স্টাফ রিপোর্টার
সিলেটের বিয়ানীবাজার এলাকায় অন্যকে ফাঁসাতে নিজ পুত্র ফাহিমকে (৮) হত্যার দায়েরকৃত মামলায় এক পিতাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার দুপুরে সিলেটের দ্রæত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মোঃ শাহাদৎ হোসেন প্রামানিক এ রায় ঘোষনা করেন। রায় ঘোষনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ওই আদালতের বেঞ্চ সহকারী মোঃ জয়নাল আবেদীন।
দন্ডপ্রাপ্ত আসামীর নাম- মোঃ নুর উদ্দিন (৪২)। তিনি নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা থানার সারারকোনা গ্রামের মৃত সোনাহর খাঁর পুত্র। বর্তমানে তিনি সিলেটের বিয়ানীবাজার কোনাগ্রামের আনোয়ার হোসেন মিফতার ভাড়াটে। রায় ঘোষনার সময় দন্ডপ্রাপ্ত আসামী নুর উদ্দিন আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।
আদালত ও মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ১ ডিসেম্বর দুপুর ১ টার দিকে নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা থানার সারারকোনা গ্রামের মোঃ আল আমিনের স্ত্রী বর্তমানে সিলেটের বিয়ানীবাজার কোনাগ্রামের আনোয়ার হোসেন মিফতার ভাড়াটে লুৎফা বেগমের সাথে একই বাসার ভাড়াটে মোঃ নুর উদ্দিনের পুত্র ফাহিমের সাথে ঝগড়া-বিবাদ হয়। এ ঝগড়া বিবাদের এক পর্যায়ে ফাহিম তার হাতে থাকা লাঠি দিয়ে লুৎফা বেগমের হাতে একটি আঘাত করে। এ নিয়ে ওইদিন রাত ৮ টার দিকে বিয়ানীবাজার মুড়িয়া ইউনিয়ন অফিস বাজারে বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় ভাবে বিচার শালিস হয়। এ বিচার শালিসে মোঃ নুর উদ্দিন মোঃ আল আমিনের হাতে-পায়ে ধরে মাফ চান। পরদিন ২ ডিসেম্বর সকাল ৭ টার দিকে নুর উদ্দিন তার ছেলে ফাহিমকে সাথে নিয়ে ধান কাটার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হন। পরে নুর উদ্দিন আল আমিনকে ফাঁসাতে নিজ পুত্র ফাহিমকে কোনাগ্রামস্থ নাসির হোসেনের নির্মাণাধীন একচালা টিনের ছাপড়া ঘরের নিয়ে যান। সেখানে চালের কাঠের রোয়ার সাথে রশি দিয়ে ফাহিমের গলায় ফাঁস লাগিয়ে নিজ পুত্র ফাহিমকে নির্মমভাবে হত্যা করেন নুর উদ্দিন। সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে স্থানীয় লোকজন ওই ঘরে ফাহিমের ঝুলন্ত লাশ দেখতে পেয়ে তারা পুলিশকে খবর দেন। পরে বিয়ানীবাজার থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ফাহিমের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সিলেট ওসমানী হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে। এ সময় পুলিশ নুর উদ্দিনকে আটক করে জিজ্ঞাসবাদ করলে সে আল আমিনকে ফাঁসাতে নিজ পুত্রকে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করে। এ ঘটনায় নিহত ফাহিমের মা মোছাঃ জেসমিন বেগম বাদি হয়ে একমাত্র স্বামীকে আসামী করে বিয়ানীবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার নং- ২ (০২-১২-২০১৬)।
দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০১৭ সালের ১১ মার্চ বিয়ানীবাজার থানার সাব-ইন্সপেক্টর (নিঃ) একমাত্র নুর উদ্দিনকে অভিযুক্ত করে আদালতে (অভিযোগপত্র নং-২৮) চার্জশিট দাখিল করেন এবং ২০২১ সালের ৫ জানুয়ারী আদালত সংশোধীত চার্জগঠন (অভিযোগগঠন) করে এ মামলার বিচারকার্য্য শুরু করেন। দীর্ঘ শুনানী ও ১২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত আসামী মোঃ নুর উদ্দিনকে ১৮৬০ সালের পেনাল কোড এর ৩০২ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে তাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ৩ মাসের বিনাশ্রমে কারাদন্ডে দন্ডিত করেন।
রায়ের বরাত দিয়ে সিলেটের দ্রæত বিচার ট্রাইব্যুনালের বেঞ্চ সহকারী মোঃ জয়নাল আবেদীন বলেন, সাজাপ্রাপ্ত মোঃ নুর উদ্দিনের ৩টি কন্যা সন্তান ও ১টি পুত্র সন্তান রয়েছে। আসামী নুর উদ্দিন কোন অভাস্যগত অপরাধী নয়। তাই তার বিরুদ্ধে পূর্বের কোন মামলা নেই এবং ঘটনার দিন হতে অদ্য পর্যন্ত সে সাড়ে ৬ বছর জেল হাজতে আটক রয়েছে বিবেচনায় আসামী মোঃ নুর উদ্দিনকে ফাঁসি (মৃত্যুদন্ড) না দিয়ে তাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডাদেশ প্রদান করা হলো।
রাষ্ট্রপক্ষে স্পেশাল পিপি অ্যাডভোকেট সরওয়ার আহমদ চৌধুরী আবদাল ও আসামীপক্ষে অ্যাডভোকেট মোঃ কাওছার হোসেন মামলাটি পরিচালনা করেন।