স্টাফ রিপোর্টার
সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় যৌতুক না পেয়ে স্ত্রী সাহানা বেগম উরফে শাহেনা বেগমকে (৩০) এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যার দায়েরকৃত মামলায় স্বামীর ফাঁসি (মৃত্যুদন্ড) দিয়েছেন আদালত। রায়ে পাশাপাশি তাকে ২০ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়। গতকাল বুধবার বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে সিলেটের দ্রæত বিচার ট্রাইব্যুনাল ও বিশেষ দায়রা জজ আদালতের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মো: শাহাদৎ হোসেন প্রামানিক এ রায় ঘোষনা করেন। গতকাল ওই আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো: জয়নাল আবেদীন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামীর নাম- মো: মনির আলী (৩৪)। তিনি দক্ষিণ সুরমা থানার আদিত্যপুর গ্রামের মৃত ওয়াসিদ আলীর পুত্র। রায় ঘোষনার সময় দন্ডপ্রাপ্ত আসামী আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা যায়, ঘটনার ৫ বছর আগে খালাত বোন সাহানা বেগম উরফে শাহেনা বেগমকে ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক বিয়ে করেন মো: মনির আলী। বিয়ের পর প্রথমে তার বাড়িতে স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করতে থাকে মনির আলী। তাদের সংসারে ফাইজা বেগম নামের এক কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। ঘটনার ২ বছর আগে মনির বাড়িতে জায়গা না হওয়ার অজুহাতে দক্ষিণ সুরমা লাউয়াই উদরকবুল শ্বশুড়বাড়ীতে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে বসবাস করতে থাকেন। ঘটনার ২/৩ মাস পূর্বে মনির যৌতুক হিসেবে ৭০ হাজার টাকা স্ত্রীর কাছে দাবী করেন। সাহানা বেগম উরফে শাহেনা বেগম তার পরিবারকে বিষয়টি জানান। পরে তার পরিবার তাকে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ২০ হাজার টাকা দেন। বাকী ৫০ হাজার টাকার জন্য সাহানা বেগম উরফে শাহেনা বেগমকে বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন মনির আলী। ২০১৭ সালের ৫ জুন সকাল বেলা প্রতিদিনের মতো বাড়ির সবাই যার যার কর্মস্তলে চলে গেলে এই সুযোগ মনির আলী ওইদিন দুপুর ২ টার দিকে যৌতুকের টাকা নিয়ে স্ত্রীর সাথে কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে সন্তানের সামনেই দা দিয়ে তার মাথায়, গলায়, বুকে ও কাধে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় নিহত সাহানা বেগম উরফে শাহেনা বেগম এর বড় ভাই মো: পারভেজ আলী বাদি হয়ে দক্ষিণ সুরমা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার নং- ৭ (৫ জুন ২০১৭)।
এর তিনদিন পর ৮ জুন পুলিশ ঘাতক মো: মনির আলীকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করে। একই বছরের ৩১ আগষ্ট দক্ষিণ সুরমা থানার এসআই (নি:) জগৎজ্যোতি দাস একমাত্র মো: মনির আলীকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র নং-১৩২) দাখিল করেন এবং ২০২২ সালের ২৫ মে থেকে আদালত এ মামলার বিচারকার্য্য শুরু করেন। দীর্ঘ শুনানী ও ১২ জন সাক্ষীর মধ্যে ১১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে গতকাল আদালত আসামী মো: মনির আলীকে ১৮৬০ সালের পেনাল কোড এর ৩০২ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে তাকে মৃত্যুদ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করে রায় প্রদান করেন।
রাষ্ট্রপক্ষে স্পেশাল পিপি এডভোকেট সরওয়ার আহমদ চৌধুরী আবদাল ও আসামীপক্ষে এডভোকেট মো: দেলোওয়ার হোসেন শামীম মামলাটি পরিচালনা করেন।