তামাকজনিত নানা রোগে দেশে প্রতিদিন গড়ে ৪৪২ জন মারা যায়। আইন সংশোধন করতে যত দেরি হবে তামাকজনিত মৃত্যু ততই বাড়তে থাকবে। এ জন্য জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় দ্রম্নত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের পরামর্শ দিয়েছেন তামাকবিরোধী নেতারা। তথ্য মতে, রোববার বেলা ১১টায় প্রগতির জন্য জ্ঞান (প্রজ্ঞা) ও অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স (আত্মা) আয়োজিত ভার্চুয়াল সভায় তারা এসব কথা বলেন। আমরা মনে করি, তামাকজনিত নানা রোগে যদি দেশে প্রতিদিন গড়ে ৪৪২ জন মারা যায়- তবে এটি সহজ করে দেখার সুযোগ নেই। সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথাথ বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই।
এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না- তামাকজাত দ্রব্যের বহুল ব্যবহার হৃদরোগ, ক্যানসার, বক্ষব্যাধি এবং অন্য অনেক রোগ এবং মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। পাশাপাশি তামাকজনিত রোগের চিকিৎসায় সরকারের প্রতি বছর অর্থ ব্যয় হয়- যা একটি দেশের উন্নয়ন ব্যবস্থাকে ব্যাহত করে। তাই তামাকের এসব ক্ষতি থেকে জনস্বাস্থ্য রক্ষায় উদ্যোগ গ্রহণের বিকল্প নেই। সঙ্গত কারণেই জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় দ্রম্নত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের যে পরামর্শ দিয়েছেন তামাকবিরোধী নেতারা, তা বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
প্রসঙ্গত, ভার্চুয়াল বৈঠকে জানানো হয়, ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান রেখে পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতি থেকে অধূমপায়ীদের সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব নয়। কাজেই বিদ্যমান আইনে ‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত এলাকা’ রাখার বিধান বাতিল করতে হবে। থাইল্যান্ড, নেপাল, তুরস্ক, যুক্তরাজ্যসহ ৬৭টি দেশ পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতি কমাতে শতভাগ ধূমপানমুক্ত আইন বাস্তবায়ন করেছে এমনটিও আলোচনায় আসে। এছাড়া বর্তমান আইনে বিক্রয়স্থলে তামাকজাত দ্রব্য প্রদর্শনে নিষেধাজ্ঞা না থাকায় তরুণ ও শিশুদের আকৃষ্ট করতে বিক্রয়স্থলের দৃশ্যমান স্থানে তামাক পণ্যের প্যাকেট সাজিয়ে রাখা হচ্ছে- আর এমন প্রসঙ্গে তরুণদের সুরক্ষায় সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াসহ ৫০টি দেশ বিক্রয়স্থলে তামাকজাত দ্রব্যের প্রদর্শন নিষিদ্ধ করার বিষয়টি তুলে ধরা হয়; বলা হয়, বাংলাদেশেরও উচিত হবে- বিক্রয়স্থলে তামাক পণ্যে প্যাকেট প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা। এছাড়া বর্তমানে তরুণদের মধ্যে ই-সিগারেট ও ভ্যাপিং পণ্যের ব্যবহার আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। ভারতসহ কমপক্ষে ৩২টি দেশ ইতোমধ্যে এসব পণ্য বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের খসড়া সংশোধনীটি দ্রম্নত পাস করার মাধ্যমে ই-সিগারেট ও ভ্যাপিং পণ্য নিষিদ্ধ করার বিষয়ও আলোচনায় আসে। আমরা মনে করি, সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করা।
বলা দরকার, তামাকের ক্ষতিকর দিক কিংবা এর কুপ্রভাবের কথা কমবেশি সবারই জানা। এছাড়া আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে ‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ’ গড়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। এর সুষ্ঠু বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। যদিও এটাও বলা দরকার, তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়া এত সহজ নয়। অন্যদিকে, আইন না মানার প্রবণতাও বাংলাদেশের মানুষের রয়েছে। ফলে সবার আগে মানসিকতার পরিবর্তন জরুরি। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় সরকারের পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি এর সুষ্ঠু বাস্তবায়নও নিশ্চিত করতে হবে।
প্রসঙ্গত, ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচি সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ, খুচরা বা খোলা তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ এবং তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট বা মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করার দাবি জানানো হয়। এছাড়া ই-সিগারেট তামাকের মতোই ক্ষতিকর। তরুণদের সুরক্ষায় ই-সিগারেটসহ সব ধরনের ভ্যাপিং পণ্য নিষিদ্ধ করার বিষয়টি সামনে আসে যা আমলে নিতে হবে। একইসঙ্গে আইন শক্তিশালী করার পাশাপাশি তামাকের ভয়াবহতা কমাতে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন পরিচালনা করার বিষয়টিও এড়ানো যাবে না।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, তামাকজনিত নানা রোগে দেশে প্রতিদিন গড়ে ৪৪২ জন মানুষ মারা যায়- এটাকে সহজ করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। অন্যদিকে আইন সংশোধন যত দেরি হবে তামাকজনিত মৃত্যু ততই বাড়তে থাকবে এমন আশঙ্কাকেও এড়ানো যাবে না। ফলে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় দ্রম্নত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের যে পরামর্শ, তা আমলে নেওয়ার পাশাশি সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টরা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে এমনটি কাম্য।