সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অব ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) ষষ্ঠ বার্ষিক অর্থনীতিবিদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে গত শনিবার। এবারের সম্মেলনের প্রতিপাদ্য ছিল ‘বিল্ডিং রেজিলিয়েন্স টু শকস : প্রায়োরিটিস, চ্যালেঞ্জ অ্যান্ড প্রসপেক্টাস।’ দেশের অর্থনীতি বিষয়ের বিশিষ্টজনরা এই আয়োজনে যুক্ত হয়েছিলেন।
কভিড-১৯-এর ধাক্কার পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রতিক্রিয়া পড়েছে সারা বিশ্বের অর্থনীতিতে। অনেক দেশ এই ধাক্কা সামলে উঠতে রীতিমতো যুদ্ধ করছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিও এর বাইরে নয়। আন্তর্জাতিক সংকটের প্রভাব পড়েছে এখানেও। মূল্যস্ফীতির কারণে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে। অন্যদিকে কমেছে রেমিট্যান্স। টান পড়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে। ঠিক এই অবস্থায় এগিয়ে এসেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। ওয়াশিংটনভিত্তিক ঋণদাতা সংস্থাটির পর্ষদ গত ৩১ জানুয়ারি ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ অনুমোদন করেছে। ঋণের প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ডলার জমা পড়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে। সানেমের সম্মেলনের প্রথম দিন উপস্থিত ছিলেন দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদরা। স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশের অর্থনীতির গতি-প্রকৃতি ও আইএমএফের ঋণের বিষয়টিও উঠে এসেছে তাঁদের আলোচনায়। সম্মেলনে তাঁরা পোশাক খাতনির্ভর রপ্তানির বহুমুখীকরণের বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। দেশের মানবসম্পদ কাজে লাগানোর বিষয়টিও উঠে এসেছে আলোচনায়। সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাব্যবস্থার বৈষম্য নিয়েও কথা হয়েছে। কভিড ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে দেশের প্রেক্ষাপটে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে, এমন ভাবা হলেও অর্থনীতিবিদদের মতে, সমস্যাগুলো দীর্ঘদিনের। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, বর্তমান বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ প্রেক্ষাপটে আমাদের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে সতর্কতার সঙ্গে অর্থায়ন করতে হবে।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ বড় কথা নয়, বরং দেখতে হবে প্রবণতা কী? রিজার্ভের প্রবণতা নিচের দিকে নামতে থাকলে ঠেকানো কঠিন। দেশের রিজার্ভ একসময় ৩০০ কোটি মার্কিন ডলারও ছিল। আইএমএফ থেকে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ নিতে অনেক শর্তের মধ্যে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ কমানোর কথাও আছে। আইএমএফ বলেছে, ‘রাষ্ট্রের মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের নিচে এবং বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে তা ৫ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে হবে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া খেলাপি ঋণ কমবে না।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ায় বাংলাদেশ আইএমএফের ঋণ নিচ্ছে। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, রিজার্ভের পরিমাণ কমে যাওয়ার প্রবণতাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বাংলাদেশে যে মূল্যস্ফীতি দেখা দিয়েছে, তার ফলে দরিদ্র ও নতুন দরিদ্ররা কঠিন জীবনযাপন করছে। এ অবস্থায় সরকারকে সতর্ক অবস্থায় থাকতে হবে। তাঁদের মতে, এখন অর্থনৈতিক কূটনীতির দক্ষতা দেখাতে হবে।
দেশের সরকার তথা নীতিনির্ধারক মহল এ বিষয়ে নিঃসন্দেহে দৃষ্টি রেখেছে। বাংলাদেশ যেভাবে সংকট মোকাবেলা করছে, তা বহির্বিশ্বেও প্রশংসিত হয়েছে। প্রয়োজনীয় সংস্কার অর্থনৈতিক চাপ কাটিয়ে উঠতে সহায়ক হবে বলে আমরা মনে করি। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়বে না এমন ব্যবস্থা নিতে পারলে স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে। কভিড ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট সমস্যা সরকার দক্ষতার সঙ্গে কাটিয়ে উঠবেÑএটাই আমাদের প্রত্যশা।