চুনারুঘাট সংবাদদাতা
চুনারুঘাট উপজেলার সদর ইউনিয়নের গোলগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনে বড় বড় ফাটল। পাঠদানে পর্যাপ্ত আসন না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে সেই ভবনে নিয়মিত ক্লাস করছে শিক্ষার্থীরা। এতে যে কোনো সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিক শাহিনা খাতুন জানান, ভবন পুনর্র্নিমাণের জন্য লিখিতভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানানো হলেও এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। অভিযোগ উঠেছে, দায়িত্বশীলদের অবহেলায় ও তদারকির অভাবে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন মেরামতের অনুমোদন মিলছে না। এ নিয়ে কারও মাথাব্যথাও নেই। ২০২০ সালের আবেদনগুলো কোথায় কী অবস্থায় রয়েছে, জবাব দিতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। সংশ্লিষ্ট দপ্তর জানায়, বরাদ্দ না থাকায় ওই বিদ্যালয়ের ভবনের কাজের অনুমোদন দেওয়া হয়নি। এতে করে হতাশাগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। জানা যায়, উপজেলার সীমান্তবর্তী চুনারুঘাট সদর ইউনিয়নের গোলগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবনসহ ১০টি বিদ্যালয়ের ভবন ঝুঁকিপূর্ণ। প্রশাসনিক জটিলতায় অনুমোদন হয়নি ভবন পুনর্র্নিমাণের কাজ। পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ না থাকায় সেগুলোতেই শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে।
গোলগাঁও প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘুরে দেখা যায়, এখানে ভবন আছে দুটি। ভবনের মধ্যে অধিকতর পুরোনো একাডেমিক ভবনটি জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ। খসে পড়ছে ছাদের পলেস্তারা, ভবনের ছাদে দেখা দিয়েছে ফাটল। বেরিয়ে গেছে রড। সেখানেই ক্লাস করছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। জরাজীর্ণ ভবনে পাঠদানের সময় আতঙ্কে থাকে তারা। এভাবেই চলছে পাঠদান কার্যক্রম। অনেকেই সন্তান পাঠাতে ভয় পান। নতুন শিক্ষার্থী ভর্তিতেও সমস্যা হচ্ছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, ১৯৭২ সালে স্থাপিত এই বিদ্যালয়ের পুরোনো ভবন ভেঙে চার কক্ষবিশিষ্ট একাডেমিক ভবনটি নির্মাণ করা হয় ১৯৯৫ সালে। অপর ভবনটি ২০১০ সালে নির্মিত হয়। ১৯৯৫ সালে নির্মিত ভবনে ত্রæটি দেখা দেওয়ার পর সংস্কারের অভাবে ধীরে ধীরে শ্রেণি কক্ষগুলো জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে। পাঠদান চালু রাখার স্বার্থে ঝুঁকি নিয়েই ভবনের চারটি কক্ষের একটিতে শিশু শ্রেণি, একটিতে দ্বিতীয় ও অপর ভবনে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির পাঠদান চলছে। এর একটি কক্ষে অফিস ও আরেকটি গুদাম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
চার কক্ষবিশিষ্ট একাডেমিক ভবনের চারটি কক্ষের প্রায় সবক’টি কক্ষের দেয়ালে ফাটল ধরেছে। প্রধান শিক্ষক জানান, সম্প্রতি পাঠদান চলাকালে ভবনটির ছাদ থেকে পলেস্তারা খসে পড়ে। কেউ হতাহত না হলেও এ ঘটনায় আতঙ্ক সৃষ্টি হয়।
এক ছাত্রী জানায়, বৃষ্টির সময় ছাদ থেকে পানি পড়ে বই-খাতা ভিজে যায়। ক্লাসের মেঝেতে পানি জমে থাকে। প্রায়ই পলেস্তারা খসে পড়ে। স্কুলে আসতে তাই ভয় হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সংস্কার না করে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে রাখা সম্ভব নয়। যে কোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার অবহিত করা হয়েছে।
ইউএনও সিদ্ধার্থ ভৌমিক জানান, ঝুঁকিপূর্ণ ওই বিদ্যালয় ভবনের মেরামতের জন্য সংস্কার বরাদ্দের জন্য তালিকা পাঠানো হয়েছে। আশা করছি বরাদ্দ পেলে বিদ্যালয় ভবনের সংস্কার কাজ দ্রæত শুরু করা হবে। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) খোরশেদ আলম জানান, গোলগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ঝুঁকিপূর্ণ ১০টি বিদ্যালয় ভবন নতুনভাবে নির্মাণের জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এখনও কোনো বরাদ্দ পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের চুনারুঘাট উপজেলা প্রকৌশলী দীপক কুমার দাশ জানান, ২০২০ সালে গোলগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ১৫টি ঝুঁকিপূর্ণ স্কুলের মাটি পরীক্ষার রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। দ্রæত ভবন নির্মাণ ও সংস্কার কাজের অনুমোদন দেওয়া হবে।
সিলেট বিভাগীয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সিলেট বিভাগের ২০২০ সালে দুই শতাধিক ঝুঁকিপূর্ণ স্কুলের আবেদন জমা পড়েছে। প্রশাসনিক জটিলতায় কাজের অনুমোদন হয়নি।