মা ও শিশুর পাশাপাশি প্রান্তিক জনপদের সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় নীরব বিপ্লব ঘটিয়েছে কমিউনিটি ক্লিনিক। তার স্বীকৃতিস্বরূপ জাতিসংঘে ‘কমিউনিটি ক্লিনিক : দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ রেজ্যুলেশন আকারে গৃহীত হয়েছে। ‘কমিউনিটিভিত্তিক প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা : সর্বজনীন স্বাস্থ্য পরিষেবা অর্জনের লক্ষ্যে একটি অংশগ্রহণমূলক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক পদ্ধতি’ শিরোনামের ঐতিহাসিক রেজ্যুলেশনটি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বে বাংলাদেশে কমিউনিটি ক্লিনিকভিত্তিক মডেল প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসামান্য উদ্ভাবনী নেতৃত্বকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিয়েছে। গত ১৬ মে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে এটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। দেশের নাগরিক হিসেবে আমরা আনন্দিত ও গর্বিত। কমিউনিটি ক্লিনিকের বৈশ্বিক স্বীকৃতিতে গত বৃহস্পতিবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীও সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। দীর্ঘকাল ধরে চলমান স্বাস্থ্যব্যবস্থা অনেকটা শহরকেন্দ্রিক হওয়ায় অপেক্ষাকৃত সচ্ছল বা ধনীদের মতো প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র বা হতদরিদ্র মানুষদের স্বাস্থ্যসেবার নিশ্চয়তা ছিল না। ১৯৯৬ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের দুস্থ জনগণের জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্প গ্রহণ করেন এবং ১৯৯৮ সালে কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করার পদক্ষেপ নেন, যার মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষের দোরগোড়ায় আরাধ্য স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছানোর সরকারি উদ্যোগ বাস্তবায়িত হয়। এখন দেশের প্রত্যন্ত এলাকার প্রতি ৬ হাজার মানুষের জন্য একটি কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবা কার্যক্রম চালু আছে। বর্তমানে প্রায় ১৮ হাজার ৫০০ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে দেশব্যাপী বিস্তৃত স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। কমিউনিটি ক্লিনিকের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো- এটি সরকার ও জনগণের সম্মিলিত অংশীদারত্বের একটি সফল কার্যক্রম, যার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখা এবং স্থায়িত্বের লক্ষ্যে সরকার ‘কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট আইন’ পাস করেছে। কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে সারাদেশের প্রান্তিক জনগণের স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা ও পুষ্টি সেবাসহ বিনামূল্যে ৩০ ধরনের ওষুধ ও স্বাস্থ্যসেবা সামগ্রী প্রদান করা হচ্ছে। বর্তমান অর্থবছরে ওষুধ ও স্বাস্থ্যসেবা সামগ্রী বাবদ বার্ষিক বরাদ্দ বৃদ্ধি করে ২৪১ কোটি থেকে ২৫০ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। ইপিআই প্রোগ্রামের মাধ্যমে শিশুদের টিকা ও ভিটামিন-এ দেয়ার কার্যক্রম ছাড়াও বিষয়ভিত্তিক পরামর্শ, যেমন পুষ্টির জন্য বা পরিবার পরিকল্পনার জন্য আলাদা ব্যবস্থা রয়েছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ধাত্রীরা ক্লিনিকগুলোর মাধ্যমে গর্ভবতী মায়েদের প্রসবের পরিষেবা সরবরাহ করায় ক্লিনিকগুলো মাতৃ ও শিশুমৃত্যুর হার হ্রাসে সরাসরি অবদান রাখছে। মানুষ যখন ডায়রিয়া, কাশি ও সর্দিতে আক্রান্ত হয়, তখন তারা ক্লিনিকগুলোর ওপর আস্থা রাখছে। নিঃসন্দেহে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো তৃণমূল পর্যায়ের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির সুযোগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে স্বাস্থ্যসেবা কাঠামোর আওতার বাইরে থাকা দরিদ্র, দুস্থ ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে স্বাস্থ্যসেবার অধিকারের অন্তর্ভুক্ত করতে সক্ষম হয়েছে, যা কমিউনিটি ক্লিনিকের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সাফল্য। তবে কিছু সংকট ও সমস্যাকে চিহ্নিত করে ইতোমধ্যে সংবাদও প্রকাশিত হচ্ছে। যা কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবার সুফল ও কার্যকারিতাকে বাধাগ্রস্ত করছে। এ বিষয়গুলোর ওপর এখন বাড়তি নজরদারি করতে হবে। জরাজীর্ণ স্থাপনা, বিকল যন্ত্রপাতি, অপর্যাপ্ত ওষুধ, অদক্ষ জনবলের হাতে গুরুত্বপূর্ণ সব ওষুধ তুলে দেয়ার ফলে মাঠপর্যায়ে বিনামূল্যের স্বাস্থ্যসেবা কতটা নিরাপদ তা নিয়ে সংশয় দিন দিন বাড়ছে। আমরা আশা করছি, সব বাধা দূর করে সচল থাকবে দেশের সব কমিউনিটি ক্লিনিক।