চিনি ও ভোজ্যতেলের বাজার নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ জরুরি

5

 

বিভিন্ন ধরনের অজুহাত সামনে রেখে বাজার অস্থির হওয়ার বিষয়টি যেমন নতুন নয়; তেমনি কারসাজিসহ নানা কারণেই নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির বিষয় বারবারই আলোচনায় আসে। অথচ নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে নিম্ন আয়ের মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েন। প্রসঙ্গত, বলা দরকার, ব্যবসায়ীদের পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার থেকেই বাজারে কার্যকর হয়েছে চিনির নতুন দাম। জানা যায়, রাজধানীর বাজারভেদে প্রতি কেজি খোলা চিনি বিক্রি হয়েছে ১৫০ টাকার ওপরে। যা সরকার নির্ধারিত দামের থেকে ৩০ টাকা এবং ব্যবসায়ীদের ঘোষিত দামের থেকেও ১০ টাকা বেশি! এছাড়া বাজারে সরবরাহ সংকটে নতুন দামে মিলছে না ভোজ্যতেলও। আমরা মনে করি, সৃষ্ট পরিস্থিতি আমলে নিয়ে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি।
বলা দরকার, চিনির দাম নির্ধারণে ট্যারিফ কমিশনের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা না করেই গত সোমবার নতুন দাম কার্যকরের ঘোষণা দেয় সুগার রিফাইনার অ্যাসোসিয়েশন। এ ক্ষেত্রে উল্লেখ্য, কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে ব্যবসায়ীরা এই দাম বাড়িয়েছেন। ফলে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে এভাবে দাম বাড়ানোর বিষয়টিকে এড়ানো যাবে না। এ ক্ষেত্রে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি।
উল্লেখ্য, বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, চিনির দাম নিয়ে ঈদের আগে কোনো আলোচনা হবে না। যেহেতু আমদানি ব্যয় বেড়েছে, ঈদের পর সে অনুযায়ী দেশের বাজারে দাম সমন্বয় করা হবে। এছাড়া নির্ধারিত মূল্যে চিনি বিক্রি হচ্ছে কিনা তা তদারকির জন্য ভোক্তা অধিকারকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। আমরা মনে করি, এই নির্দেশনার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
বলা দরকার, এমন বিষয়ও সামনে আসছে যে, চিনির পাশাপাশি বাজারে হঠাৎ সরবরাহ সংকট দেখা দিয়েছে বোতলজাত সয়াবিনের। রাজধানীর বেশির ভাগ দোকানেই মিলছে না নতুন দামে ১ ও ২ লিটারে বোতলজাত সয়াবিন- এমনটি খবরে উঠে এসেছে। জানা যায়, কিছু কিছু দোকানে নতুন দামে ৫ লিটারের বোতল বিক্রি হলেও এখনো বেশিরভাগ দোকানে আগের দরে বিক্রি হচ্ছে ১, ২ ও ৫ লিটারের তেল। এছাড়া বিক্রেতারা জানিয়েছেন, এ সপ্তাহের শুরুতে অর্থাৎ গত শুক্রবারে নতুন দামে তেলের সরবরাহ শুরু হলেও পরে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে গত সোমবার থেকেই ১ ও ২ লিটারের কোনো তেল বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে আগের রেটে অর্থাৎ ১৯৯ টাকা দামে ১ লিটারের বোতল বিক্রি হতে দেখা গেছে বলে জানা যাচ্ছে। খুচরা বিক্রেতারা এমনও বলছেন- সাধারণত ঈদসহ দেশের প্রধান প্রধান উৎসবে চিনির চাহিদা স্বাভাবিকের চেয়ে ৩-৪ গুণ বেড়ে যায়। ফলে এ সময় পণ্যটির বিক্রি বাড়ে। মূলত ঈদের এই চাহিদাকে পুঁজি করে বাড়তি মুনাফা হাতিয়ে নিতে একটি চক্র বাজার অস্থিতিশীল করছে বলে জানান। ফলে এই বিষয়গুলো আমলে নিয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করা অপরিহার্য।
আমরা বলতে চাই, সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে সামগ্রিক উদ্যোগ গ্রহণ ও যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করা। নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে পণ্য বিক্রি হলে সেটা কঠোরভাবে রোধ করতে হবে। সাধারণ ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই মুহ‚র্তে আগের তেলের দামই কার্যকর হচ্ছে না। তার মধ্যে আবার দাম কমানো হলে বাজারে কোনো তেল পাওয়া যাবে না। মূলত ঈদকে ঘিরে বাজারে তেল ও চিনির সংকট চরমে ঠেকেছে বলেও জানান তারা। আমরা মনে করি, এই বিষয়গুলো এড়ানো যাবে না। অন্যদিকে বাজার নিয়ন্ত্রণে ভোক্তা অধিকারকে নির্দেশ দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী- এর সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই।
সর্বোপরি বলতে চাই, খোলা চিনি সরকার নির্ধারিত দামের থেকে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে এবং বাজারে সরবরাহ সংকটে নতুন দামে মিলছে না ভোজ্যতেল- এটি আমলে নিন। একইসঙ্গে বাজার নিয়ন্ত্রণে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিশ্চিত করুন। কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়েছেন এটিও এড়ানো যাবে না। মনে রাখা দরকার, অযৌক্তিকভাবে দাম বৃদ্ধি কিংবা নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হলে তা সাধারণ মানুষের ওপর কতটা প্রভাব ফেলে। সঙ্গত কারণেই সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে দ্রæত কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি প্রত্যাশিত।