জ্বালানি নিরাপত্তা

9

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু এবং তাকে কেন্দ্র করে রাশিয়ার জ্বালানি তেলের ওপর পাশ্চাত্যের নিষেধাজ্ঞার কারণে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের দাম হঠাৎ করেই দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে যায়। জ্বালানি তেলের বড় মজুদ না থাকা এবং পরিশোধনের সীমাবদ্ধতার কারণে বাংলাদেশকে শুরু থেকেই অনেক বেশি দাম দিয়ে জ্বালানি তেল আমদানি করতে হয়। এতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর অনেক চাপ সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে দুই-আড়াই গুণ দাম দিয়ে তেল এনে প্রথম দিকে আগের দামেই বাজারে বিক্রি করতে হয়েছে।
এতে লোকসানের পরিমাণ আকাশচুম্বী হয়ে পড়ে। এসব বিষয় মাথায় রেখে সরকার জ্বালানি তেলের আমদানি, পরিশোধন ও বিক্রির বিষয়গুলো নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে। এ ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতকে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টিও ভাবনা-চিন্তায় রয়েছে। তা ছাড়া বিশেষ পরিস্থিতিতে সরকারই যাতে জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়াতে বা কমাতে পারে সে জন্য বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২২-এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
জ্বালানি তেল এই মুহূর্তে বিশ্ব সবচেয়ে বড় সংকটে রয়েছে। অনেক দেশে যানবাহন চলাচলের জন্য তেল সরবরাহ করা যাচ্ছে না। বাংলাদেশ সেই তুলনায় অনেক ভালো অবস্থানে রয়েছে। তার পরও বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আমাদের আরো অনেক কিছুই করার বাকি আছে। গত সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে সেসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদসচিব জানান, বেসরকারি পর্যায়ে যেকোনো প্রতিষ্ঠান যাতে যেকোনো ধরনের জ্বালানি আমদানি করতে পারে তার জন্য কী কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সেসব বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে জ্বালানি বিভাগকে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রিসভা। প্রয়োজনে বেসরকারি খাতের জ্বালানি আমদানিতে সরকার সব ধরনের সহযোগিতা দেবে।
বর্তমানে বাংলাদেশে জ্বালানি তেল আমদানি ও বাজারজাত করার দায়িত্বে আছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। বেসরকারিভাবে জ্বালানি তেল আমদানি করতে হলে অনেক বিষয়ে নতুন করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বেসরকারিভাবে আনা তেল তারাই পরিশোধন করবে কি না, তারাই বাজারজাত করবে কি না, নাকি পরিশোধনের পর তেল বিপিসিকে দিয়ে দেওয়া হবে বাজারজাত করার জন্য, তেলের সঙ্গে আসা উপজাতগুলো প্রক্রিয়াজাত ও বাজারজাত করার ব্যাপারে কী কী পন্থা অবলম্বন করা হবে ইত্যাদি।
জ্বালানি নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের যুগোপযোগী নীতিমালা ও পরিকল্পনা থাকতেই হবে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ছাড়াও এই মুহূর্তে তাইওয়ান প্রশ্নে উত্তেজনা, উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যকার উত্তেজনা এবং সেগুলোর সঙ্গে বৃহৎ শক্তিগুলোর জড়িত থাকা নিয়েও এক ধরনের শঙ্কা রয়েছে। যেকোনো সময় বিশ্ববাজারে আবারও জ্বালানি তেলের সংকট হতে পারে। তাই বাংলাদেশকে সংকট মোকাবেলায় সর্বোচ্চ প্রস্তুতি রাখতেই হবে। সে ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতে আমদানি, পরিশোধন ও বাজারজাতকরণের দায়িত্ব দেওয়া হলে দেশ লাভবান হবে কি না তা বিবেচনা করতেই হবে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, একান্ত জরুরি পরিস্থিতি ছাড়া জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণের বিষয়টি বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন বা বিইআরসির হাতে থাকাটাই ভালো হবে। আমরা আশা করি দ্রুততম সময়ে বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।