সিন্টু রঞ্জন চন্দ :
দীর্ঘ ৮ বছর পর মৌলভীবাজার শহরস্থ অগ্রণী ব্যাংক চৌমুহনা শাখার সিনিয়র অফিসার প্রণজিত পাল উরফে প্রনয় (৫০) হত্যা মামলায় একজনের ফাঁসি (মৃত্যুদন্ড) ও অপর ৪ আসামীর যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামীকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অপর যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত ৪ আসামীকে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরো ৩ মাস করে বিনাশ্রমে কারাদন্ডে দন্ডিত করা হয়। গতকাল সোমবার বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মো: শাহাদৎ হোসেন প্রামানিক চাঞ্চল্যকর এ রায় ঘোষনা করেন।
ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামীর নাম- রিপন পাল (৪৮)। তিনি মৌলভীবাজার সদর থানার মনোহরকোনা ইসলামপুর গ্রামের মৃত রবীন্দ্র কুমার পাল উরফে রবি পালের পুত্র এবং যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্ত আসামীরা হচ্ছেন- মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত রিপন পালের ভাই উত্তম পাল (৩৮), একই এলাকার যোগেন্দ্র পালের পুত্র বিমল পাল (৪৯), মৃত অনিল চন্দ্র উরফে অনিল পালের পুত্র আশীষ পাল (৪৮) ও মৃত তারন পালের পুত্র চিত্ত রঞ্জন পাল উরফে চিত্ত পাল (৩৮)। রায় ঘোষনার সময় সকল আসামী আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।
আদালত ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার বেশ কিছুদিন পূর্বে আসামী বিমল পালদের পারিবারিক বিরোধ মীমাংসা করতে গিয়ে প্রণজিত পাল উরফে প্রনয় এর সহিত তাদের বিরোধ সৃষ্টি হয়। এর জের ধরে ২০১৪ সালের ৩০ জুন রাত ৯টার দিকে মৌলভীবাজার পৌরসভাস্থ শমশেরনগর সড়কে চট্টগ্রাম স্যানেটারী দোকানের সামনে পূর্ব থেকে ওৎ পেতে থাকা আসামীরা ব্যাংকার প্রণজিত পাল উরফে প্রনয়কে জোরপূর্বক রিকশা থেকে নামায়। ওই সময় আসামি রিপন ধারালো অস্ত্র দিয়ে প্রণজিতের বাম উরুতে আঘাত করেন। এতে গুরুতর জখমপ্রাপ্ত হন প্রণজিত। এ সময় আসামি বিমল পাল, উত্তম পাল, চিত্ত পাল ও আশীষ পাল প্রণজিতকে ধরে রাখেন। পরে আশপাশের লোকজন গুরুতর আহতাবস্থায় প্রণজিতকে উদ্ধার করে প্রথমে একটি ক্লিনিকে পরে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় নিহত প্রণজিত পাল উরফে প্রনয়ের স্ত্রী কাঞ্চন রাণী পাল বাদী হয়ে মৌলভীবাজার সদর থানায় ৫ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার নং ১ (০২-০৭-২০১৪)।
দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের ২৮ ডিসেম্বর মৌলভীবাজার জেলা অফিসের সিআইডি পুলিশ পরিদর্শক শ, ম কামাল হোসেইন উক্ত ৫ আসামীকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র নং-২৭৭) দাখিল করেন এবং উপরোক্ত আসামীদের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ২৮ নভেম্বর আদালত চার্জগঠন (অভিযোগগঠন) করে এ মামলার বিচারকার্য্য শুরু করেন।
দীর্ঘ শুনানী ও ৩৭ জন সাক্ষীর মধ্যে ২২ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে গতকাল সোমবার আদালত আসামী রিপন পালকে ১৮৬০ সালের পেনাল কোড এর ৩০২ ও ৩৪ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে তাকে উক্ত অর্থদন্ডসহ মৃত্যুদন্ড (ফাঁসি) এবং অপর আসামী বিমল পাল, উত্তম পাল, আশীষ পাল ও চিত্ত রঞ্জন পালকে পেনাল কোড এর ৩০২ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে প্রত্যেককে উল্লেখিত অর্থদন্ডসহ তাদেরকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত করেন।
রাষ্ট্রপক্ষে স্পেশাল পিপি এডভোকেট সরওয়ার আহমদ চৌধুরী আবদাল, এডভোকেট বোরহান উদ্দিন, বাদিপক্ষে এডভোকেট গোলাম এহিয়হিয়া চৌধুরী সোহেল এবং আসামীপক্ষে এডভোকেট এমাদুল্লাহ শহিদুল ইসলাম শাহিন ও এডভোকেট সামিউল ইসলাম মামলাটি পরিচালনা করেন।
আসামির পক্ষে এডভোকেট এমাদুল্লাহ শহিদুল ইসলাম শাহিন বলেন, আমরা এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন বলে জানিয়েছেন।
এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সরওয়ার আহমদ চৌধুরী আবদাল আদালতের এ রায়ের সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।