সিলেট বোর্ডে পাসের হার ৭৬.৬ শতাংশ

15

 

স্টাফ রিপোর্টার
মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল সকল বোর্ডের ন্যায় গতকাল সিলেটেও একযোগে প্রকাশিত হয়েছে। এবার এসএসসি পরীক্ষায় সিলেট শিক্ষাবোর্ডে পাসের হার ৭৬ দশমিক ০৬ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫ হাজার ৪৫২ শিক্ষার্থী। সিলেট বোর্ড পাসের হারে এবার সবার নিচে।
শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে নগরীর দক্ষিণ সুরমা আলমপুরস্থ সিলেট শিক্ষাবোর্ড মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অরুণ চন্দ্র পাল আনুষ্ঠানিকভাবে এ ফলাফল ঘোষণা করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক মোঃ মইনুল ইসলাম, উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হাবিবা বাছিত ও শরীফ আহমদ ও সিস্টেম এনালিস্ট সরকার মোঃ আতিকুর রহমান।
এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় ১ লাখ ১০ হাজার ৪১২ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে অংশ নিয়েছে ১ লাখ ৯ হাজার ৫৩২ জন। অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্র ৪৫ হাজার ২৮৩ এবং ছাত্রী সংখ্যা ৬৪ হাজার ২৪৯ জন। পাস করেছে ৮৩ হাজার ৩০৬ জন শিক্ষার্থী। পাসকৃতদের মধ্যে ছেলে ৩৩ হাজার ৯০৯ জন ও মেয়ে ৪৯ হাজার ৩৯৭ জন। ছেলেদের পাসের হার ৭৪ দশমিক ৮৮ এবং মেয়েদের পাসের হার ৭৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ।
বোর্ডের ফলাফল পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, এবার বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ২৩ হাজার ১৩৫ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ২১ হাজার ২২৩ জন। এরমধ্যে ছেলে ১০ হাজার ১৬৮ জন অংশ নিয়ে পাস করে ৯ হাজার ৪৬১ জন এবং মেয়ে ২৩ হাজার ১৩৫ জন অংশ নিয়ে পাস করেছে ২১ হাজার ২২৩ জন।
মানবিক থেকে সর্বাধিক ৭৯ হাজার ২৯৩ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাস করেছে ৫৬ হাজার ১৬২ জন। এরমধ্যে ছেলেরা ৩১ হাজার ৪৪০ জন অংশ নিয়ে পাস করে ২১ হাজার ৩৯৫ জন। আর মেয়েরা ৪৭ হাজার ৪৫৩ জন পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছে ৩৪ হাজার ৭৬৭ জন। ব্যবসা শিক্ষায় ৭ হাজার ১০৪ জন পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছে ৫ হাজার ৯২১জন। এরমধ্যে ছেলেরা ৩ হাজার ৬৭৫ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হয় ৩ হাজার ৫৩ জন এবং মেয়েরা ৩ হাজার ৪২৯ জন অংশ নিয়ে পাস করেছে ২ হাজার ৮৬৮ জন। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫ হাজার ৪৫২ জন। এরমধ্যে ছেলে ২ হাজার ৪৭০ ও মেয়ে ২ হাজার ৯৮২ জন। গত বছরের চেয়ে ২ হাজার ১১৩টি জিপিএ-৫ কমেছে। গত বছর জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৭ হাজার ৫৬৫ শিক্ষার্থী। এ বোর্ডে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে সর্বাধিক জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫ হাজার ২৫০ জন ছাত্রছাত্রী। এরমধ্যে ছেলে ২ হাজার ৪১৭ এবং মেয়ে ২ হাজার ৭৮৭ জন। মানবিকে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১৫৯ জন। এরমধ্যে ছেলে ২৮ ও মেয়ে ১৩১ জন এবং ব্যবসা শিক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৮৯ জন। এরমধ্যে ছেলে ২৫ ও মেয়ে ৬৪ জন।
বোর্ডের চার জেলার মধ্যে সিলেট জেলায় ৪১ হাজার ১২৪ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ৩২ হাজার ৩৯৯ জন এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ হাজার ৬১৯ জন। জেলায় পাসের হার ৭৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
হবিগঞ্জ জেলায় ২০ হাজার ৩৫৫ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ১৫ হাজার ১৩১ জন এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯৭৯ জন। জেলায় পাসের হার ৭৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
মৌলভীবাজার জেলায় ২৪ হাজার ৫৭৫ জন অংশ নিয়ে পাস করে ১৮ হাজার ৫৩ জন পরীক্ষার্থী। এরমধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ১৯৮ জনে। তবে গড় পাসের হার ৭৪ দশমিক ২৪ শতাংশ।
এছাড়া সুনামগঞ্জ জেলায় ২৩ হাজার ৪৭৮ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ১৭ হাজার ৭২৩ জন। এরমধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৬৫৬ জন। জেলায় গড় পাসের হার ৭৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ।
এদিকে এমন ফলাফলের জন্য গণিতের প্রশ্নপত্র কঠিন হওয়া ও মানবিক বিভাগে মোট পরীক্ষার্থীর ৭২ ভাগের বেশি হওয়াকে দায়ী করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
ফলাফলের বিষয়ে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক অরুণ চন্দ্র পাল বলেন, গণিত বিষয়ে সবচেয়ে কঠিন প্রশ্নপত্র পেয়েছে সিলেট বোর্ড। আমি নিজেও একজন গণিতের অধ্যাপক। কিন্তু এবারের এসএসসিতে যে কঠিন প্রশ্ন হয়েছে সে বিষয়টি আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ওই সময়ই জানিয়েছি। এছাড়া সিলেট শিক্ষাবোর্ডের মোট শিক্ষার্থীর মধ্যে মানবিক বিভাগেই পরীক্ষার্থী ছিল ৭২ দশমিক ৩৯ শতাংশ। পাসের হারও তাদের সবচেয়ে কম। মানবিকে পাসের হার ৭০ দশমিক ৮৩ শতাংশ। তিনি আরও বলেন, সবচেয়ে ভালো ফল করেছে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা। তাদের পাসের হার ৯১ দশমিক ৭৪ শতাংশ। ব্যবসা শিক্ষা বিভাগে পাসের হারও ভালো ৮৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ। কিন্তু এই দুই বিভাগে মিলে পরীক্ষার্থী ছিল মাত্র ২৮ দশমিক ৬১ শতাংশ। আমাদের বিজ্ঞান শাখায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা আরও অনেক বাড়াতে হবে। এ শাখায় পরীক্ষার্থী কম হওয়ায় সিলেট পিছিয়ে পড়ছে।
সিলেট বোর্ডে শতভাগ পাশের সাফল্য দেখিয়েছে ২৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আর কেউ পাশ করেনি এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা শূন্য। তিন বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে ভালো ফলাফল হয়েছে বিজ্ঞান বিভাগে। পাশের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তির দিক থেকে এবারও ছেলেদের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে মেয়েরা।