অত্যাবশ্যকীয় পরিসেবা আইন

5

অত্যাবশ্যকীয় সেবা খাত ঘোষণার পর বেআইনিভাবে ধর্মঘট ডাকলে বা ওই ধর্মঘটে সমর্থন দিলে কারাদ-ের বিধান রেখে অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা আইনে ২০২২ চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সরকার অত্যাবশ্যকীয় ঘোষণা করার পর চাইলেই পরিবহন ধর্মঘট ডাকা বেআইনি হবে। অত্যাবশ্যকীয় সেবা খাতে থাকছে জল, স্থল ও আকাশপথে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনও। এখন সংসদ অনুমোদন করলে এটি গেজেট হয়ে আইনে পরিণত হবে।
যেসব খাতের সেবাকে সরকার অত্যাবশ্যকীয় ঘোষণা করতে পারবে সেগুলো হলো ডাক, টেলিযোগাযোগ, ইন্টারনেট, তথ্য-প্রযুক্তিসহ সব ডিজিটাল সেবা, ডিজিটাল আর্থিক সেবা, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ, বিমানবন্দর পরিচালনা, স্থল ও নদীবন্দর পরিচালনা, কাস্টমসের মাধ্যমে কোনো পণ্য ও যাত্রীর পণ্য ছাড় করা, সশস্ত্র বাহিনীর কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো কার্যক্রম, প্রতিরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পণ্য বা মালপত্র উৎপাদনের সঙ্গে সম্পর্কিত কার্যক্রম বা খাদ্যদ্রব্য ক্রয়, সংগ্রহ ও সংরক্ষণের সঙ্গে সম্পর্কিত কার্যক্রম।
প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী সেবা অত্যাবশ্যকীয় ঘোষণার পর পরিবহন ধর্মঘট ডাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনা যাবে। যদিও পরিবহন খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এটা মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন। তাঁদের মতে, অনেক সময় দাবি আদায়ে ধর্মঘটের বিকল্প থাকে না। তখন ধর্মঘট করার আগে সুনির্দিষ্ট কারণ দেখিয়ে আলটিমেটামও দেওয়া হয়। আলটিমেটামে দাবি আদায় হলে ধর্মঘটের দরকার হয় না। ধর্মঘটই করা যাবে না এমন আইন করা হলে তাতে তাঁদের মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ন হবে বলে মনে করছেন তাঁরা। কিন্তু ধর্মঘটের কারণে যদি সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়ে বা মানুষের মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ন হয়, সে ক্ষেত্রে কী হবে? আর মৌলিক অধিকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হলে যেকোনো আইন বা আইনের নির্দিষ্ট ধারা আপনাআপনি অকার্যকর হবে বলে হাইকোর্টের নির্দেশনা আছে।
অনেক সময় শিল্পপ্রতিষ্ঠান লে-অফ বা লক-আউট করা হয়। কিন্তু সরকার যদি মনে করে এটা ন্যায়সংগত হয়নি, তাহলে হস্তক্ষেপ করতে পারবে। প্রস্তাবিত আইনে শিল্পপ্রতিষ্ঠান লে-অফ বা বন্ধ করার বিষয়েও শাস্তির বিধান রাখা আছে। কেউ যদি লোকসানে পড়ে কারখানা বন্ধ করে দেয় এবং সরকার এই আইনের দ্বারা তাকে তা চালাতে বাধ্য করে, সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ক্ষতিপূরণ না দিয়ে এমন পদক্ষেপ নিলে তা অসাংবিধানিক হবে। এই বিষয়গুলোর সুরাহা করা উচিত। তাই আইনটির আরো আলোচনা, সংশোধন হওয়া দরকার।