সিন্টু রঞ্জন চন্দ
সিলেটে টানা লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। গত সপ্তাহখানে ধরে যেমন তীব্র গরম তেমনি বেড়েছে ঘন্টার পর ঘন্টা বিদ্যুতের লোডশেডিং। এতে জনজীবন যেমন অতিষ্ট হয়ে পড়েছে তেমনি ব্যবসা-বাণিজ্য, অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ঘরের কাজ কর্মেও ঘটছে বিঘœতা।
এদিকে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে অস্বস্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। হঠাৎ করে কোনো ঘোষণা ছাড়াই লোডশেডিংয়ের কারণে গ্রাহকরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
গ্রাহকদের অভিযোগ, লোডশেডিংয়ের বিষয়ে উদাসীন স্থানীয় বিদ্যুৎ কর্মকর্তারা। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা বিদ্যুৎ মিলছে না। এক ঘন্টা লোডশেডিং পরে বিদ্যুতের দেখা পাওয়া যায় মাত্র আধা বা পৌনে এক ঘন্টা। এমন অবস্থায় হাঁপিয়ে উঠছে গ্রাহকদের জনজীবন। এই গরমে এতো লম্বা এবং ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণ জানতে সিলেট বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ (বিউবো) এক, দুই ও তিনে একাধিকবার মুঠোফোনে কল দিলেও সাড়া পায় না গ্রাহকরা।
এছাড়া তীব্র তাপমাত্রায় দিশেহারা হয়ে পড়ছেন অসুস্ত, বৃদ্ধ ও শিশুরাও। আক্রান্ত হচ্ছেন নানা রোগে। ফলে স্থানীয় হাসপাতালসহ চিকিৎসা কেন্দ্রে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি ভিড় বাড়ছে রোগীদের। সব মিলিয়ে প্রচন্ড গরম ও লোডশেডিংয়ে উপজেলার সর্বত্রই জনজীবনে নেমে এসেছে চরম অস্বস্তি ও দুঃসহ যাতনা। এই নিয়ে স্থানীয়দের মনে ক্ষোভের সুষ্টি হয়েছে। এদিকে, ঘন্টার পর ঘন্টা লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে অনেক স্থানে বিদ্যুৎ গ্রাহকরা রাস্তায় নামার খবর পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, একদিকে যেমন বিদ্যুতের লোডশেডিং অন্যদিকে সাপ্তাহ খানেক থেকে বৃদ্ধি পেয়েছে তাপমাত্র। এর মধ্যে প্রতিদিন ৮ থেকে ৯ বার লোডশেডিং করা হচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে, সিলেটে লোডশেডিং শিডিউল না থাকায় প্রত্যন্ত অঞ্চলেও এক টানা ৬ থেকে ৭ ঘন্টা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ছেন গ্রহকরা। এছাড়া, ঘনঘন লোডশেডিংয়ে ব্যবসায়ীদেরও লোকশান গুনতে হচ্ছে বলেও অভিযোগ করছেন ব্যবসায়ীরা।
সিলেট নগরীর লালদিঘীরপাড়ের মুদ্রণ ব্যবসায়ী জানান, লোডশেডিং বৃদ্ধিতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধের উপক্রম হয়েছে। দৈনিক ৮ থেকে ৯ বার লোডশেডিং হচ্ছে। আমরা কোন কাজ করতে পারছি না। সিলেট নগরীর কালিঘাটের ব্যবসায়ী ইকবাল হোসেন বলেন, ২৪ ঘন্টার মধ্যে মাত্র ৪-৫ ঘন্টা বিদ্যুত পাওয়া যায়। বিদ্যুৎ বিভ্রাট যেন স্বাভাবিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে সারা রাত লোডশেডিং হচ্ছে। সিলেটে মনগড়া ভাবে লোডশেডিং করে গ্রাহকদের উসকিয়ে দিয়েছেন বিউবোর সংশ্লিষ্টরা। অনতিলম্বে লোডশেডিং যন্ত্রনা নিরসন না হলে ব্যবসায়ীরা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করতে বাধ্য হবে। বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের ভয়াবহতা স্বীকার করে সিলেট বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ (বিউবো) ৩ এর নির্বাহী প্রকৌশলী শ্যামল চন্দ্র তালুকদার বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হওয়ায় গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। সিলেট বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ- (বিউবো) ৩ এর মধ্যে গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী ২৫ মেগাওয়ার্ড বিদ্যুৎ দরকার সেখানে আমার এলাকায় বিদ্যুৎ পাচ্ছি মাত্র ১২ থেকে ১৩ মেগাওয়ার্ড। এতে এক ঘন্টা করে অর্ধেক সাইটে বিদ্যুৎ সরবরাহ দেওয়া হয় আবার ওই সাইট বন্ধ করে আবার আরো এক ঘন্টা অন্য সাইটে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়ে থাকে। কবেনাখাত এধরণের লোডশেডিং থেকে গ্রাহকরা রেহাই পাবে এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, উপরমহল ছাড়া আমি বলতে পারব না। আমি নিজেই লোডশেডিংয়ের কারণে রাতে ঘুমাতে পারি না।
সিলেট বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ- (বিউবো) ২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী শামছ-ই-আরেফিন বলেন, সিলেট বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ- (বিউবো) ২ এর মধ্যে ৬৩ হাজার গ্রাহক রয়েছে। এই গ্রাহকদের নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হলে ৩৫ মেগাওয়ার্ড বিদ্যুৎ দরকার সেখানে আমি পাচ্ছি মাত্র ১৮ মেগাওয়ার্ড বিদ্যুৎ। ফলে ২৪ ঘন্টায় গ্রাহকদের ১২ ঘন্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। তাই এক ঘন্টা পর পর বিদ্যুৎ সরবরাহ হওয়ার কারণে লোডশেডিং হচ্ছে। অথার্ৎ ৫০% বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। এ লোডশেডিং কবেনাগাদ সমাধান হবে এ সম্পর্কে তিনি বলেন, এটা কালকেও এ সমস্যা শেষ হয়ে যেতে পারে। তবে আমি এই মুর্হুতে বলতে পারব না।
বর্তমান লোডশেডিংয়ের ব্যাপারে জানতে চাইলে সিলেট বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ- (বিউবো) ১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ ফজলুল করিম এর মুঠোফোনে কল করা হলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। কিছুক্ষণ পর তার বক্তব্য নিতে আবার ফোন কল করা হলে তিনি ফোন কেটে দেন।