মৌলভীবাজার প্রতিনিধি
নিখোঁজ হওয়ার পর বাড়ি থেকে ৫০০ গজ পশ্চিমে একটি ধানক্ষেত থেকে চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী মাহিন হোসেনের (১০) গলা, মুখ, হাত ও কান কাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়। বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) রাত ৮টার দিকে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয় মাহিন। পরদিন শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) পাওয়া যায় তার মরদেহ। মরদেহের পাশেই পড়ে ছিল হত্যায় ব্যবহৃত দা।
শনিবার সকালে মাহিনের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মৌলভীবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মাহিনকে দেখতে শত শত মানুষ তাদের বাড়িতে ভিড় জমায়। অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়ে, পুরো এলাকায় শোকাবহ পরিবেশের সৃষ্টি হয়। ছেলেকে হারিয়ে শোকে স্তব্ধ পরিবার। নিহতের মা মাহমুদা বেগম বিলাপ করে কাঁদছেন আর বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে উত্তর সাইটুলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী সুরাইয়া (নিহতের বোন) বলে, ‘আমার ১০ বছরের নিষ্পাপ ভাইরে যারা গলা কেটে মারছে তারার বিচার আল্লায় করব। আমার ভাই কোনো দোষ (অপরাধ) করছে না। তাইলে কেনে তারে মারল? আমি অহন ভাই কইয়া (বলে) ডাকমু কারে? কে আমারে স্কুলে লইয়া যাইব? কার কাছে কইমু ভাই মজা খাইতাম?’
নিহতের মা মাহমুদা বেগম বলেন, ‘মাহিন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আমার চাচাশ্বশুর (মাহিনের দাদা) জনাই মিয়ার বাড়িতে যায়। সেখানে গিয়ে তাকে ডেকে আনার চেষ্টা করি। এ সময় মাহিন জানায় সে তারাবি নামাজ পড়তে যাবে। ফলে আমি বাড়ি ফিরে আসি। রাতে সে বাড়িতে না এলে চারদিকে খোঁজ করি। সারারাত খোঁজ করেও তাকে পাইনি। পরদিন সব জায়গায় তার খোঁজ করা হয় ও এলাকায় মাইকিং করা হয়। বিকেলে আমার জাদুর লাশ পেয়েছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের সাথে জমি নিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ চাচাশ্বশুর জনাই মিয়াদের পরিবারের ঝামেলা চলছিল। বিভিন্ন সময়ে জমি নিয়ে বিচার-সালিসও হয়। এ ছাড়া আর কারো সাথে আমাদের কোনো ধরনের শত্রæতা নেই। কে বা কারা আমার ছেলেকে খুন করেছে তা আমরা জানি না। তবে সন্দেহ করছি জনাই মিয়ার পরিবারকে। আমি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ছেলে হত্যাকারীদের দ্রæত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।’
হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগের বিষয়ে জনাই মিয়া বলেন, ‘মাহিনের পরিবারের সঙ্গে আমাদের জমিজমা নিয়ে বিরোধ রয়েছে। তবে হত্যার সঙ্গে আমরা জড়িত নই। মাহিনকে কে বা কারা হত্যা করেছে সে বিষয়েও আমার কিছু জানা নেই।’
শ্রীমঙ্গল থানার ওসি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার বলেন, পুলিশ ইতিমধ্যে ঘটনার রহস্য উন্মোচনে তদন্ত শুরু করেছে। দ্রæত সময়ের মধ্যে এ ঘটনার রহস্য উন্মোচন ও অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে বলে তিনি মনে করেন।
গতকাল শনিবার ইফতারের পর নিজ বাড়িতে শিশু মাহিনের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, নিহতের সহপাঠীসহ শত শত মানুষ অংশ নেয়। পরে তাকে নিজ বাড়িতেই দাফন করা হয়। নিহত মাহিন হোসেন উত্তর সাইটুলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।