কাজিরবাজার ডেস্ক :
আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৩০তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে ৬ ডিসেম্বর। এই সম্মেলনে নেতৃত্ব নির্বাচন নিয়ে আলোচনার প্রধান বিষয়বস্তু হচ্ছে বয়সসীমা। ছাত্র সংগঠনটির গঠনতন্ত্রে বয়সের বিষয়টি ‘নির্দিষ্ট’ বিধায় এই ব্যাপারে খোঁজখবরও নিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রতিটি কমিটির মেয়াদ দুই বছর এবং নির্ধারিত সময়ে সম্মেলন ডাকার বিধান থাকলেও সেটি নিয়মিত না হওয়ায় বয়স বাড়ানো হয়। জয়-লেখক কমিটি দুই বছর ১১ মাস দায়িত্ব পালন করায় এবারের সম্মেলনেও বয়স বাড়ানো হলেও তা ২৯ বছরের বেশি হবে না বলে জানা গেছে। এদিকে বয়সের ব্যবধানে বাদ পড়া পদপ্রত্যাশীদের আওয়ামী লীগের বিভিন্ন উপ-কমিটিতে জায়গা দেওয়া হবে বলেও জানা যায়।
ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় কমিটির প্রাথমিক সদস্য হতে হলে তার ছাত্রত্ব থাকতে হবে এবং বয়স অনূর্ধ্ব ২৭ বছর। এই শর্তে যে কেউ ছাত্রলীগের সদস্য হতে পারে। এই সময়ের মধ্যে কারও ছাত্রজীবনে ব্যত্যয় দেখা দিলে কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ তার সদস্যপদ বাতিল বা মেয়াদ পর্যন্ত বহাল রাখতে পারে। যদিও গঠনতন্ত্রের সুনির্দিষ্ট এই নিয়মটি মানা হচ্ছে না। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ২ বছর পরপর ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। তবে অধিকাংশ সময়ই এই নিয়মেরও ব্যত্যয় ঘটেছে। ফলে বেশ কয়েকটি কমিটি ২ বছরের বেশি সময় অতিবাহিত করেছে। ফলে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বয়সের ব্যাপারেও ছাড় দিতে হয়েছে। সে ক্ষেত্রে কোনো কমিটির সময় এক বছর আবার কোনো কমিটির সময় ২ বছর মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
গঠনতন্ত্রের এই বিধান মেনে ছাত্রলীগের মনোনয়ন ফরমে কয়েকটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এসব নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে ৬ ডিসেম্বর ২০২২ পর্যন্ত বয়সসীমা গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, অবিবাহিত হতে হবে, যেকোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত হতে হবে। এ ছাড়া কোনো মিথ্যা তথ্য প্রদান করলে তার আবেদনপত্র বাতিল হবে। যদিও আবেদনপত্রে বয়সসীমা এবং ছাত্রত্বের ব্যাপারটিকে গুরুত্ব না দিয়ে অনেককেই আবেদনপত্র সংগ্রহ করতে দেখা গেছে।
এদিকে, নেতৃত্ব গঠনে ছাত্রত্ব এবং বয়সের ব্যাপারটি গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব সূত্রে জানা গেছে। বেশ ক’দিন আগে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রত্বের ব্যাপার নিয়ে খোঁজ নিয়েছেন। তিনি জানতে চান, কত বছরে একজন শিক্ষার্থী পড়াশোনা শেষ করতে পারে। তার জবাবে ছাত্রলীগের এই দুই নেতা আওয়ামী লীগ প্রধানকে জানান, ২৫ বা ২৬ বছরেই শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা শেষ করতে পারেন। সেক্ষেত্রে সংগঠনটির নেতৃত্ব গঠনে এ বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে। এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ২৭ বছর এবং গত সম্মেলনে সেটি বাড়িয়ে ২৯ বছর করার ব্যাপারে জানানো হয়। এ সময় তিনি এ ব্যাপারে মৌন সমর্থন জানান।
ছাত্রলীগের গত কয়েকটি কমিটির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত তিন সম্মেলনে ছাত্রলীগের বয়স গঠনতন্ত্রের বাইরে দুয়েক বছর করে বাড়ানো হয়েছে। ২০১১ সালে সংগঠনটির ২৭তম সম্মেলনে নেতৃত্বে আসেন সভাপতি হিসেবে বদিউজ্জামান সোহাগ এবং সাধারণ সম্পাদক হিসাবে সিদ্দিকী নাজমুল আলম। এর আগে ২০০৬ থেকে ২০১১ সালে সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন। ওই সময় বিএনপি এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় ছিল। সেই হিসাবে ৫ বছর পর অনুষ্ঠিত ২০১১ সালের সম্মেলনে বয়স ধরা হয় ২৯ বছর। এর ৪ বছর পর ২৮তম সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হন যথাক্রমে সাইফুর রহমান সোহাগ ও এসএম জাকির হোসেন। ওই সম্মেলনে বয়স নির্ধারণ করা হয় ২৯ বছর। এরপর সর্বশেষ সম্মেলনে নেতৃত্বে আসেন রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং গোলাম রাব্বানী। সম্মেলনে তাদের বয়সসীমা ধরা হয় ২৮ বছর। যদিও পরবর্তী সময়ে সেটি আরও ১ বছর বাড়িয়ে অনূর্ধ্ব ২৯ বছর করা হয়।
এদিকে, ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি ভারমুক্ত হয়ে পূর্ণাঙ্গ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হন যথাক্রমে আল নাহিয়ান খান জয় এবং লেখক ভট্টাচার্য। সংগঠনটির ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে তাদেরকে এই দায়িত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই হিসাবে তাদের মেয়াদ হয় প্রায় ২ বছর ১১ মাস। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তারা ১১ মাস বেশি দায়িত্ব পালন করেন। এই অনুযায়ীই এবারের সম্মেলনে বয়সের ব্যাপারে গ্রেস দেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে বিগত কমিটির ন্যায় ২৯ বছরই থাকবে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, আমরা আমাদের সাংগঠনিক প্রধান শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করি। তখন তিনি সংগঠনের ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়েছেন। তিনি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা শেষ হওয়ার ব্যাপারে খোঁজ নিয়েছেন। সাধারণত ২৫ বা ২৬ বছর বয়সে একজন শিক্ষার্থীর পড়াশোনা শেষ হয় বলে তাকে জানিয়েছি। এ ছাড়া তিনি সম্মেলনে বয়সের ব্যাপারে জানতে চান তখন আমরা ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বয়সসীমা এবং গত সম্মেলনের গ্রেস দেওয়ার বিষয়টি তাকে জানিয়েছি। এদিকে, বয়সের ব্যবধানে বাদ পড়া প্রার্থীদের ব্যাপাটিও বিবেচনায় রাখা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানিয়েছেন, ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বা কখনো দুই এক বছর বাড়িয়ে নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়। এর ফলে অনেক প্রার্থী বয়সের ব্যবধানে বাদ পড়েন। তাদেরকে আওয়ামী লীগ বা অন্য অঙ্গসংগঠনগুলোতে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। এবারও সেই বিষয়টি বিবেচনায় থাকবে। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক বলেন, ছাত্রলীগের সম্মেলন হওয়ার পরে তাদের ব্যাপারে বিবেচনা করা হবে।