দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। সর্বশেষ যে খানা আয়-ব্যয় জরিপ পরিচালিত হয়েছে, তার তথ্যমতে, দেশে দারিদ্র্য হার আরও এক দফা হ্রাস পেয়েছে। কিন্তু একদিকে দারিদ্র্য কমছে, অন্যদিকে দেশের বিভিন্ন স্থানে পথশিশুদের সংখ্যা দৃশ্যমান পর্যায়েই পরিলক্ষিত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে পথশিশুদের সুরক্ষায় প্রয়োজনে বিশেষ প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে পদক্ষেপ নিতে হবে।
‘ঘরে ফিরতে চায় না ৬৪ শতাংশ পথশিশু’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ফিরে যাওয়ার মতো পরিবার নেই ১৫ দশমিক ৯ শতাংশ শিশুর। তারা বাধ্য হয়েই সড়কে অবস্থান করছে। এসব শিশুর দেখভালের কেউ নেই। ফলে তারা নানাভাবে সমাজে নিগ্রহের শিকার হচ্ছে। পাশাপাশি বিভিন্ন নেশার সঙ্গে জড়িত ও নানা অপরাধমূলক কর্মকাÐেও তাদের সম্পৃক্ত হওয়ার মারাত্মক ঝুঁকি রয়েছে। এমনকি তাদের ভেতর থেকে অনেক ক্ষেত্রে বড় সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ তৈরি হওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে। অতীতে অনেক অপরাধীর জীবনবৃত্তান্ত অনুসন্ধান করে জানা গেছে, তারা পথশিশু ছিল। কাজেই সমাজের বৃহত্তর কল্যাণের স্বার্থেই পথশিশুদের উন্নয়নে উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।
বাংলাদেশ সরকার সবার জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে প্রতিশ্রæতিবদ্ধ। ২০১৫ সালে ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টে বাংলাদেশ এমন প্রতিজ্ঞা করেছে। সেই প্রতিজ্ঞা রক্ষা করতে হলে সবার জন্যই উন্নয়ন উদ্যোগ নিতে হবে। এক্ষেত্রে ধনী শ্রেণির ওপর কর বাড়িয়ে রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কল্যাণে কাজে লাগাতে হবে। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো বাংলাদেশে এখনও ধনী শ্রেণি নানাভাবে সরকারি নীতিকাঠামোর মাধ্যমে সুবিধা পেয়ে আসছে। এতে করে বৈষম্য আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। অথচ এসডিজি বাস্তবায়নের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে, সবচেয়ে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কাছে সুযোগ-সুবিধা পৌঁছে দেয়ার মাধ্যমে বৈষম্য হ্রাসকরণ।
এ কথা ভুলে গেলে চলবে না, পথশিশুরা এ সমাজেরই অংশ। কোনো সমাজ পুরোপুরি সুন্দর হতে পারে না, যদি এর সব জনগোষ্ঠীর জন্য ন্যূনতম বেঁচে থাকার সুবিধাদি নিশ্চিত করা না যায়। বাংলাদেশ কল্যাণ রাষ্ট্র নয়। একটি কল্যাণ রাষ্ট্র হওয়ার জন্য নাগরিকদের যে সুযোগ-সুবিধা দিতে হয়, তা নিশ্চিত করার মতো আর্থিক সংগতি এখনো বাংলাদেশের হয়নি। তবে ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশ একটি উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হওয়াল লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে অবশ্যই এসডিজি বাস্তবায়নের প্রধান মিশন ‘সমগ্র সমাজ ব্যবস্থা’ শীর্ষক কর্মপদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। আর সেই ব্যসস্থা নিশ্চিত করতে হলে অবধারিতভাবেই পথশিশুদের জন্য কাজ করতে হবে। বাংলাদেশ একটি উচ্চ আয়ের দেশের অভিলক্ষ্যের দিকে ধাবিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের চরিত্রও ধারণ করে, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। সংশ্লিষ্ট মহল এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।