বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার হার উদ্বেগজনক। সড়ক-মহাসড়কে এমন অনেক দুর্ঘটনা ঘটে, যেগুলো দুর্ঘটনা না বলে হত্যাকাণ্ড বলা যায়।
সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং সড়কে শৃঙ্খলা আনতে একটি কঠোর আইনের দাবি দীর্ঘদিনের। তিন বছর আগে ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে মাঠে নামলে বিষয়টি পুনরায় সামনে আসে।
ওই বছরের ২০ সেপ্টেম্বর সরকার শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে কঠোর শাস্তির বিধানসংবলিত একটি আইন সংসদে পাস করে। সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সড়ক পরিবহন আইনটি পাস হয়। ৮ অক্টোবর প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। আর ২০১৯ সালের ১ নভেম্বর থেকে আইনটি কার্যকরের ঘোষণা দেয় সরকার। কিন্তু আইনটি এখনো পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। আইন পাসের পর চার বছরেও বিধিমালা চূড়ান্ত না হওয়ায় এর শতভাগ প্রয়োগ আটকে আছে। আইনের বিধিমালা না থাকায় আইনটি পুরোপুরি কার্যকরও হচ্ছে না।
সড়ক পরিবহন আইনে বলা আছে, কোনো মোটরযানের কারণে দুর্ঘটনায় কেউ আঘাতপ্রাপ্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে কিংবা মারা গেলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা তাঁর পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ বা চিকিৎসা খরচ দিতে হবে। সড়ক পরিবহন আইনের ৫৩ ধারায় বলা হচ্ছে, ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য আর্থিক সহায়তা তহবিল নামে একটি তহবিল গঠন করা হবে। এই তহবিল পরিচালনা করতে প্রতিটি মোটরযানের বিপরীতে মালিকদের কাছ থেকে বার্ষিক বা এককালীন চাঁদা আদায় করা হবে। মোটরযান মালিক বা প্রতিষ্ঠান তহবিলে এই চাঁদা দিতে বাধ্য। পরের ধারায় বলা হচ্ছে, ক্ষতিপূরণের বিষয়টি দেখতে একটি ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করা হবে। দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য ট্রাস্টি বোর্ড এখনো গঠন করা হয়নি। ট্রাস্টি বোর্ডের সভা, ব্যবস্থাপনা ও আনুষঙ্গিক অন্যান্য বিষয় বিধি দ্বারা নির্ধারিত হবে বলে ৫৮ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু সড়ক পরিবহন আইনের বিধিমালা প্রণয়ন না হওয়ায় ট্রাস্টি বোর্ড গঠন ও পরিচালনার জবাবদিহি তৈরি হয়নি।
বিধিমালাটা আলোর মুখ না দেখার কারণে আইনের পূর্ণাঙ্গ প্রয়োগ করা সম্ভব হচ্ছে না। অথচ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অত্যন্ত আধুনিক একটা আইন তৈরি করা হয়েছে। এই আইন যদি শতভাগ প্রয়োগ হয় তাহলে আমাদের সড়ক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলার ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন আসবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইনের সঠিক ব্যবহার থাকলে সড়কে শৃঙ্খলা থাকবে। এতে দুর্ঘটনাও কমবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বিধিমালা প্রকাশের পর আইনের পূর্ণাঙ্গ প্রয়োগ সম্ভব হবে। আইনের শতভাগ প্রয়োগ সড়ক ব্যবস্থাপনা ও শৃঙ্খলায় আমূল পরিবর্তন আনবে বলে আশাবাদী তাঁরা। তবে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ও নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে।