মানুষের স্বাস্থ্য সেবার একমাত্র ভরসাস্থল কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র। এ উপজেলায় ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল নির্মাণ করা হলেও এখনো আনুষ্ঠানিক ভাবে সেবা কার্যক্রম চালু হয়নি। এক কালের রুগ্ন প্রায় কমিউনিটি ক্লিনিকগুলিতে দিন দিন রোগীদের ভিড় বেড়েই চলেছে। চিকিৎসা সেবা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে কমিউনিটি ক্লিনিক গুলিই নারী-শিশু ও হতদরিদ্র বয়স্ক রোগীদের আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে। পাশপাশি কমিউনিটি ক্লিনিক গুলিতে লোকবল ক্লিনার, নিরাপত্তাপ্রহরী সহ কমিউনিটি ক্লিনিকের পর্যাপ্ত জায়গা ও রুম না থাকায় আবাসন সংকট দেখা দিয়েছে।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিস সূত্রে জানা যায়, স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ২০১৮ সালের ১০ জুন ২৮ কোটি ৩৯ লক্ষ ৫৪ হাজার টাকা ব্যয়ে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণ কাজ শুরু করে। প্রকল্পের কাজটি ২০২০ সালের ২৯ ফেব্রæয়ারি সম্পন্ন হয়। চলতি বছরের ২৭শে এপ্রিল সুনামগঞ্জ স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে হাসপাতালের ভবনগুলো হস্তান্তর করেন। জেলার কাঠইরে ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজে ও হাসপাতাল নির্মাণাধীন থাকায় বর্তমানে শান্তিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে অস্থায়ী ক্যাম্পাস হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, ২৫টি কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ২টি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র চালু রয়েছে। বর্তমানে ২৫টি কমিউনিটি ক্লিনিকে একজন কমিউনিটি হেল্থ কেয়ার প্রোভাইডার(সিএইচসিপি) কর্মরত আছেন। এসব ক্লিনিক সপ্তাহে ছয় দিন(শনি থেকে বৃহস্পতিবার) সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত গ্রামীণ জনগোষ্ঠিকে সেবা পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে ১৯২টি ইপিআই টিকাদান কেন্দ্র চালু রয়েছে। সেখানে শিশুদের ১০টি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার টিকাদান নিশ্চিত করা হচ্ছে। গর্ভবতী রোগীদের সকল ধরণের সেবা, ডেলিভারী, প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা, করোনা ভাইরাস এর পরীক্ষা, করোনা টিকা দান, রোগীদের প্রেশার মাপা, ওজন মাপা, ডায়াবেটিস চেক করা, মা সমাবেশ, সেটেলাইট ক্লিনিক, স্বাস্থ্য শিক্ষা, প্রশিক্ষণ সহ শিশু ও মাতৃসেবা। পাশাপাশি কমিউনিটি ক্লিনিক গুলোতে নবজাতক ও শিশু স্বাস্থ্য সেবা থেকে শুরু করে প্যারাসিটমল, মক্সছিলিন, অ্যামক্সাছিলিন ড্রাই সিরাপ, অয়েনমেন্ট মলম সহ ৩০ প্রকারের ঔষধ ফ্রি দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলিতে ঔষধের তুলনায় রোগী সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ঔষধ সংকট দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি কমিউনিটি ক্লিনিগুলিতে রোগী বৃদ্ধি পাওয়ায় অবকাঠামো উন্নয়ন ও রুম সংখ্যা বৃদ্ধি করা জরুরী হয়ে পড়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিকে হেল্থ কেয়ার প্রোভাইডার(সিএইচসিপি) বসবাসের সুযোগ-সুবিধা না থাকায়, কমিউনিটি ক্লিনিকে নিরাপত্তাপ্রহরী ও ক্লিনার না থাকায় স্বাস্থ্য কর্মীদের দুর্ভোগে পোহাতে হচ্ছে।
কমিউনিটি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে আসা শিবপুর গ্রামের জান্না বেগম বলেন, আমাদের উপজেলায় কোন সরকারি হাসপাতাল নেই। সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে খুব ঝামেলা হতো। সুনামগঞ্জে সদর হাসপাতালের মতো গ্রামের এ ক্লিনিকে সেবা নিই। এখানে জরুরী ভিত্তিতে খন্ডকালীন চিকিৎসক দেয়া প্রয়োজন।
ইনাতনগর কমিউনিটি ক্লিনিকের হেল্থ কেয়ার প্রোভাইডার(সিএইচসিপি) জমির হোসেন বলেন, সপ্তাহের ৬ দিন সকাল ৯ থেকে ৩ পর্যন্ত ক্লিনিক থেকে প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করে আসছি। বিশেষ দিনগুলোতেও গ্রামের গরীব-অসহায় মানুষদের সেবা দিয়ে থাকি। জ্বর সর্দি ও কাশি সহ নারী ও শিশুদেরকে চিকিৎসার পাশপাশি হতদরিদ্র রোগীদেরকে বিনামূল্যে সরকারি ঔষধ প্রদান করছি। তবে রোগী বেশী থাকায় মাঝে মধ্যে ঔষধ সংকটে পড়তে হচ্ছে। তাই প্রচুর পরিমান ঔষধের বরাদ্ধ বাড়ানো প্রয়োজন।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জসিম উদ্দিন শরীফি বলেন, শান্তিগঞ্জ উপজেলার কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্যসেবার মান আগের চেয়ে অনেক ভাল। বর্তমানে গ্রামীণ গরিব অসহায় মানুষের সেবা দিতে আমরা বদ্ধপরিকর। তবে দিন দিন রোগী বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকে ক্লিনার, নিরাপত্তাপ্রহরী সহ আবাসন সংকট বৃদ্ধি করার জরুরী হয়ে পড়েছে। আশা করছি আগামীতে সংশ্লিষ্ট দপ্তর জরুরী মনে করে এসকল সমস্যাও সমাধান করবেন। এতে রোগীদের স্বাস্থ্য সেবার মান আরো বৃদ্ধি পাবে।