বেড়েছে প্রবাসী আয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে

6

 

বাংলাদেশ জনসংখ্যাবহুল দেশ। সঙ্গত কারণেই দেশের জনশক্তিকে জনসম্পদে রূপান্তর করা সার্বিক অগ্রগতির প্রশ্নেই জরুরি। এ প্রসঙ্গে বলা দরকার, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের মানুষ সুনামের সঙ্গে কাজ করছে। এর ফলে, দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক ভ‚মিকা রাখছে প্রবাসী আয়। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাইয়ের প্রথম দুই সপ্তাহে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৯৯ কোটি ৫৫ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার। অর্থাৎ দৈনিক গড়ে দেশে এসেছে ৭ কোটি ১১ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স। রোববার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
উলেস্নখ্য, তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি মাসের ১৪ দিনে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে এসেছে, এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১২ কোটি ৭২ লাখ ৪০ হাজার ডলার, বিশেষায়িত একটি ব্যাংকের মাধ্যমে ৩ কোটি ৯৪ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৮২ কোটি ৫১ লাখ ৬০ হাজার ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৩৬ লাখ ৯০ হাজার মার্কিন ডলার। প্রসঙ্গত, এর আগে গত জুন মাসে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় এসেছিল ২১৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার। এক্ষেত্রে বলা দরকার, এই অর্থ প্রায় তিন বছরের মধ্যে কোনো একটি মাসে দেশে আসা সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় ছিল। তার আগে ২০২০ সালের জুলাইয়ে ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ ডলারের সর্বোচ্চ প্রবাসী আয় এসেছিল।
আমরা বলতে চাই, প্রবাসী আয়ের বিষয়টিকে সামনে রেখে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে কার্যকর উদ্যোগ অব্যাহত রাখা। রেমিট্যান্স বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখতে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। কেননা, এটা এড়ানো যাবে না, দেশের অগ্রগতিতে রেমিট্যান্সের উলেস্নখযোগ্য অবদান রয়েছে। এছাড়া রেমিট্যান্স বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে- যা ইতিবাচক। বিশেষ করে বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠাতে বিভিন্নভাবে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক- এমন আলোচনা সামনে এসেছে। আমরা মনে করি, রেমিট্যান্স বাড়াতে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, সেগুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। এছাড়া কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের পাশাপাশি নতুন বাজার এবং দক্ষ জনশক্তির বিষয়টিও আমলে নিতে হবে। প্রবাসে দক্ষ জনশক্তি যত বেশি পাঠানো সম্ভব হবে ততই দেশের সুনাম বাড়বে এবং জনশক্তি রপ্তানিও বৃদ্ধি পাবে বলেই মনে করা সঙ্গত। ফলে সার্বিক বিষয়গুলো আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে।
বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠাতে বিভিন্নভাবে উৎসাহ দেওয়াসহ রেমিট্যান্স বাড়াতে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে প্রবাসী আয়ে ডলারের দাম বাড়ানো, বৈধ উপায়ে ওয়েজ আর্নার্স রেমিট্যান্সের বিপরীতে নগদ প্রণোদনা, রেমিট্যান্স বিতরণ প্রক্রিয়া সম্প্রসারণ ও সহজীকরণ পাশাপাশি অনিবাসী বাংলাদেশিদের জন্য বিনিয়োগ ও গৃহায়ণ অর্থায়ন সুবিধা দেওয়াসহ বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়টি জানা যায়। অন্যদিকে, সর্বশেষ সেবার বিনিময়ে দেশে রেমিট্যান্স আনতে ফরম-’সি’ পূরণ করার শর্ত শিথিল করেছে এবং সেবা খাতের উদ্যোক্তা ও রপ্তানিকারকদের ঘোষণা ছাড়াই ২০ হাজার মার্কিন ডলারে বা সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আনার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। আমরা মনে করি, এসব পদক্ষেপের সুষ্ঠু বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।
সর্বোপরি বলতে চাই, প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স প্রবাহে ইতিবাচক ধারা সৃষ্টি হলে তা আশাপ্রদ। মনে রাখা দরকার, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্যই ইতিবাচক। ফলে প্রবাসী আয়ের বিষয়টিকে সামনে রেখে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি নতুন নতুন শ্রমবাজার খুঁজে বের করা এবং দক্ষ জনশক্তি নিশ্চিত করা আবশ্যক। আর সেই লক্ষ্যে বাড়াতে হবে প্রশিক্ষণের পরিধিও। এছাড়া যেসব দেশে বাংলাদেশি শ্রমিক কর্মরত, তাদের দেখভালের ওপরও গুরুত্ব দিতে হবে। রেমিট্যান্স বাড়াতে গৃহীত উদ্যোগের বাস্তবায়নসহ সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক এমনটি কাম্য।