চীনে লকডাউন তুলে নেওয়ায় বিশ্ব অর্থনীতির উপর চাপ বাড়বে

14

কাজিরবাজার ডেস্ক :
করোনাভাইরাস শনাক্ত হয় চীন থেকে। এরপর তা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। মহামারির শুরুর দিকে বিদেশি শিক্ষার্থীরা চীন ছাড়ে। পর্যটকরা বন্ধ করে ভ্রমণ। চীনের বিজ্ঞানীরা বিদেশি কনফারেন্সে যোগ দেওয়া বন্ধ করেন। তাছাড়া বিদেশি কর্মকর্তারা চীনের ব্যবসায় ফিরতে বাধাগ্রস্ত হন। ৮ জানুয়ারি থেকে করোনার বিধিনিষেধ তুলে নিচ্ছে চীন। ফলে পুনরায় বাণিজ্যিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক যোগাযোগ বাধাগ্রস্ত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
চীনের অভ্যন্তরে করোনার প্রকোপ মারাত্মকভাবে বাড়তে শুরু করেছে। প্রতি দিন লাখ লাখ মানুষ ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে রোগীর ঠাই হচ্ছে না। করোনার শূন্য নীতি জীবন রক্ষায় ভালোই কাজে দিয়েছিল। তবে নানা ধরনের অসঙ্গতির কারণে চীন সরকার যথাযথ প্রস্তুতি নিতে ব্যর্থ হয়েছে। বর্তমান অনুযায়ী যদি ভাইরাস ছাড়াতে থাকে তাহলে আসন্ন মাসগুলোতে ১৫ লাখের মতো চীনা নাগরিক মারা যেতে পারে।
মূলত চীন ইস্যুতে বাইরের লোকদের সাহায্য করার মতো তেমন কিছু নেই। চীন সরকার ইউরোপ থেকে বিনামূল্যে কার্যকর ভ্যাকসিনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্ব অর্থনীতি বিভিন্ন ধরনের ধাক্কা সামলানোর জন্য প্রস্তুতি নিতে পারে। পরিস্থিতি সামলানো খুব একটা সহজ হবে না। তাছাড়া চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে চীনের অর্থনীতি সংকোচিত হতে পারে। বিশেষকরে যদি স্থানীয় কর্মকর্তারা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে উল্টো পদক্ষেপ নেয়। তবে সবকিছু ছাপিয়ে অর্থনৈতিক কার্যক্রম বাড়বে। কারণ এসময় চীনাদের চাহিদা বেড়ে যাবে। চীনের করোনা বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হতে যাচ্ছে ২০২৩ সালের অর্থনীতির জন্য বড় ঘটনা।
এদিকে করোনার বড় ঢেউ শেষ হয়ে গেছে। অনেক রোগীই আবার কর্মস্থলে ফিরবে। মনে করা হচ্ছে, কেনাকাটায় ও ভ্রমণে ব্যয় করবে মানুষ। অনেক অর্থনীতিবিদ মনে করছেন, ২০২৪ সালের প্রথম তিন মাসে জিডিপি ২০২৩ সালের প্রথম প্রান্তিকের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি হতে পারে।
যেসব জায়গা চীনাদের ব্যয়ের ওপর নির্ভর করে তাদের জন্য বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া একটি ভালো খবর। কারণ চীনের পর্যটক ছাড়া পুখেটের হোটেল ও হংকংয়ের মলগুলো সংগ্রাম করছে। এখন এসব এলাকা ঘুরে দাঁড়াবে। এরই মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় বুকিং বেড়েছে। যেসব দেশ চীনে রপ্তানি করে তারাও সুবিধা পাবে। বিশ্বের এক-পাঁচ শতাংশ জ্বালানি তেল আমদানি করে দেশটি।
কিন্তু চীনের এমন পদক্ষেপের রয়েছে ব্যাপক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। বিশ্বের অনেক জায়গা প্রবৃদ্ধির বদলে উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও উচ্চ সুদের হার দেখতে পারে। এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো সুদের হার ব্যাপকভাবে বাড়িয়েছে। চীনের পদক্ষেপে অনেক দেশে মূল্যের ওপর চাপ বাড়তে পারে। এতে আরও কঠোর মুদ্রানীতি আরোপ করা হতে পারে। যেসব দেশ পণ্য আমদানি করে তাদের ওপর চাপ বাড়বে, বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলোর ওপর।
কারণ চীনে অর্থনৈতিক কার্যক্রম বেড়ে গেলে তেলের চাহিদা বাড়বে। এতে ইউরোপ ও আমেরিকাকে ভোক্তাদের ব্যয় ঠিক রাখতে আরও পদক্ষেপ নিতে হবে। গোল্ডম্যান স্যাশ জানিয়েছে, চীনের পুনরুদ্ধার কার্যক্রমে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারিলপ্রতি বেড়ে ১০০ ডলারে দাঁড়াতে পারে। ফলে জ্বালানি খরচ ফের বোঝ হয়ে দাঁড়াবে। একইভাবে গ্যাসের ওপর চাপ বাড়বে। বিশ্ববাজার থেকে এলএনজি আমদানিতে প্রতিযোগিতা তৈরি হবে।