স্টাফ রিপোর্টার
স্ত্রী সেফালী বেগম সুপীর আত্মহত্যার জন্য শ্বশুরবাড়িরর লোকজনকে দায়ী করলেন গোলাপগঞ্জের ঢাকা দক্ষিণ সুনামপুরের বাসিন্দা কামরুল হাসান। তার দাবি অসুস্থ সুপীকে ভালো করে দেখভাল করার কথা বলে বাড়ি নিয়ে গিয়ে উল্টো আত্মহত্যায় প্ররোচনা দিয়েছে তার পরিবার। দক্ষিণ সুরমার হবিনন্দি গ্রামে বাবার বাড়িতেই আত্মহত্যা করে পৃথিবী ছাড়েন সুপী। শনিবার (১৭ জুন) সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এমন দাবি করেন কামরুল। তিনি বলেন, তার স্ত্রী ছিলেন সিজোফ্রেনিয়া রোগে আক্রান্ত। যার চিকিৎসা চলছিলো। শ্বশুড় বাড়ির লোকজন একজন সিজোফ্রেনিয়া রোগীকে দেখে রাখতে পারেনি। তার এই আত্মহত্যার জন্য নিজেরা ফেঁসে যাচ্ছেন দেখে উল্টো স্বামী কামরুল ও তার পরিবারের সদস্যদের মামলা দিয়ে হয়রানী করছেন সুপীর ভাই ও স্বজনরা।
লিখিত বক্তব্যে কামরুল হাসান বলেন, সুপী যখন আত্মহত্যা করেন এর দুই মাস আগ থেকে বাবার বাড়িতেই অবস্থান করছিলেন। বরং তাদের দায়িত্বহীনতায় আমি আমার স্ত্রীকে হারিয়েছি। ওর সাথে কখনো আমার কোন মনোমালিন্য ছিলো না। আমার স্ত্রী সুপী সিজোফ্রেনিয়া রোগে আক্রান্ত ছিলেন। তার সাথে সংশ্লিষ্ট অন্তত ১৩টি রোগ তার শরীরে বিদ্যমান ছিলো। যার জন্য আমাদের বাড়ি সিলেট শহর থেকে ২০/২৫ কিলোমিটার দূরবর্তী হওয়ায় চিকিৎসার সুবিধার্থে ও তার বাবার বাড়ির লোকজনের ইচ্ছেতেই সে তাদের বাড়িতে ছিলো। যেখানে থেকে হাসপাতালে নিয়ে আসা করতে সহজ হতো। এবং সর্বশেষ মৃত্যুর ৪ দিন আগে আমি নিজে তাদের বাড়ি থেকে সুপীকে নিয়ে এসে নগরীর আল হারামাইন হাসপাতালে ডাক্তার দেখাই এবং ডাক্তার বিভিন্ন টেস্ট দেন, যার রিপোর্ট পাওয়ার আগেই সুপী এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যায়।
কামরুল হাসান দাবি করেন, সুপী তার স্ত্রীর বাইরেও আপন খালাতো বোন ছিলো। ২০২১ সালের ৪ এপ্রিল বিয়ের পর থেকে তাদের সংসার ভালোই চলছিলো। সুখে ভরপুর ছিলো আমাদের দাম্পত্য জীবন। বিয়ের পর থেকে নানা রোগের লক্ষণ তার মধ্যে ধরা পড়ে। বিশেষ করে দুইবার সন্তান সম্ভাবা হলেও হরমোনজনিত সমস্যা থাকায় দুইবারই বাচ্ছা নষ্ট হয়ে যায়। এতে সে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে। এর সাথে সাথে মানসিক সমস্যা বাড়তে থাকে। এরপর পর্যায়ক্রমে গাইনি চিকিৎসকরা মানসিক ডাক্তারের কাছে রেফার্ড করেন। একপর্যায়ে নিশ্চিত হওয়া যায়, সে সিজোফ্রেনিয়া রোগে আক্রান্ত এবং এর চিকিৎসা চলছিলো। সুপী মানসিক অসুস্থতায় বার বারই আত্মহত্যা করতে চান। আমাদের পরিবারের সদস্যরা তাকে চোখে চোখে রাখতেন। এরপর তার মা ও ভাই বোনরা তাকে আরো ভালোভাবে দেখাশোনা করে রাখবেন এমন প্রতিশ্রæতি দিয়ে সুপীকে বাড়ি নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু তারা সুপীকে ভালো করে দেখে রাখাতো দূরের কথা সুপীকে আত্মহত্যার পরিবেশ করে দিয়েছে। এখন উল্টো সুপীর ভাই পারভেজ আহমদ বাদী হয়ে মামলা দিয়ে আমাদের হয়রানী করছেন।
কামরুল হাসান লিখিত বক্তব্যে আরো বলেন, সুপীর আত্মহত্যার খবর পেয়ে তিনি মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েন। বাড়ি হাসপাতাল দাফন কাফন সবখানে তিনি ও তার স্বজনার অংশনেন। দাফন কাফনের পর হঠাৎ করে আমার শশুড়বাড়ির লোকজনের কথা বার্তা বদলাতে থাকেন। এমনকি মোগলাবাজার থানায় কামরুলসহ তার ও বোনের সাথে পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
কামরুল দাবি করেন এই মামলার পিছনে লেনদেনের রহস্য লুকিয়ে আছে। প্রকৃত সত্য হচ্ছে সুপীর পরিবারের সদস্যদের কাছে অন্তত ১০ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে তাদের। তারা ঘর বানাতে এবং সুপীর দুই ভাই বিয়ে করে লন্ডন ও জার্মান যেতে ওই টাকাগুলো ঋন নেন। মুলত ওই টাকা ফেরত না দিতে বোনের মৃত্যুকে পুজি করে মিথ্যা মামলার আশ্রয় নেন। কামরুল বলেন, ‘যেখানে আমার স্ত্রীকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেয়ার জন্য আমিই তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়ার কথা, তারা উল্টো আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানী করছেন।’
কামরুল আরো দাবি করেন সুপীর বাবার বাড়ির পরিবারে পারিবারিক অশান্তি রয়েছে। সুপী সেখানে গিয়ে চরম অশান্তিতে ছিলো। ওর মৃত্যুর পর স্বজনদের মাধ্যমে তা নিশ্চিত হন। তারাই সুপীর আত্মহত্যার পরিবেশ করে দিয়েছন।
লিখিত বক্তব্যে আরো উল্লেখ করা হয়, সুপীর বাবার বাড়ির লোকজন প্রভাবশালী। তারা নানা ভাবে কামরুলদের ক্ষতি করার চেষ্টা করছেন। গত ১০ জুন প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে মিথ্যাচার করছেন। প্রাণে হত্যারও কুমকী দিচ্ছেন বলে কামরুল দাবি করেন। কামরুল সাংবাদিকদের অনুসন্ধান চালিয়ে প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের দাবি জানান এবং সংবাদ সম্মেলনের মিথ্যাচারের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।