শাবি থেকে সংবাদদাতা :
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) ভর্তি কার্যক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ‘পোষ্য কোটা’ নীতিমালা পরিবর্তন করা হয়েছে। এতে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অবসর গ্রহণের পরবর্তী ৫ বছর এবং চাকুরীরত অবস্থায় কেউ মারা গেলে তাদের পোষ্যরা অবসরের সময়কাল পর্যন্ত কোটায় ভর্তির সুবিধা পাবেন। তবে এ নীতিমালা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিপন্থী ও বিশেষ কাউকে সুবিধা দিতে নেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করছেন একাধিক শিক্ষক-কর্মকর্তা।
গত ২৬ জানুয়ারি জরুরী এক একাডেমিক কাউন্সিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে এবং একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্যদের উপস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত পোষ্য কোটা পরিবর্তন করে নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। এর আলোকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অবসর গ্রহণের পরবর্তী ৫ বছর এবং চাকুরীরত অবস্থায় কেউ মারা গেলে তাদের পোষ্যরা অবসরের বয়সকাল পর্যন্ত কোটায় ভর্তির সুবিধা পাবে।
পূর্বের নীতিমালা অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের (কেবলমাত্র মাস্টার রোল ও এ্যাডহক নিয়োগ ব্যতীত) সন্তানদের ‘পোষা’ বলে বিবেচনা করা হত। এতে সর্বোচ্চ ২ জন পোষ্যকে কোটায় ভর্তির সুবিধা পেতেন তারা। তবে ২০২১-২২ সেশন থেকে এ নীতিমালা পরিবর্তন করে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অবসরের পরবর্তী ৫ বছর এবং কেউ মারা গেলে তাদের ছেলে-মেয়েরা অবসরকালীন সময় পর্যন্ত কোটা সুবিধা পাবেন বলে নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ৩০ বছর পার হওয়ায় অনেক শিক্ষক, কর্মকর্তা অবসরে চলে গেছেন, অনেকে অবসরের পর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে কর্মরত আছেন, আবার অনেকে অবসরের পথে রয়েছেন। তাই তাদের ছেলে-মেয়েদের বাড়তি সুবিধা দিতে পোষ্যকোটা পরিবর্তন করে নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন শিক্ষক-কর্মকর্তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ব্যক্তিকে বিশেষ সুবিধা দিতে গত ২৬ জানুয়ারি জরুরী ভিত্তিতে একাডেমিক কাউন্সিলের সভা ডেকে ‘পোষ্য কোটা’ নীতিমালা পরিবর্তন করে নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। যেখানে অবসরের ৫ বছর পরেও কোটা সুবিধা দেওয়া হবে তাদের। সরকার যেখানে কোটা ব্যবস্থা কমাতে চাচ্ছে, সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সুবিধা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এটা সম্পূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় নীতির পরিপন্থী। পরবর্তীতে দেখা যাবে আরেকজনকে সুবিধা দিতে এ নীতিমালা আবারো পরিবর্তন করা হচ্ছে!
ভর্তি কমিটির সভাপতি ও একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক ড. মো. রাশেদ তালুকদার বলেন, একজন শিক্ষক, কর্মকর্তা বা কর্মচারী যখন অবসর নেন, তখন তাদের ছেলে-মেয়েরা পূর্বের তুলনায় বেশি অসহায় থাকে। তাদের অবসরের পরবর্তী ৫ বছর পর্যন্ত তাদের ছেলে-মেয়েরা এ সুবিধাটা নিতে পারবে। তাই এ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। যে মানুষটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৫ থেকে ৩০ বছর সার্ভিস দিয়ে গেছে, তার যদি কোন পোষ্য সুবিধা থেকে থাকে, তাদের জন্য এমন সুবিধা থাকা উচিত।
এমন সিদ্ধান্ত জরুরী ভিত্তিতে নেওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতিবছর কোটায় ভর্তির আগে এমন মিটিং করি, এখানে জরুরী ভিত্তিতে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি, এটা তোমরা ভুল করছ’।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. কবীর হোসেন বলেন, ‘কোন শিক্ষক, কর্মকর্তা যদি কর্মরত অবস্থায় মারা যায় তখন দেখা যায় তাদের ছেলে-মেয়েরা ছোট থাকে, তাই বিশ্ববিদ্যালয় মরণোত্তর সুবিধাটি বিবেচনা করেছে। আবার কেউ অবসরে গেলে দেখা যায় দুই-এক বছরের জন্য তাদের ছেলে-মেয়েরা কোটা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, তাই তাদের কথা বিবেচনা করে ব্যবস্থাটি করা হয়েছে, কোন ব্যক্তি বিশেষকে সুবিধা দিতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি’।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘শিক্ষক-কর্মকর্তাদের মানবিক দিকটি বিবেচনা করে তাদের পোষ্যদের জন্য এ সুবিধাটি চালু করা হয়েছে। এক্ষেত্রে কেউ কোটা দিয়ে ভর্তির হতে চাইলে, তাদের বিভাগ অনুসারে সর্বশেষ ভর্তিকৃত প্রার্থীর প্রাপ্ত নম্বর থেকে ১০ নম্বর কম এবং ভর্তি পরীক্ষায় নূন্যতম ৪০ শতাংশ নম্বর পেতে হবে। এখানে পোষ্যদের আসন বৃদ্ধি করা হয়নি, তাদের জন্য যে ২০টি আসন বরাদ্দ রয়েছে, সেগুলোতে তাদের ভর্তি করা হচ্ছে, যাতে কোন সিট খালি না থাকে’।