বাস্তবের পথে শাল্লার সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগের স্বপ্ন

14

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

সুনামগঞ্জের সবচেয়ে প্রত্যন্ত উপজেলা শাল্লার সঙ্গে সড়ক পথে সারাদেশের সঙ্গে যোগাযোগের স্বপ্ন এবার বাস্তবের পথে। এক যুগ ধরেই এই সড়ক নির্মাণের দাবি করে আসছিলেন শাল্লার বাসিন্দারা। তিন মাস আগে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয় সিলেট থেকে এই সড়কের দরপত্র আহŸান করা হয়েছিল। দরপত্র প্রতিবেদন মূল্যায়ন শেষে এই মাসের শেষ দিকে অথবা এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
শাল্লার প্রায় দুই লাখ বাসিন্দার স্বপ্ন ছিল সারাদেশের সঙ্গে সড়ক পথে সংযুক্ত হবেন তাঁরা। ২০১১ সালে সড়কের কাজও শুরু হয়েছিল। ২০১৭ সালে শেষ হওয়ার কথা ছিল কাজ। অথচ নির্ধারিত সময়সীমার ছয় বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রæত এ সড়কটির নির্মাণকাজ শেষ হয়নি। এর আগে একবার সড়কের কিছু কাজ হয়েছিল। কিন্তু যান ও জনচলাচলের উপযুক্ত না হওয়ায় এই সড়ক মানুষের কোনো কাজে আসেনি। সড়কের অনেক অংশ হাওরের আফালের ঢেউয়ে বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমান সরকারের সময়কালে এ সড়কের কাজ শুরু হবে কিনা- এই নিয়েও দুশ্চিন্তা ছিল স্থানীয়দের মধ্যে।
২০১০ সালে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের জনসভায় শাল্লাবাসীর বহুদিনের দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করে এই সড়ক নির্মাণের আশ্বাস দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১১ সালে সড়কের কাজ শুরু হলেও কাজে অনিয়ম এবং কাজ সম্পূর্ণ না হওয়ায় ওই সময়ে সরকারের প্রায় ৯২ কোটি টাকা ভেস্তে যায়।
গেল দুই বছর ধরে কয়েক দফায় সরেজমিন যাচাই করে সড়ক ও জনপথ বিভাগের ঊর্ধ্বতন প্রকৌশলীরা এই সড়কের প্রকল্প প্রস্তাবনা সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ে পাঠান। পুরোনো অংশ অর্থাৎ আগের মতোই টেলিফোন বাজার ও আনন্দপুর হয়ে ৫৯৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকার প্রকল্প প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছিল। যাচাই-বাছাইসহ সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে এটি দরপত্র প্রক্রিয়ায় যায়। তিন মাস আগে সড়ক ও জনপথ বিভাগের সিলেটের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে ৫২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে এই সড়কের দরপত্র আহŸান করা হয়।
চার গ্রæপে আহŸানকৃত দরপত্রে রয়েছে- সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের মদনপুর পয়েন্ট থেকে দিরাই পর্যন্ত পুরোনো সড়কের তিনটি বেইলি সেতু ভেঙে নতুন আরসিসি সেতু করা। এর মধ্যে কাঠইড়, বোগলাকাড়া ও দরগাহ্পুর সেতু রয়েছে। এ ছাড়া মদনপুর-দিরাই সড়কের মদনপুর পয়েন্ট, নোয়াখালী, গণিগঞ্জ, পাথারিয়া ও দিরাইয়ে বাস স্টপেজ করা হবে। আর দিরাই থেকে শাল্লাগামী (ঘুঙ্গিয়ারগাঁও) সড়কটি শাল্লা উপজেলা সদরের পাশের দাড়াইন নদীতে হওয়া সেতু পর্যন্ত গিয়ে শেষ হবে। সড়কের শেষ মাথায়ও থাকবে বাস স্টপেজ। সড়ক ও জনপথ বিভাগের দায়িত্বশীলরা জানান, দিরাই থেকে শাল্লা পর্যন্ত ২৬ ফুট চওড়া সড়ক হবে। সড়কের উচ্চতা হবে বন্যার লেভেলেরও ওপরে। পুরোনো সড়কের ব্যবহার উপযোগী ১৭টি সেতুকে কাজে লাগানো হবে। নতুন আরও ১৪টি সেতু কালভার্ট করা হবে। প্রতিটি সেতুর নিচ দিয়ে নৌ-চলাচল সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। সর্বোচ্চ বন্যা লেভেলের চেয়েও ১৫ ফুট উঁচু হবে প্রতিটি সেতু। সেতুর প্রশস্ততা হবে ফুটপাতসহ ৩৪ ফুট।
সুনামগঞ্জ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম বলেন, দিরাই-শাল্লা সড়কের দরপত্র হয়েছে তিন মাস আগে। শিগগির দরপত্র মূল্যায়ন প্রতিবেদন দেওয়া হবে। এই মাসের শেষ অথবা এপ্রিল মাসের শুরুতে কার্যাদেশ প্রদান করে কাজ শুরু করা হবে। কাজের মেয়াদ দুই বছর থাকলেও আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে ঠিকাদারদের থেকে দৃশ্যমান কাজ আদায় করা হবে।
এ ব্যাপারে স্থানীয় সংসদ সদস্য ড. জয়া সেনগুপ্তা বলেন, ‘আমি আশাবাদী মানুষ। অর্থনৈতিক ক্রান্তিকালেও প্রধানমন্ত্রী এবং সড়ক ও সেতুমন্ত্রীর বদান্যতায় অফিসিয়াল কাজ অনেক এগিয়েছে। কাজটি শেষ না হওয়া পর্যন্ত উৎকণ্ঠা থাকবে সবার মতো আমারও।’