সিন্টু রঞ্জন চন্দ
সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়িস্থ বহুল আলোচিত আতিয়া মহলে জঙ্গিবিরোধী অভিযানের ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দায়ের করা মামলায় ৩ জেএমবি সদস্যকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত। গতকাল বুধবার দুপুরে সিলেটের সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা জজ) মুহাম্মদ নূরুল আমীন বিপ্লব চাঞ্চল্যকর এ রায় ঘোষণা করেন। বেকসুর খালাসপ্রাপ্তরা হচ্ছেন-নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি থানার বাইশারীর নূরুল আলমের পুত্র জহুরুল হক উরফে জসিম (২৯), এই থানার ঘোনাপাড়া (বাইশারী) কড়ালিয়ামুড়ার নূর হোসেনের পুত্র মো: হাসান (২৮) ও জহরুল হক উরফে জসিমের স্ত্রী আর্জিনা উরফে রাজিয়া সুলতানা (২১)। রাষ্ট্রপক্ষের স্পেশাল পিপি এডভোকেট মুমিনুর রহমান টিটু জানান, ২০১৭ সালের ২৪ মার্চ ভোরে আতিয়া মহলে জঙ্গি আস্তানায় অভিযানের সময় উক্ত আসামিরা অন্য একটি মামলায় চট্রগ্রামে কারান্তরীণ ছিলেন। এছাড়া এ ঘটনায় সাথে জড়িত সব জঙ্গি ঘটনাস্থলেই মারা গেছে। তাই সাক্ষ্য প্রমাণে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আসামিদের বেকসুর খালাস দেন বিচারক। রায়ের সময় আসামীপক্ষে কৌশুলী মো: আবুল কালাম উপস্থিত ছিলেন।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ২৩ মার্চ দিবাগত রাত থেকে আতিয়া মহলে জঙ্গিবিরোধী অভিযান শুরু হয়। অভিযানে র্যাব, পুলিশ, পুলিশের বিশেষ ক্রাইম রেসপন্স টিম (সিআরটি), সেনাবাহিনীর কমান্ডো দল অংশ নিয়েছিল। সেনাবাহিনীর পরিচালিত ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’ শেষে ভবনের ভেতর থেকে এক নারীসহ চার জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। অপারেশন শেষ হওয়ার আগে অভিযান চলাকালে আতিয়া মহল থেকে কিছু দূরে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে র্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের তৎকালীন প্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবুল কালাম আজাদ, দুই পুলিশ সদস্যসহ সাতজন নিহত হন। আতিয়া মহলে জঙ্গিবিরোধী অভিযান শেষে তিনটি মামলা হয়। মামলার প্রথম দিকে পুলিশ তদন্ত করলেও পরে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্তভার নেয়। ২০১৯ সালের ৭ সেপ্টেম্বর সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দায়েরকৃত মামলার অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করে পিবিআই। অভিযোগপত্রে তিনজনকে অভিযুক্ত করা হয়। পরে ওই বছরই চট্টগ্রামের সীতাকুÐে পৃথক জঙ্গিবিরোধী অভিযানে জহুরুল ও তার স্ত্রী আর্জিনা এবং কুমিল্লার চান্দিনা থেকে মো. হাসানকে গ্রেফতার করা হয়। পরে ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে তাদেরকে আতিয়া মহলের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।
অন্যদিকে বোমা বিস্ফোরণ ও হত্যার ঘটনায় হওয়া দুটি মামলায় ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই আদালতে চ‚ড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পিবিআই। প্রতিবেদনে মামলা নিষ্পত্তির আবেদন করা হয়েছিল।
আদালত জানায়, আসামী জহুরুল হক উরফে জসিম, মো: হাসান (২৮) ও মোচ্ছা: আর্জিনা উরফে রাজিয়া এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আনীত সন্ত্রাস বিরোধী আইন ২০০৯ (সংশোধনী-২০১৩) এর ৬(২)/৭(৩)/৮/৯/(৩) ধারায় অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় তাদেরকে বেকসুর খালাস প্রদান করা হয়।
