সাম্প্রতিক সময়ে বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও এক সংকটকাল অতিক্রম করছে। ২০২০ সালে করোনাভাইরাস দেশের অর্থনীতি ও উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করেছিল। সেই বাধা অতিক্রম করে নতুনভাবে পথচলা শুরু করতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দেখা দেয় নতুন সংকট। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো মূল্যস্ফীতির ধাক্কা লাগে দেশের অর্থনীতিতেও।
পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ডলার সংকটের পাশাপাশি টান পড়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে।
বৈশ্বিক সংকট যখন অভ্যন্তরীণ সংকটের কারণ হয়, তখন সেই ধাক্কা কাটিয়ে ওঠা কঠিন হয়ে পড়ে। ইউরোপের অনেক দেশই এখনো এই সংকট কাটিয়ে উঠতে পারেনি। কিন্তু বাংলাদেশ মোটামুটিভাবে সংকট কাটিয়ে ওঠার পথে রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে সংকট উত্তরণের কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবেলার কথা উল্লেখ করে বর্তমান বৈশ্বিক সংকট উত্তরণের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি। জনগণকে গুজবে কান না দেওয়ার আহŸান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের বিনিয়োগ, রেমিট্যান্সপ্রবাহ এবং আমদানি-রপ্তানি পরিস্থিতিÑসব কিছু স্বাভাবিক রয়েছে। বাংলাদেশ খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, গত ১৪ বছরে দেশ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল হতে পেরেছে।
আজকের বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে দেশের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক ঐক্য ছিল সবচেয়ে জরুরি। কিন্তু বাংলাদেশের বাস্তবতা হচ্ছে, আমরা মুখে যতই গণতন্ত্রের কথা বলি না কেন, আমাদের মধ্যে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের অভাব এখন পর্যন্ত রয়ে গেছে। অতীতেও এমনটি দেখা গেছে যে যখনই একটু একটু করে স্বপ্নপূরণের পথে এগিয়েছে বাংলাদেশ, প্রতিবারই হোঁচট খেয়েছে। কখনো কখনো রাজনীতি উন্নয়নের প্রতিপক্ষ হয়েছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি যখনই জটিল হয়েছে, তখনই ত্বরান্বিত হয়েছে অর্থনীতির ক্ষতি। রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে কখনো কখনো জঙ্গি তৎপরতার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বেড়েছে সাধারণ অপরাধমূলক কর্মকাÐও।
আমাদের ভাবতে ভালো লাগে, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বাংলাদেশ সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা পোষণ করে। দেশে দারিদ্র্যের হার কমেছে। মাথাপিছু আয় বেড়েছে। বেড়েছে সাক্ষরতার হারও। মাতৃমত্যু ও শিশুমৃত্যুর হার হ্রাস পেয়েছে।
এখন নির্বিঘেœ অর্থনৈতিক কর্মকাÐ চালিয়ে যাওয়ার মতো পরিবেশ নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। তবে সব রাজনৈতিক দলেরই দায় ও দায়িত্ব রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই দেশের মানুষ রাজনৈতিক নেতৃত্বের ইতিবাচক সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছে। এটা ঠিক যে গণতন্ত্রকে সুরক্ষিত ও সুসংহত করতে হলে বহুমতের রাজনৈতিক কর্মসূচি থাকতে হবে। কিন্তু রাজনৈতিক কর্মসূচি যেন কোনোভাবেই অর্থনীতি ও জননিরাপত্তার প্রতিপক্ষ হয়ে না দাঁড়ায়, সে বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে সচেতন থাকতে হবে।
রাজনীতি পরিচালিত হোক জনস্বার্থে, এর চেয়ে বড় প্রত্যাশা মানুষের নেই। রাজনৈতিক চিন্তা-চেতনায় নতুন করে পরিবর্তন আনতে হবে। গণমানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় বিঘœ ঘটায় এমন কর্মসূচি থেকে বেরিয়ে এসে জনসম্পৃক্তি বাড়ানোর দিকে রাজনৈতিক দলগুলোকে সচেষ্ট হতে হবে। আর তাতেই জনগণের মঙ্গল। মনে রাখা দরকার, আদর্শচ্যুত রাজনীতিও সমাজ বা রাষ্ট্রকে কিছু দেয় না। রাজনীতি পচনশীল হলে রাষ্ট্র উন্নয়নের বদলে উল্টো পথে হাঁটে। সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতি সুস্থ গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত। উন্নয়নের স্বার্থেই সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতি নির্মাণে ভ‚মিকা রাখতে হবে।