কাজিরবাজার ডেস্ক :
কমিউনিটি ক্লিনিক চালু থাকলে এখান থেকে যারা চিকিৎসা সেবা নেবেন তারা সবাই আওয়ামী লীগকেই ভোট দেবেন, এই ভয়ে ক্লিনিকগুলো বন্ধ করে দিয়েছিল বিএনপি-জামায়াত সরকার। এই কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, জনগণের জন্য কাজ করে কী পেলো তা নিয়ে কখনোই ভাবে না আওয়ামী লীগ। বরং জনগণের কল্যাণে তারা কী করতে পারে তা-ই বিবেচনা করে।
চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সদর দফতর উদ্বোধনকালে তিনি এই কথা বলেন। বুধবার (১৮ জানুয়ারি) সকালে নিজের সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি আওয়ামী লীগের এই কার্যালয় উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী সারা দেশের ১৩টি জেলায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আরও ৪৫টি কমিউনিটি ভিশন সেন্টার উদ্বোধন করেন। যার মাধ্যমে এই সংখ্যা ১৩৫-তে উন্নীত হয়েছে। ফলে এক-তৃতীয়াংশ তৃণমূল মানুষকে বিনামূল্যে আধুনিক চক্ষু চিকিৎসার আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ও এর জনগণের জন্য কী করতে পারলাম তা বিবেচনায় আমরা গত ১৪ বছরে দেশ ও এর জনগণের ভাগ্যের ব্যাপক পরিবর্তন করেছি।
তিনি বলেন, দীর্ঘ ২১ বছর পর ‘৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে তার সরকার দলমত নির্বিশেষে সবার চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার জন্য সারা দেশে কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করে। পরবর্তী বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার তা বন্ধ করে দেয়। তিনি বলেন, ‘তাদের বক্তব্য খুব স্পষ্ট ছিল। তারা বলেছিল, এই কমিউনিটি ক্লিনিক চালু থাকলে এখান থেকে যারা চিকিৎসা সেবা নেবে তারা সবাই আওয়ামী লীগকেই ভোট দেবে। তারা ভোট পাবে না, সেই ভয়ে এগুলো বন্ধ করে দেয়। কি অদ্ভুত চিন্তা! আপনারা একটু বিবেচনা করেন! আমরা কিন্তু সেগুলো চিন্তা করিনি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকের ক্ষেত্রে সবাই চিকিৎসা পাবে। যে আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে সেও যেমন চিকিৎসা পাবে, যে দেবে না সেও পাবে। কারণ, এটা আমি জনগণের জন্য করেছি। আর জনগণের জন্য যে সেবা সেটা জনগণের হাতে পৌঁছে দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য।
২০০৯ সালে দ্বিতীয়বার সরকারে আসার পর থেকে তার সরকারের প্রচেষ্টায় এখন পর্যন্ত সারা দেশে গড়ে ওঠা ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে মানুষ চিকিৎসা সেবাসহ ৩০ প্রকারের ওষুধ বিনামূল্যে পাচ্ছে বলেও জানান শেখ হাসিনা।
সরকারপ্রধান বলেন, পাশাপাশি সে সময় চিকিৎসা সেবার ক্ষেত্রে হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ছিল মাত্র ৩৮ হাজার, কিন্তু তাঁর সরকার ৬৭ হাজারে উন্নীত করেছে। ২২ হাজার চিকিৎসক ও ৪০ হাজার নার্স নিয়োগ দিয়েছে এবং স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্স হাসপাতাল, বিভিন্ন আধুনিক হাসপাতাল, জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন চিকিৎসাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি শিশু হাসপাতালগুলোকে উন্নতকরণের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবাকে যুগোপযোগী করে দিচ্ছি।
তিনি বলেন, এই শিশু হাসপাতাল আমাদের প্রত্যেকটা বিভাগে করা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি বা বিভাগীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও হাসপাতালগুলোতে শিশুদের বিশেষ যতœ ও চিকিৎসার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। সেক্ষেত্রে বেসরকারি পর্যায়েও যেন হাসপাতাল গড়ে ওঠে। এ জন্য হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনীয় সামগ্রীর থেকেও তার সরকার ট্যাক্স কমিয়ে দিয়েছে বলে বেসরকারি খাতেও অনেক উন্নতমানের হাসপাতাল তৈরি হচ্ছে। পাশাপাশি সরকারি ও বেসরকারি খাতে নার্সেস ইনস্টিটিউট গড়ে উঠছে এবং কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করছে। আন্তর্জাতিক মানের সেবা প্রাপ্তির ও উপলক্ষ ঘটছে।
তিনি এ সময় দেশের জনসংখ্যা বেশি হওয়ায় সবাইকে নিয়ম মেনে চলার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, সবাই যদি নিয়ম মেনে চলে তাহলে আমরা সবাই যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পারবো।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলা তার সরকারের নির্বাচনি অঙ্গীকার ছিল বলে বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তরিত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রতি উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কমিউনিটি ভিশন সেন্টার আমরা স্থাপন করছি। একটা বেজ হাসপাতাল রেখে সেখান থেকে এসব সেন্টারে টেলিকমিউনিকেশনের মাধ্যমে তাদের পরীক্ষা করা হচ্ছে এবং চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আর ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে বলেই এই সুযোগ আমরা তৈরি করতে পেরেছি।