স্পোর্টস ডেস্ক :
নেইল ওয়াগনার বুঝে গেছেন বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের দুর্বলতা। একের পর এক নিয়মিত শর্ট বল করে গেছেন। আর তাতে উইকেট ছুড়ে দিয়ে এসেছেন বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা। অথচ বাংলাদেশ ব্যাাটসম্যানরা কিভাবে ব্যাটিং করবেন তাই বুঝে উঠতে পারেননি। আর তাতে করে নিউজিল্যান্ডের কাছে আবারও ইনিংস ব্যবধানে হার হয়েছে বাংলাদেশের। এবার ওয়েলিংটনে ইনিংস ও ১২ রানে হার হলো বাংলাদেশের। টানা দুই টেস্ট হেরে তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজ এক ম্যাচ হাতে থাকতেই হারল বাংলাদেশ। শনিবার ক্রাইস্টচার্চে শুরু হতে যাওয়া তৃতীয় ও শেষ টেস্টে হারলে ওয়ানডে’র পর টেস্ট সিরিজেও হোয়াইটওয়াশ হবে বাংলাদেশ।
হ্যামিল্টনে প্রথম টেস্টে ইনিংস ব্যবধানে হার এড়ানো না গেলেও দ্বিতীয় ইনিংসে তাও ভাল করা গেছে। কিন্তু এবার ওয়েলিংটনে দ্বিতীয় টেস্টেতো দুই ইনিংসেই ভরাডুবি হয়েছে বাংলাদেশের। এবারও নিউজিল্যান্ড এক ইনিংসই ব্যাটিং করল। তবে এবারের হারটি অনেক বিব্রতকর হয়েছে। লজ্জার হার হয়েছে। বাংলাদেশ যে সোয়া একদিনের বেশি, চার সেশনের বেশি ব্যাটিংই করতে পারল না। প্রথম ইনিংসে ২১১ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ২০৯ রানের বেশি করতেই পারল না। নিউজিল্যান্ড ৬ উইকেটে ৪৩২ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে। আর দ্বিতীয় ইনিংসে স্বাগতিকদের ব্যাটিংই করতে হলো না।
ওয়েলিংটন টেস্টের প্রথম দুইদিন বৃষ্টিতে ভেসে যায়। একটি বলও মাঠে গড়ায়নি। এমনকি টসও হয়নি। তৃতীয়দিন থেকে খেলা শুরু হয়। নিউজিল্যান্ড টস জিতেই আর দেরি করেনি সবুজ ঘাসে মোড়ানো উইকেটে পেসারদের সুবিধা দিতে ফিল্ডিং নিয়ে নেয়। বাংলাদেশ দুই সেশনের বেশি ব্যাটিংই করতে পারল না। এরপর নিউজিল্যান্ড ব্যাটিংয়ে নামল। দুইবার নতুন জীবন পাওয়া রস টেইলের ২০০, হেনরি নিকোলসের ১০৭ ও কেন উইলিয়ামসনের ৭৪ রানে রানের পাহাড় গড়ে ফেলল। প্রথম ইনিংসেই বাংলাদেশ ২১১ রানে পিছিয়ে পড়ল। চতুর্থদিন দ্বিতীয় সেশনের পর ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠাল নিউজিল্যান্ড। এক সেশন ব্যাটিং করে ৩ উইকেট হারিয়ে ৮০ রান করে দিনটি শেষ করল বাংলাদেশ। তখনও ১৪১ রানে পিছিয়ে ছিল মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের দল। মনে হয়েছিল মোহাম্মদ মিঠুন (২৫*) ও সৌম্য সরকার (১২*) ব্যাটিংয়ে থাকায় নিউজিল্যান্ড থেকে পিছিয়ে থাকা রান অনায়াসেই টপকে যাওয়া যাবে। এরপর যে ব্যাটিংয়ে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও লিটন কুমার দাসও ছিলেন। কিন্তু কি বেহাল দশা হলো। এক সেশনও পুরো ব্যাটিং করতে পারল না বাংলাদেশ। হাতে থাকা ৭ উইকেটই শেষ হয়ে গেল। অলআউট হওয়ার আগে আগেরদিনের সঙ্গে আর ১২৯ রান যোগ করতে পারল বাংলাদেশ। এর মধ্যে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদই (৬৭) শুধু কিছুটা এগিয়ে যেতে পারলেন। শেষদিন ৭ উইকেটের মধ্যে ৫ উইকেটই তুলে নিলেন ওয়াগনার। তার বোলিং যে কতটা বিপজ্জনক তা বোঝা গেল। একের পর এক শর্ট বল করে গেলেন। আর বাংলাদেশ ব্যাটসম্যান সেই বল খেলতে গিয়ে শুধু ফাইন লেগে ক্যাচ আউটের শিকার হলেন। বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের দুর্বলতা কি দারুণভাবেই না বুঝে যান ওয়াগনার। অথচ বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা কিনা ওয়াগনারের ফাঁদেই পা দেন।
চতুর্থদিন শেষে যখন বাংলাদেশ চাপে থাকে তখনই বোঝা হয়ে যায়; ম্যাচ বাঁচানো খুবই কঠিন। কিন্তু তাই বলে ইনিংস হারতো এড়ানোই যেত। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা তাও করতে পারলেন না। তারা সেই টেস্ট আঙ্গিনায় পা রাখার শুরুর ব্যর্থতার চিত্রই আবারও ফুটিয়ে তুললেন। তাতে করে আবারও ইনিংস হার হলো বাংলাদেশের।
ভারপ্রাপ্ত টেস্ট অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ওয়েলিংটন টেস্টে এমন বাজেভাবে হারায় ব্যাটসম্যানদেরই দোষ দেখছেন। তিনি বলেছেন, ‘নতুন বলে যেভাবে শুরু করেছিলাম, তামিম ভাল ব্যাটিং করছিল। প্রথম ইনিংসে সাদমান-তামিমের ভাল শুরু হয়েছিল। প্রথম টেস্টেও তাই হয়েছিল। ইনিংসের মাঝে ওয়াগনার যখন তার ওই বাউন্সার-থিওরি কাজে লাগাতে শুরু করল কিছুক্ষণ ভাল খেলার পর আর পারিনি। আরেকটু সাহস নিয়ে খেলতে হবে। দ্বিধায় থেকে আমরা অনেক ব্যাটসম্যান এই ভুল করেছি। নিবেদিত থাকছি না বা দোমনায় ভুগেছি মারব কি মারব না। এই উইকেটে এটা করা ঠিক না। যদি শট খেলতে চান খেলতে হবে অথবা বাউন্সারের সামনে টিকে থাকতে হবে। পরের টেস্টে এমন উইকেট থাকতে পারে নাও পারে, ক্রাইস্টচার্চের উইকেট একটু গতিময় আছে। একই কন্ডিশন হয়তো পাব। আমাদের ব্যাটসম্যানদের আরও দায়িত্বশীল হতে হবে।