কুলাউড়ায় হরিজন সম্প্রদায় হওয়ায় রেস্তোরাঁয় ঢুকতে বাধা

11

মৌলভীবাজার থেকে সংবাদদাতা :
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া এলাকায় হরিজন সম্প্রদায়ের কয়েকজন নাশতা করার জন্য রেস্তোরাঁয় প্রবেশ করতে বাঁধা দিয়েছে রেস্তোরাঁটির ব্যবস্থাপক ও কর্মচারীরা। খবর পেয়ে সেখানে আসেন উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। এ ধরনের কাজ আর কখনো না করতে রেস্তোরাঁমালিককে সতর্ক করেন তারা। গত বুধবার দুপুরে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া পৌর শহরের জংশন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এটিই প্রথম নয়, এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটে বলে অভিযোগ হরিজন সম্প্রদায়ের লোকজনের।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কুলাউড়া জংশন রেলস্টেশনের পাশে পরিনগর এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে হরিজন সম্প্রদায়ের ৪০-৫০টি পরিবার থাকে। এসব পরিবারের কিছু সদস্য শহরের বিভিন্ন স্থানে ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কারের কাজ করেন।
স্থানীয় বাসিন্দা হরিজন ঐক্য পরিষদের কুলাউড়া উপজেলা শাখার সভাপতি মৎলা বাসপর বলেন, বুধবার দুপুরের দিকে তাঁদের সম্প্রদায়ের ৩ জন রেলস্টেশন এলাকায় একটি রেস্তোরাঁয় খেতে যান। রেস্তোরাঁয় প্রবেশের সময় তাঁদের বাধা দেওয়া হয়। পরে তারা বিষয়টি মুঠোফোনে ইউএনওকে জানান। এরপর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মেহেদী হাসান সেখানে আসেন।
মৎলা বাসপর বলেন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করায় অনেকে তাঁদের ‘নিচু জাতের’ মনে করেন। এ কারণে আশপাশের লোকজন তাঁদের সঙ্গে মেলামেশা করতে চান না। এলাকায় কোনো রেস্তোরাঁয় ঢুকতে দেওয়া হয় না। এলাকার স্কুলপড়ুয়া ছেলেমেয়েরা টিফিনের সময় রেস্তোরাঁয় ঢুকে খাবার খায়। কিন্তু একই প্রতিষ্ঠানে পড়ুয়া তাঁদের সন্তানেরা এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত। খাবার কিনতে গেলে তাদের দূরে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। এরপর খাবার নিয়ে দেওয়া হয়।
এ পরিস্থিতিতে গত ২৩ অক্টোবর তাঁরা সরাসরি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে গিয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগে তাঁরা ‘অমানবিক’ এ আচরণের প্রতিকার চান। এ সময় ইউএনও এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন বলে বলে তাঁদের আশ্বস্ত করেন।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) মেহেদী হাসান বলেন, ‘রেস্তোরাঁয় ঢুকতে কাউকে বাধা দেওয়া বেআইনি কাজ। সংবিধানে রাষ্ট্রের সব মানুষের সম–অধিকারের কথা বলা আছে। রেস্তোরাঁয় অন্যরা বসে খেতে পারলে হরিজন সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে সমস্যা কী? রেস্তোরাঁমালিককে এ ধরনের কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে বলেছি।’
কুলাউড়া হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. লোকমান মিয়া বলেন, বিষয়টি নিয়ে রেস্তোরাঁমালিকদের কোনো সমস্যা নেই। হরিজন সম্প্রদায়ের লোকজন রেস্তোরাঁয় ঢুকতে গেলে ভেতরে বসা অন্য গ্রাহকেরা আপত্তি জানান। এ কারণে স্থানীয় রেস্তোরাঁমালিকেরা বাধ্য হয়ে এ কাজ করেন। তাঁরা বিষয়টি সমাধানে চেষ্টা করছেন বলে জানান তিনি।
ইউএনও মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমান খোন্দকার বৃহস্পতিবার সকালে মুঠোফোনে বলেন, রাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী, জাতি–ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সব মানুষ রেস্তোরাঁয় বসে খেতে পারবে। রেস্তোরাঁমালিকেরা আমার কাছে এসেছিলেন। তাঁদের স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছি, সংবিধান বিরোধী কোনো কাজ করা যাবে না। আর এ রকম কর্মকান্ড চালালে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।