আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন আজ \ কী চমক থাকছে

8

কাজিরবাজার ডেস্ক :
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে আজ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন। শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এ সম্মেলনে আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়েও আসতে পারে দিকনির্দেশনা।
সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বের পর বিকেলে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনে দ্বিতীয় অধিবেশন বসবে। বিরোধী দলগুলোর আন্দোলন ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এবারের সম্মেলন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে এতে সাধারণ সম্পাদকসহ দলের নেতৃত্বে কোনো পরিবর্তন আসছে কিনা; এ নিয়ে কোনো আভাস পাওয়া যায়নি।
দেশের বৃহৎ এই রাজনৈতিক দলের ২১তম জাতীয় সম্মেলন হয়েছিল ২০১৯ সালের ২১ ডিসেম্বর। সেই সম্মেলনে সভাপতি পদে শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক পদে ওবায়দুল কাদের পুন:নির্বাচিত হন।
নেতৃত্বে পরিবর্তন আসছে না?
বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের দলে জননেত্রী শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নেই। আওয়ামী লীগের প্রতিটি কর্মী-সমর্থক চায় শেখ হাসিনা যতদিন বেঁচে আছেন, ততদিন দলকে নেতৃত্ব দেবেন। কেবল দলই না, রাষ্ট্র পরিচালনায়ও তার বিকল্প আজ বাংলাদেশে নেই। তিনি যেভাবে দেশ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, একটি অনুন্নত দেশকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত করেছেন। উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে যাওয়ার জন্য তার যে প্রাণান্তকর চেষ্টা, বিশ্ব সম্প্রদায় তার প্রশংসা করেছেন। তার বিকল্প আওয়ামী লীগে কেউ নেই।’
আওয়ামী লীগের সম্মেলন সবসময় জাতির জন্য মাইলফলক আখ্যায়িত করে দলটির এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, আওয়ামী লীগের সম্মেলন থেকে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বার্তা থাকে। এখন রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও রাজনীতির জন্য বার্তা থাকে। আর বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি এখনও মাঝে মাঝে ফনা তুলছে। আর আমাদের দেশকে নিয়ে বিএনপিসহ তার মিত্ররা যেভাবে ষড়যন্ত্র করছে, এই প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগের সম্মেলন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
স্বাধীনতাবিরোধী ও সাম্প্রদায়িক শক্তিকে মোকাবিলায় আওয়ামী লীগের আসন্ন সম্মেলনে দিকনিদের্শনা থাকবে বলেও জানান তিনি। হাছান মাহমুদ বলেন, ‘একইসঙ্গে আগামী নির্বাচনে আবারও ভ‚মিধস বিজয় ছিনিয়ে আনতে আমাদের দলকে আরও শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করিয়ে সুসংগঠিত করা হবে।’
একইদিনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলনস্থল পরিদর্শনে গিয়ে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এবারের সম্মেলনে কেন্দ্রীয় কমিটিতে বড় কোনো পরিবর্তন হবে না। প্রয়োজনে পরবর্তী সম্মেলন নির্বাচনের পর আগামও করতে পারি। তখন একটা বড় ধরনের পরিবর্তন হয়তো হবে।’
তিনি বলেন, সবার দৃষ্টি দলের সাধারণ সম্পাদকের দিকে। এ পদে প্রার্থীদের অনেকের ইচ্ছা থাকতে পারে। অন্তত গণতান্ত্রিক দল হিসেবে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমার জানামতে, এই পদে অন্তত ১০ জন প্রার্থী আছেন। কে হবেন, এটা নেত্রীর ইচ্ছা ও কাউন্সিলের মতামতের ওপর নির্ভর করছে। তবে সবকিছুর প্রতিফলন ঘটবে দ্বিতীয় অধিবেশনে। কাজেই আমি কারও নাম বলতে পারবো না।’
তবে সাধারণ সম্পাদকসহ বড় পদগুলোতে কোনো পরিবর্তনের আভাস আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে মেলেনি।
এর আগে দেখা গেছে, সম্মেলনে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ গুরুত্বপূর্ণ বেশিরভাগ পদে নেতাদের নাম ঘোষণা করা হয়। ৮১ সদস্যের কমিটির কিছু কিছু পদ পূরণ করা হয়।
বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় গণভবনে বর্তমান কার্যনির্বাহী সংসদের সর্বশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভা মুলতবি করে শনিবার নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের দ্বিতীয় অধিবেশন ফের বসবে।
স্মার্ট বাংলাদেশ
দলীয় সূত্র বলছে, বৈঠকের মূল আলোচ্য বিষয় ছিল দলের গঠনতন্ত্র সংশোধন ও ঘোষণাপত্র অনুমোদন করা। এবারের ঘোষণাপত্রের সেøাগান ঠিক করা হয়েছে: ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’। এরমধ্যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহার কী কী থাকবে, সেটার ওপর আলোকপাত করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের এবারের সম্মেলনে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার বিষয়টিতেই গুরুত্ব দেয়া হবে বলে জানা গেছে। গেল কয়েকদিন ধরে নিজের বক্তব্যে এ বিষয়টিই তুলে ধরেছেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। এমনটি জাতীয় সম্মেলনে যোগ দেয়া কাউন্সিলর ও ডেটিগেটদেরও এ বিষয়ে নির্দেশনা দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
২০০৯ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে যাত্রা শুরু করেছিল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার। গত ১৪ বছরে ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণসহ সরকারের উন্নয়ন-অগ্রগতি সম্পর্কিত বিষয়গুলো তুলে ধরা হবে এবারের ঘোষণাপত্রে। দলটির সম্মেলন উপলক্ষে গঠিত ঘোষণাপত্র উপকমিটি জানায়, এই ক্যানভাসের ওপর দাঁড়িয়ে ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে চায় আওয়ামী লীগ।
নির্বাচনী ইশতেহার নিয়ে দিকনির্দেশনা
সম্মেলনে আগামী নির্বাচনে দলের ইশতেহার তুলে ধরা হবে বলে জানিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক। গেল ১২ নভেম্বর আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে ২২তম জাতীয় কাউন্সিল উপলক্ষে গঠিত গঠনতন্ত্র উপকমিটির এক সভায় তিনি এ কথা বলেন।
আবদুর রাজ্জাক বলেন, সম্মেলনে জাতীর সামনে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে আওয়ামী লীগ কী ভ‚মিকা রাখবে, তা তুলে ধরা হবে। সামনের নির্বাচনে দলের ইশতেহারও তুলে ধরা হবে।
বিএনপির নেতৃত্বে দেশবিরোধী অপশক্তি যেসব চক্রান্ত করছে, তাদের বিষয়ে সম্মেলন থেকে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা আসবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
গত বুধবার (২১ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের ২২তম সম্মেলনস্থল পরিদর্শনে গিয়ে তিনি একথা জানান।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সবসময়ই একটি স্মার্ট দল। আওয়ামী লীগই সবসময় প্রথমে ভাবে জাতিকে এগিয়ে নিতে হলে কী করতে হবে। আওয়ামী লীগের হাত ধরে ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে, স্মার্ট বাংলাদেশও আওয়ামী লীগের হাত ধরেই হবে।
উদাহরণ দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা হাছান বলেন, সেই পাকিস্তান আমলে বাঙালির স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতার আন্দোলন আওয়ামী লীগের ঘর থেকেই শুরু হয়েছে এবং আওয়ামী লীগ থেকেই জাতিকে অবহিত করা হয়েছে। জাতিকে প্রস্তুত করা হয়েছে স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য।
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশ প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় শিল্প বিপ্লবে কয়েক দশক করে পিছিয়ে পড়লেও এখন চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা পিছিয়ে নেই। অনেকের আগে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কথা ভেবেছে, যেটি ভারত ২০১৫ সালে, যুক্তরাজ্য ২০০৯ সালে ভেবেছে।’
মন্ত্রী বলেন, আর দুই দিন পরই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনটি শুধু দলেরই নয়, জাতীয় জীবনেও একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। ১৯৬৬ সালে আওয়ামী লীগের যে সম্মেলন হয়েছিল, সেটির সম্মেলন সংগীত ছিল ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ এবং সেই সংগীতই পরে আমাদের জাতীয় সংগীত হয়েছে উল্লেখ করেন তিনি।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, প্রতিবার আওয়ামী লীগের সম্মেলন থেকে দেশ গঠনে, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, জাতির পিতার স্বপ্নের ঠিকানায়, মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্নের ঠিকানায় দেশকে পৌঁছাবার লক্ষ্যে বার্তা থাকে। এবারের সম্মেলনেও দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, দেশের রাজনীতিকে কলুষমুক্ত করা ও রাজনীতিতে যে অপশক্তির অনুপ্রবেশ ঘটেছে এবং বিএনপির নেতৃত্বে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিকে যে লালন-পালন করা হচ্ছে, সেই সব বিষয়েও সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা থাকবে। এভাবেই আওয়ামী লীগের সম্মেলন জাতীয় জীবনের মাইলফলক হয়ে ওঠে।
শেখ রেহানা, জয় ও ববি কি রাজনীতিতে আসছেন?
শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয় কিংবা রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি কী সরাসরি রাজনীতিতে আসছেন, আওয়ামী লীগের সম্মেলনের আগে এ নিয়ে দলের মধ্যে জোর আলোচনা চলছে। রাষ্ট্র পরিচালনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করেন বোন শেখ রেহানা আর উপদেষ্টা হিসেবে আছেন সজীব ওয়াজেদ জয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিষয়ক অবৈতনিক উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছেন বঙ্গবন্ধুর এই দৌহিত্র। আওয়ামী লীগের গবেষণা সেল সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) পরিচালনা করেন ববি।
আর অটিজম সচেতনতা নিয়ে কাজ করেন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। ওবায়দুল কাদের সংবাদমাধ্যমকে বলেন, প্রত্যক্ষভাবে না হলেও পরোক্ষভাবে সাংগঠনিক কাজ করেন শেখ রেহানা। শেখ হাসিনা যখন কারাবন্দি ছিলেন, তখন দল সামলে ছিলেন তিনি। সজীব ওয়াজেদ জয়ও সংগঠনের খোঁজ-খবর রাখেন, প্রয়োজনে সহযোগিতা করেন।
এবার কেন্দ্রীয় কমিটিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবারে সদস্যরা থাকতে পারেন বলে জোর আলোচনা চলছে। ওবায়দুল কাদের বলেন, তাদের কেউ যদি সাংগঠনিক কাজে সক্রিয়ভাবে জড়াতে চান কিংবা আগ্রহ প্রকাশ করলে তখন দেখা যাবে।
এদিকে বৃহস্পতিবার গণভবনে জয়কে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়ে ২২তম জাতীয় সম্মেলনে অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ওবায়দুল কাদের। এরপর রাজনীতিতে জয়ের সরাসরি অংশগ্রহণ নিয়ে গুঞ্জন আরও জোরালো রূপ নিয়েছে।