স্টাফ রিপোর্টার :
শীতে শুকিয়ে নালায় পরিণত হয় সুরমা নদী। আর বর্ষায় সেই সুরমা নদী দেখায় তার ভয়াবহ রূপ। নাব্যতা কমে যাওয়ায় তীর উপচে পানি ঢুকে সিলেট শহরে সৃষ্টি হয় বন্যা। শহরের পানি নিষ্কাশনের মাধ্যম ছড়া-খালগুলো দিয়ে উল্টো প্রবেশ করে সুরমার পানি।
গত বছর দুই দফা বন্যায় এভাবেই নাকাল হতে হয়েছে সিলেট নগরবাসীকে। অবশেষে বন্যার কবল থেকে নগরবাসীকে মুক্ত করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সুরমা নদী খননের। ইতোমধ্যে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান খননের জন্য সুরমায় ড্রেজার মেশিনসহ আনুষাঙ্গিক যন্ত্রপাতি নিয়ে এসেছে। চলছে পরীক্ষামূলক খননও। কয়েক দিনের মধ্যে পুরোদমে খনন কাজ শুরু হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। খননে কিছুটা হলেও প্রাণ ফিরবে সুরমার। তবে শুধু নদী খনন করলেই সিলেট নগরীকে বন্যা কিংবা জলাবদ্ধতা মুক্তি করা যাবে না, এজন্য প্রয়োজন অভ্যন্তরীণ ড্রেনেজ ব্যবস্থারও উন্নয়ন- বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেট অফিস সূত্রে জানা গেছে, গেল বছর মে ও জুন মাসে সিলেটে নগরীতে ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়। ওই সময় সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বন্যা নিরসনে সুরমা নদী খনন, শহরক্ষা বাঁধ এবং নদী ও ছড়া-খালের উৎসমূখে সøুইস গেট নির্মাণের দাবি তোলা হয়। ওই সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন এমপিও সুরমা নদী খননের উপর জোর দেন। এর প্রেক্ষিতে পানি উন্নয়ন বোর্ড সুরমা নদী খননের একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, কানাইঘাট থেকে ছাতক পর্যন্ত সুরমা নদী খননের জন্য একটি ডিপিপি জমা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সেটি এখনো আলোর মুখ দেখেনি। গেল বছর বন্যার পর কুশিঘাট থেকে ছাতকের লামাকাজি সেতু পর্যন্ত প্রায় ১৮ কিলোমিটার খননের একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ওই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৫০ কোটি টাকা। নদী খননের জন্য ইতোমধ্যে দুটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশও দেয়া হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয়েক দিন আগেই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলো সুরমা নদীতে ড্রেজার মেশিন ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নিয়ে এসেছে। কয়েকটি স্থানে তারা ‘ট্রায়াল রান’ করছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষেই শুরু হবে আনুষ্ঠানিকভাবে খনন কাজ।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমদ জানান, সুরমা নদী খননের ‘প্রি ওয়ার্ক’ শুরু হয়ে গেছে। ‘ট্রায়াল রান’ হচ্ছে। কয়েক দিনের মধ্যেই খনন কাজ শুরু হবে। কুশিঘাট থেকে লামাকাজি সেতু পর্যন্ত খনন হলে সুরমার নাব্যতা বাড়বে। একই সাথে বাড়বে পানি প্রবাহ। যে কারণে বর্ষায় সিলেট নগরীতে বন্যার আশঙ্কা কমবে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে আগামী জুন মাসের মধ্যেই খনন কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা। তবে কেবলমাত্র সুরমা খনন করলেই সিলেট নগরীকে বন্যা কিংবা জলাবদ্ধতা মুক্ত করা যাবে না। এজন্য নগরীর ভেতর দিয়ে প্রবাহিত ছড়া ও খালগুলোর পানি প্রবাহের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে। অনেক সময় নদীতে পানি কম থাকলেও ছড়া ও খালে প্রতিবন্ধকতা থাকায় পানি নামতে দীর্ঘ সময় নেয়।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান জানান, জলাবদ্ধতা নিরসনে ছড়া-খাল নিয়মিত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা হয়। এরপরও এবছর ৬ সদস্যের একটি তদারকি কমিটি গঠন করা হয়েছে। বর্ষায় যাতে জলাবদ্ধতা না হয় সেজন্য প্রতিবন্ধকতাগুলো এই কমিটি চিহ্নিত করে সমাধানের সুপারিশ করবে। সিলেট নগরীর ভেতর দিয়ে প্রবাহিত বড় বড় ছড়া-খালগুলো সুরমা নদীর যেসব পয়েন্টে পতিত হয়েছে সেসব স্থানে সøুইস গেট নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। তবে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দেড় থেকে দুই বছর সময় লাগবে।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী এসএম শহীদুল ইসলাম জানান, লামাকাজি পর্যন্ত কোথাও ২০ ফুট আবার কোথাও ১৫ ফুট খননের ডিজাইনসহ কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। পরীক্ষামূলক কাজ চলছে। কয়েক দিনের মধ্যে পুরোদমে খনন কাজ শুরু হবে।