কাজির বাজার ডেস্ক
চলতি বছরের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এ বছর দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হার ৮০ দশমিক ৩৯ শতাংশ। মোট পাস করেছে ১৬ লাখ ৪১ হাজার ১৪০ জন। এরমধ্যে ছাত্র ৭ লাখ ৯৬ হাজার ৪০৪ জন এবং ছাত্রী ৮ লাখ ৪৪ হাজার ৭৩৬ জন। এবার মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৫৭৮ জন। তাদের মধ্যে ছাত্র ৮৪ হাজার ৯৬৪ জন এবং ছাত্রী ৯৮ হাজার ৬১৪ জন। গত বছর (২০২২ সাল) এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় পাসের হার ছিল ৮৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ। অর্থাৎ গতবারের চেয়ে এবার পাসের হার প্রায় ৭ শতাংশ কম। অন্যদিকে কমেছে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৫৭৮ জন শিক্ষার্থী। গত বছর (২০২২ সাল) জিপিএ-৫ পেয়েছিল ২ লাখ ৬৯ হাজার ৬০২ জন। সেই হিসাবে এবার জিপিএ-৫ কম পেয়েছে ৮৬ হাজার ২৪ জন শিক্ষার্থী। গত বছর এসএসসিতে পাস করেছিল ১৭ লাখ ৪৩ হাজার ৬১৯ জন। এবার পাস করেছে ১৬ লাখ ৪১ হাজার ১৪০ জন। অর্থাৎ গতবারের চেয়ে পাসের সংখ্যা কমেছে এক লাখ ২ হাজার ৪৭৯ জন। যদিও গতবারের চেয়ে এবার ৪৭ হাজার ৩১৩ জন বেশি শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন।
শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে সাংবাদিকদের সামনে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফলের সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এসময় শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীসহ শিক্ষা বোর্ডগুলোর চেয়ারম্যানরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে সকাল ৯টার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে ২০২৩ সালের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফলের সারসংক্ষেপ তুলে দেন শিক্ষামন্ত্রী।
সাধারণ ৯ বোর্ড : প্রকাশিত ফলাফলে দেখা গেছে, দেশের ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের গড় পাসের হার ৮০ দশমিক ৯৪ শতাংশ। মোট পাস করেছে ১৩ লাখ ২২ হাজার ৪৪৬ জন। তাদের মধ্যে ছাত্র ৬ লাখ ১৬ হাজার ৭১ জন এবং ছাত্রী ৭ লাখ ৬ হাজার ৩৭৫ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৫৯ হাজার ২২০ জন। ছাত্র ৭০ হাজার ৯৭৫ জন এবং ছাত্রী ৮৮ হাজার ২৪৫ জন।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৭৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ, রাজশাহীতে ৮৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ, যশোরে ৮৬ দশমিক ১৭ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৭৮ দশমিক ২৯ শতাংশ, বরিশালে ৯০ দশমিক ১৮ শতাংশ, সিলেটে ৭৬ দশমিক ০৬ শতাংশ, দিনাজপুরে ৭৬ দশমিক ৮৭ শতাংশ, কুমিল্লায় ৭৮ দশমিক ৪২ শতাংশ এবং ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৮৫ শতাংশ ৪৯ শতাংশ।
ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ঢাকা বোর্ডে গতবার যেখানে পাসের হার ছিল ৯০ দশমিক ০৩ শতাংশ, সেখানে এবার পাস করেছে ৭৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ শিক্ষার্থী। রাজশাহীতে গতবার পাসের হার ছিল ৮৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ। সেখানে এবার পাসের হার ৮৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ। অর্থাৎ পাসের হার বেড়েছে।
কুমিল্লা বোর্ডে গতবার পাসের হার ছিল ৯১ দশমিক ২৮ শতাংশ, এবার ৭৮ দশমিক ৪২ শতাংশ। পাসের হার কমেছে ১৩ শতাংশের বেশি। যশোরে গতবার ৯৫ দশমিক ১৭ শতাংশ। কিন্তু এবার ৮৬ দশমিক ১৭ শতাংশ। অর্থাৎ পাসের হার কমেছে ৯ শতাংশ। চট্টগ্রাম বোর্ডে গতবার পাসের হার ছিল ৮৭ দশমিক ৫৩ শতাংশ, এবার পাসের হার ৭৮ দশমিক ২৯ শতাংশ। পাসের হার কমেছে প্রায় ৯ শতাংশ।
বরিশালে গতবার ছিল ৮৯ দশমিক ৬১ শতাংশ, এবার পাস করেছে ৯০ দশমিক ১৮ শতাংশ। পাসের হার কিছুটা বেড়েছে এবং পাসের হার সবচেয়ে বেশি এ বোর্ডে। সিলেটে গতবার ৭৮ দশমিক ৮২ শতাংশ ছিল। , এবার এখানে পাসের হার ৭৬ দশমিক ০৬ শতাংশ। পাসের হার ২ শতাংশ কমেছে। দিনাজপুরে গতবার পাসের হার ছিল ৮১ দশমিক ১৬ শতাংশ। এবার পাসের হার ৭৬ দশমিক ৮৭ শতাংশ। পাসের হার কমেছে প্রায় ৫ শতাংশ। ময়মনসিংহ বোর্ডে গতবার ৮৯ দশমিক ০২ শতাংশ, এবার ৮৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ। পাসের হার কমেছে প্রায় ৪ শতাংশ।
মাদরাসা বোর্ড : মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এবার দাখিলে পাসের হার ৭৪ দশমিক ৭০ শতাংশ। এ বছর পরীক্ষায় অংশ নেয় ২ লাখ ৮৫ হাজার ৮৭ জন, যার মধ্যে পাস করেছে ২ লাখ ১২ হাজার ৯৬৪ জন। তাদের মধ্যে ছাত্র ১ লাখ ৯৫০ জন এবং ছাত্রী ১ লাখ ১২ হাজার ১৪ জন। এ বছর জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬ হাজার ২১৩ জন। এরমধ্যে ছাত্র ৩ হাজার ১৮৮ জন এবং ছাত্রী ৩ হাজার ২৫ জন।
গত বছর মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডে দাখিলে পাসের হার ছিল ৮২ দশমিক ২২ শতাংশ। সেই হিসাবে এবার পাসের হার ৭ দশমিক ৫২ শতাংশ কমেছে।। জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১৫ হাজার ৪৫৭ জন। অর্থাৎ এবার মাদরাসা বোর্ডে জিপিএ-৫ কমেছে ৯ হাজার ২৪৪ জন।
কারিগরি বোর্ড : কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এবার এসএসসি (ভোকেশনাল) পাসের হার ৮৬ দশমিক ৩৫ শতাংশ। এ বোর্ডে মোট পাস করেছে ১ লাখ ৫ হাজার ৭৩০ জন। এরমধ্যে ছাত্র ৭৯ হাজার ৩৮৩ জন এবং ছাত্রী ২৬ হাজার ৩৪৭ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৮ হাজার ১৪৫ জন। ছাত্র ১০ হাজার ৮০১ জন এবং ছাত্রী ৭ হাজার ৩৪৪ জন।
গত বছর (২০২২ সাল) কারিগরি বোর্ডে পাসের হার ছিল ৮৯ দশমিক ৬০ শতাংশ। অর্থাৎ গতবারের চেয়ে এবার পাসের হার কমেছে ৩ শতাংশের বেশি। এছাড়া গত বছরের চেয়ে এবার জিপিএ-৫ কম পেয়েছে ৫১০ জন। গত বছর জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১৮ হাজার ৬৫৫ জন।
পাসের হার কম প্রশ্নে যা বললেন শিক্ষামন্ত্রী : সব বিষয়ে পূর্ণ নম্বরের ওপর করা প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা হওয়ায় এবারের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় পাসের হার ও জিপিএ-৫ কমেছে বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
তিনি বলেন, গত বছর পূর্ণ নম্বরের ওপর পরীক্ষা হয়নি। অল্প কয়েকটি বিষয়ের পরীক্ষা হয়েছিল। সময় ছিল অল্প, প্রশ্নপত্র কম ছিল। কিন্ত এবার তো পূর্ণ নম্বরের এবং সব বিষয়ের ওপর পরীক্ষা হয়েছে। তাই খুব স্বাভাবিকভাবেই গতবারের চেয়ে এবার পরীক্ষার ফলাফলে তার একটা প্রভাব পড়েছে। পাসের হার জিপিএ-৫ কিছুটা কমেছে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এ বছর পুনর্বিন্যাসকৃত সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে সব বিষয়ের পরীক্ষা হয়েছে। পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর ৬০তম দিন আজ। আমরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই ফল প্রকাশ করছি। যদিও করোনা মহামারির কারণে এবার যথাসময়ে পরীক্ষা শুরু করা সম্ভব হয়নি। আমরা পর্যায়ক্রমে সময়সূচির বিপর্যয় কাটিয়ে উঠছি। ২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষা শিক্ষা বোর্ডগুলো যথাসময়ে শুরু করতে পারবে বলে মনে করি।
ফল পুনঃনিরীক্ষণে ক্ষেত্রে একই এসএমএস-এর মাধ্যমে একাধিক বিষয়ের জন্য আবেদন করা যাবে। সে ক্ষেত্রে কমা (, ) দিয়ে বিষয় কোড আলাদা লিখতে হবে। যেমন ঢাকা বোর্ডের একজন শিক্ষার্থী বাংলা ও ইংরেজি দুটি বিষয়ের জন্য টেলিটক প্রি-পেইড মোবাইলের মেসেজ অপশনে গিয়ে লিখবে জঝঈ উযধ জড়ষষ ঘঁসনবৎ <ঝঢ়ধপব) ১০১, ১০২, ১০৭, ১০৮। ফল পুনঃনিরীক্ষণে প্রতিটি পত্রের জন্য ১২৫ টাকা করে কেটে নেওয়া হবে।
গত ৩০ এপ্রিল এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়। সময়সূচি অনুযায়ী- দেশের ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন এসএসসি এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন এসএসসি ও দাখিলের (ভোকেশনাল) লিখিত পরীক্ষা শেষ হওয়ার ২৩ মে কথা ছিল।
আর মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীন দাখিলের লিখিত পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা ছিল ২৫ মে। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে একাধিক বিষয়ের পরীক্ষা স্থগিত হওয়ায় পরীক্ষা শেষ হওয়ার তারিখও কয়েকদিন পিছিয়ে যায়।
এবার এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় মোট ২০ লাখ ৭২ হাজার ১৬৩ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়। এরমধ্যে ছাত্র ১০ লাখ ২১ হাজার ১৯৭ জন এবং ছাত্রী ১০ লাখ ৫০ হাজার ৯৬৬ জন। ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডসহ ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ২৯ হাজার ৭৯৮ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা তিন হাজার ৮১০টি কেন্দ্রে এবারের পরীক্ষায় অংশ নেয়।