মৌলভীবাজার থেকে সংবাদদাতা :
মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও স্থানীয় সংসদ সদস্য নেছার আহমদ এমপিসহ দলীয় নেতাদের ফুলের নৌকা উপহার দেয়া মৌলভীবাজার পৌরসভার ৪, ৫ ও ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহানারা বেগম জেলা মহিলাদলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত। এনিয়ে রাজপথে আন্দোলন সংগ্রামে থাকা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছ, গত ১ নভেম্বর ডা. দিলশাদ পারভীনকে সভাপতি ও জাহানারা বেগমকে সাধারণ সম্পাদক করে জাতীয়তাবাদী মহিলাদল মৌলভীবাজার জেলা কমিটি ঘোষনা করা হয়। কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আফরোজা আব্বাস ও সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমদের স্বাক্ষরে এই কমিটি অনুমোদন দেন। এতে দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের জেলা পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে বিতর্কিত নারীকে মনোনীত করায় বিস্ময় প্রকাশ করেন।
নেতাকর্মীদের অভিযোগ, সামনে জাতীয় নির্বাচন। বিভাগীয় শহরগুলোতে গণসমাবেশ চলছে। নানা প্রতিকূলতার মাঝে লাখ লাখ মানুষ এসব সমাবেশে যোগ দিচ্ছে। বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনা, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে সামনে আরো কঠোর কর্মসূচী নিয়ে আমরা মাঠে নামবো। এ সময় আওয়ামী লীগ ঘেষা একজন নারীকে দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন করা সমচীন হয়নি। তা না হলে ভবিষ্যতে তৃণমূল কর্মীদের কাছে বিএনপির পদ পাওয়ার জন্য আওয়ামীলীগের লেজুড়বৃত্তি করার ভুল বার্তা পৌছাঁবে।
তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাহানারা বেগম বিএনপি নেত্রীর পরিচয়ে গেল নির্বাচনে মৌলভীবাজার পৌরসভার সংরক্ষিত ৪, ৫ ও ৬নং ওয়ার্ড মহিলা কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। এরপর থেকে তিনি আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচীতে অংশ নিতে দেখা গেছে। শুধু তাই নয়, কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি ফুল দিয়ে নৌকার প্রতিকৃতি বানিয়ে খোদ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও স্থানীয় সংসদ সদস্য নেছার আহমদ, আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. কামাল হোসেনকে উপহার দেন। সর্বশেষ ঐতিহাসিক ৭ মার্চ জেলা আওয়ামী লীগের জয়বাংলা বাই সাইকেল শোভাযাত্রার কর্মসূচীতে স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমানের সাথে অংশ নেন।
এদিকে জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সাথে আওয়ামী লীগের দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচীতে অংশ নেয়া ও তাদের নৌকা উপহার দেয়ার বিভিন্ন ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিএনপি নেতাকর্মীদের মাঝে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
মহিলাদলের সম্পাদক জাহানারা বেগম আওয়ামী লীগ নেতাদের নৌকা উপহার দেয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘কাউন্সিলর নির্বাচন করতে তিনি রাজনৈতিক কৌশল গ্রহণে এই কাজটি করেছেন এবং সফল হয়েছেন। এ কারণে অনেকটা আবেগে ‘কৃতজ্ঞতাবশত’ আওয়ামী সংসদ সদস্যসহ অন্য নেতাদের বাসায় বাসায় গিয়ে ফুলের নৌকা উপহার দিয়েছি। জাহানারা বেগম আরও বলেন, পরপর তিনবার পৌরসভায় কাউন্সিলর নির্বাচন করে পরাজিত হয়েছিলাম। এবার রাজনৈতিক সুবিধা নিতে আওয়ামী লীগের নেতাদের হাতে রাখার কৌশল গ্রহন করেছি।’
মৌলভীবাজার বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মিছবাহুর রহমান বলেন, বিএনপির মতো একটি বৃহত্তম দলে এমন ঘটনায় আমরা বিব্রত। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা মহিলা দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের দৃষ্টিগোচরে আনবো।
এ বিষয়ে মুঠোফোনে (০১৭১৩০৭৬৭৬১) যোগাযোগ করা হলে জাতীয়তাবাদী মহিলাদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আফরোজা আব্বাসকে একাধিকবার মুঠোফোনে কল দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বিএনপির সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়কারী সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আক্তার বলেন,‘কেন্দ্রীয় মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আপা এ বিষয়ে ভালো বলতে পারতেন। কিন্তু তিনি এখন জেলে। আমি এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখবো।
মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান এই কমিটি নিয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলে জানান।
মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি এম নাসের রহমান বলেন কেন্দ্রীয় মহিলা দলের সভাপতি সম্পাদকের অনুরোধে আমার সার্বিক সহযোগিতায় গত ৮ অক্টোবর জেলা মহিলা দলের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে জাহানারা বেগম নামে কেউ অংশ নেয়নি। তার নাম কিভাবে আসলো, কার প্ররোচণায় আসলো- আমার জানা নেই। যে মহিলা আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে পৌর কাউন্সিলর হয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের বাসায় গিয়ে ফুলের নৌকা দিয়ে আসছে, উপজেলা চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা কামাল আহমেদকেও ফুলের নৌকা দিয়ে আসছে। তার এই ছবি দেখে আমি নিজেও তাজ্জব। দুদিন আগে আমি এই ছবিগুলো পেয়েছি। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও মহাসচিবকে এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দেবো’ বলে জানান তিনি।
প্রসঙ্গত গত ৮ অক্টোবর অনুস্টিত সম্মেলনে মহিলা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি -সম্পাদক স্বাক্ষরিত পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি অনুমোদন দেন। এতে ডাক্তার দিলশাদ পারভীন কে সভাপতি শিল্পী আক্তার কে সম্পাদক মনোনীত করা হয়েছিল। ওই কমিটির সভাপতিকে বহাল রেখেই গত ১ নভেম্বর সম্মেলনে ঘোষিত কমিটির সম্পাদক শিল্পী বেগমকে বাদ দিয়ে জাহানারা বেগমের নাম নতুন করে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।